দুপুরবেলায় লম্বা ঘুম দিচ্ছেন? জানেন কি, এই আরামই হতে পারে এক ব্যারামের ইঙ্গিত? তাও যে কোনও রোগ নয়। স্মৃতিভ্রংশের উপসর্গ হতে পারে দুপুরের লম্বা ঘুম, এমন কথাই জানাচ্ছে সমীক্ষা। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
দুপুরের ভাতঘুম দেওয়াকে বাঙালির প্রায় জাতিগত অধিকার বলা চলে। কেবল বাঙালি কেন, দেশে বিদেশে অনেক মানুষই দুপুরে খানিকটা ঘুমিয়ে নিতে ভালইবাসেন। তার জন্য কুঁড়ে বা অলস বলে মাঝে মাঝে একটু বদনাম শুনতে হতে পারে অবশ্য, কিন্তু তার চেয়ে গুরুতর কোনও ব্যাপারের কথা আগে শোনা যায়নি। কিন্তু এবার লম্বা দিবানিদ্রার অভ্যাসের প্রতি রীতিমতো ভয় ধরিয়ে দিলেন গবেষকেরা। জানালেন, এই অভ্যাসটিকে দেখে যতই নিরীহ বলে মনে হোক, আদতে তা-ই নাকি হতে পারে স্মৃতিভ্রংশজনিত রোগ তথা অ্যালঝাইমার’স ডিজিজের পূর্ব লক্ষণ।
আরও শুনুন: অফিসে এক জায়গায় বসে একটানা কাজ! ঘাড়-পিঠের ব্যথা এড়াতে কী করবেন?
সম্প্রতি একটি সমীক্ষা প্রকাশ করেছেন সানফ্রান্সিস্কোর ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা। তাঁরা জানালেন, কেউ যদি অপর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমোন, তবে তা রীতিমতো চিন্তার কারণ হয়ে উঠতে পারে। কমপক্ষে হাজারখানেক বয়স্ক মানুষকে নিয়ে এই সমীক্ষাটি করা হয়েছিল। তাঁদের সকলেরই গড় বয়স ৮১। প্রত্যেক বছর ঘড়ির মতো একটি ট্র্যাকিং ডিভাইস পরিয়ে দেওয়া হত তাঁদের, যা ১৪ দিন ধরে তাঁদের চলাচলের হিসেবনিকেশ করবে। সকাল ৯টা থেকে ৭টার মধ্যে কখনও যদি দেখা যেত, এঁরা অনেকখানি সময় ধরে স্থির হয়ে আছেন, তাহলে সেই সময়টাকে ঘুম বলেই ধরে নেওয়া হত। পাশাপাশি, প্রত্যেক বছর তাঁদের স্মৃতিশক্তিরও পরীক্ষা নেওয়া হত।
দেখা গিয়েছে, এই সমীক্ষার শুরুতে ওই ব্যক্তিদের ৭৬ শতাংশের কোনওরকম স্মৃতিভ্রংশের সমস্যা ছিল না। কিন্তু বছর বছর পরীক্ষার পর দেখা যায়, যাঁদের দিবানিদ্রার পরিমাণ বাড়ছে, তাঁদের মনে রাখার পরিমাণ কমে যাচ্ছে ব্যস্তানুপাতিক হারে। এমনকি এও দেখা গিয়েছে, পরবর্তীকালে যাঁদের অ্যালঝাইমার’স ডিজিজ ধরা পড়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে এই দিবানিদ্রার পরিমাণ তিনগুণ পর্যন্ত বেড়ে গিয়েছে।
আরও শুনুন: ভিডিও কলেই চলছে মিটিং, ঠিক কী করলে ফুটে উঠবে আপনার ব্যক্তিত্ব? রইল টিপস
গবেষকদের মতে, যাঁরা দিনের আলো থাকাকালীন এক ঘণ্টার বেশি ঘুমোন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কম-ঘুমনো লোকেদের তুলনায় অন্তত ৪০ শতাংশ বেশি। পাশাপাশি এ কথাও বলেছেন তাঁরা, কেবল দিনের বেলায় ঘুমনোর অভ্যাসই নয়, ডিমেনশিয়ার রোগীদের ক্ষেত্রে ইনসমনিয়া বা ঘুম না আসা, রাতে ঠিকমতো ঘুম না হওয়া, এমনকি অস্বাভাবিক সময়ে ঘুমিয়ে পড়ার মতো উপসর্গগুলিও দেখা যায়। স্মৃতিভ্রংশের দরুন তাঁদের মস্তিষ্কের মধ্যে যে বদলগুলি ঘটে যাচ্ছে, তার জেরেই গোটা দিন জুড়ে ঘুম ঘুম ভাব থাকতে পারে তাঁদের।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, নিশ্চিন্তে ঘুম দেওয়ার আগে ঘুম নিয়েও খানিক চিন্তাভাবনা করে নেওয়া ভাল। তাতে আখেরে লাভ হবে নিজেরই।