অতিমারির আতঙ্ক কেটেছে। পালটেছে জীবনের ধরন। আগের থেকেও বেড়েছে স্বাস্থ্য সচেতনতা। সব মিলিয়ে নতুন করে সবকিছু সাজিয়েছে গোটা বিশ্ব। কিন্তু কোভিডের আতঙ্ক গেলেও রয়ে গেছে দুর্বলতা। কী জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
অতিমারির অন্ধকার সময় পেরিয়েছে। নতুন করে সবকিছু সাজিয়েছে গোটা বিশ্ব। বদলেছে যাপনের নিয়ম, বেড়েছে স্বাস্থ্য সচেতনতা, আরও কত কি! নতুন এই ব্যবস্থার নাম দেওয়া হয়েছে, ‘নিউ নরমাল’। তা ঠিক কতদিন এই নরমাল নিউ থাকবে তা জানা নেই। কিন্তু মোটের উপর নতুন ব্যবস্থাই সহজাত হয়ে উঠছে অনেকের কাছে। যেহেতু ‘নতুন’ তাই ধরে নেওয়া যেতেই পারে এখানে সবকিছু সঠিক, সুন্দর হবে। হয়তো তাই। তবে একটা জিনিস উপরি পাওনা হিসেবে রয়ে গিয়েছে, দুর্বলতা।
:আরও শুনুন:
মৃত্যু কোভিডে, হয়েছিল সৎকার, ২ বছর পর সেই যুবক বাড়িতে ফিরতে তাজ্জব সকলেই
হিসাব বলছে, যারাই কভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাঁরা সুস্থ হলেও আর স্বাভাবিক হননি। অন্তত শারীরিক দিক দিয়ে। কেউ কেউ মানসিক ভাবেও রীতিমতো বিপর্যস্ত। এঁদের সকলেরই গড় ধারণা, সবকিছুর জন্য দায়ী কোভিড। পরপর দুবার কোভিড আক্রান্ত হয়েছে যাঁরা, তাঁদের অবস্থা আরও শোচনীয়। এমন কোনও রোগ নেই যা শরীরে বাসা বাঁধেনি। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের মত, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই একেবারে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। একই দাবি, কোভিড ভ্যাকসিন সম্পর্কে শোনা গিয়েছিল। গত বছরের মাঝামাঝি একটা সময় যখন শরীরচর্চা করতে করতে হৃদরোগে আক্রান্ত হলেন জনপ্রিয় তারকা, সেই ঘটনার পর থেকে এই তত্ত্ব আরও বেশি করে সামনে আসতে থাকে। সম্প্রতি সংবাদ মাধ্যমের সমীক্ষায় সামনে এসেছে এমন কিছু কোভিড আক্রান্তের কথা, যারা সব কিছু ছেড়ে বাড়িতে বসে যেতে বাধ্য হয়েছে, স্রেফ শারীরিক অসুস্থতার কারণে। অথচ এঁদের জীবন যাপন যে ভীষণ উচ্ছৃঙ্খল তা নয়। যাবতীয় অসুস্থতার জন্য এঁরা কোভিডকেই দায়ী করছেন সার্বিক ভাবে।
:আরও শুনুন:
কোভিডের চেয়েও ভয়ানক! ২০২৫-এ সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা, কী বলছেন চিকিৎসকরা?
তবে এমনটা যে নতুন কিছু তা নয়। কোভিড থেকে সেরে উঠে অনেক রোগীই জানিয়েছিলেন, সর্দি-কাশি, জ্বর, গলা ব্যথা, হাতে-পায়ে-পিঠে-কোমরে যন্ত্রণা, মাথা ব্যথা- এসব পিছু ছাড়েনি তাঁদের। বরং কোভিডের পর রোগের মাত্রা বেড়েছিল। সেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের মত ছিল, অ্যান্টিবায়োটিকসের ওভারডোজই এই ধরনের সমস্যার জন্য দায়ী। অ্যান্টিবায়োটিক আমাদের শরীরে থাকা ব্যাকটিরিয়াদের মেরে ফেলে। তার মধ্যে খারাপ ব্যাকটিরিয়া যেমন থাকে, তেমনই থাকে ভাল ব্যাকটিরিয়াও। এই ভাল ব্যাকটিরিয়ারা আমাদের শরীরকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে। ফলত সেগুলি নষ্ট হওয়ায় রোগ বাসা বাঁধছে। এতদিন পরও যারা সমস্যা থেকে মুক্ত হতে পারছেন না, তাঁদের হয়তো জীবনভর এই রোগের জ্বালা বয়ে বেড়াতে হবে, এমনটাই দাবি বিশেষজ্ঞদের। এক্ষেত্রে নতুন একটি শব্দও ব্যবহার করা হচ্ছে। শুধু কোভিড নয়, বলা হচ্ছে এঁরা ‘লং কোভিডে’ আক্রান্ত। অর্থাৎ সে সমস্যা একদিনে সমাধান হওয়ার নয়। শরীর থাকলে রোগ হবে এমনটা স্বাভাবিক। কিন্তু তা কোনওভাবেই প্রতিহত না করা গেলে মুশকিল। যে ব্যবস্থা শরীরে রোগ প্রতিরোধের জন্য দায়ী, সেটাকেই যদি ধসে যেতে হয়, তাহলে সমস্যা মেটা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে হয়েছে ঠিক তাই। ২০২০-২১ সালে যে অতিমারি গোটা বিশ্বের ত্রাস ছিল, তা আর নেই এমনটা বলাই যায়। সেই হিসাবে একথাও বলা যেতে পারে যে, কোভিড নিয়ে আর আতঙ্ক নেই কারও মনে। কিন্তু তাতে কি! কোভিড গিয়েছে, আতঙ্ক গিয়েছে, দুর্বলতা এসেছে।