বাজারজাত মশলায় ভেজাল মিশছে। এই নিয়ে বারবার সতর্ক করেন বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি তালিকায় জুড়েছে নুন আর চিনি। তাতেও নাকি মিলছে মাইক্রোপ্লাস্টিকের খোঁজ। প্রশ্ন হচ্ছে আসল-নকল চিনবেন কীভাবে? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
রান্নায় মশলা না হলে চলে নাকি! বিশেষ করে ভারতীয় রান্না মশলা ছাড়া কল্পনা করাই কঠিন। এদিকে মশলাতে মিশছে ভেজাল। অজান্তে বিষ ঢুকছে শরীরে। বাঁচতে হলে মশলা ছাড়া রান্নার পরামর্শ দিচ্ছেন কেউ কেউ। অন্তত গুঁড়ো মশলাটুকু এড়ালেই বিপদ কমবে, মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু এমনটা করা যে সহজ নয় তা বলাই বাহুল্য। অফিস-কাজ সামলে মশলা বাটার ঝামেলা পোহাবে কে? অগত্যা ভেজাল গুঁড়ো মশলাই ভরসা। তাহলে কি কোনও উপায় নেই?
অবশ্যই আছে। চাইলেই বাড়িতে চিনে নেওয়া যায় ভেজাল মশলা। কোনটা আসল কোনটা নকল, বোঝা যায় সহজেই। শুধু মানতে হবে কয়েকটা নিয়ম। প্রথমেই হকুদ গুড়োর কথা জানা যাক। শোনা যাচ্ছে, এই সঙ্গে কাঠের গুঁড়ো মিশিয়ে বিক্রি করছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। বাইরে থেকে দেখে চেনার উপায় নেই। তার জন্য সহজ একটা পরীক্ষা করে দেখতে হবে। প্রয়োজন এক গ্লাস গরম জল, আর এক চামচ হলুদ গুঁড়ো। গরম জলে হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে রেখে দিতে হবে অন্তত ২০ মিনিট। কোনওভাবেই চামচ দিয়ে মেশানো যাবে না। যদি দেখা যায় ২০ মিনিট পর হলুদ গুঁড়ো থিতিয়ে গিয়েছে, আর জল সম্পূর্ণ স্বচ্ছ হয়ে আছে, বুঝে নিতে হবে এই হলুদে ভেজাল নেই। কিন্তু যদি জলের রং ঘোলাটে হয়ে যায়, তাহলে এর মধ্যে নানা রকম ভেজাল থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। একইভাবে লঙ্কাগুঁড়োয় ভেজাল আছে কি না, পরীক্ষা করে জেনে নেওয়া সম্ভব। এক্ষেত্রেও জলের মধ্যে গুঁড়ো মিশিয়েই দেখতে হবে রং কতটা বদলাচ্ছে। যদি গাঢ় লাল রং দেখা যায়, তাহলে এই গুঁড়োয় ভেজাল রং থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। একইভাবে মশলায় চকের গুঁড়ো মেশানো থাকলেও, সেটা থিতিয়ে যাবে গ্লাসে। জিরে গুঁড়োয় ভেজাল বুঝতে হলে জলের প্রয়োজন নেই। হাতের তালুতে খানিকটা নিয়ে ভালো করে দুই হাতে ঘষতে হবে। যদি হাতের তালু কালো হয়ে যায়, তাহলে বুঝতে হবে ভেজাল রয়েছে। সাধারণত বাজারজাত জিরে গুঁড়োয় চারকোল মিশিয়ে দেন অসাধ্য ব্যবসায়ীরা। এই রং সেই চারকোলের জন্যই। গোলমরিচের সঙ্গে অনেক সময় প্রায় একই দেখতে পেঁপের বীজ মিশিয়ে দেওয়া হয়। খালি চোখে তফাৎ বোঝা মুশকিল। কিন্তু কিছুটা গোলমরিচ যদি অ্যালকোহলে ফেলা হয়, তাহলে এর মধ্যে থাকা পেঁপে বীজ তলায় থিতিয়ে যাবে। আর গোলমরিচ ভেসে উঠবে। সহজেই বোঝা যাবে আসল-নকল।
এবার আসা যাক, নুন-চিনির প্রসঙ্গে। রান্নায় এই দুই জিনিস ছাড়া চলে না। স্বাদের সঠিক ব্যালেন্স করতে নুন-চিনির পরিমাণ বোঝা একান্ত প্রয়োজন। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় নুন আর চিনির মধ্যে মাইক্রোপ্লাস্টিকের খোঁজ মিলেছিল। সে জিনিস বাড়িতে পরীক্ষা করে চেনা সম্ভব নয়। তবে নুন বা চিনিতে অনেক সময় চকের গুঁড়ো মেশানো হয়। খালি চোখে ধরা না পড়লেও, সহজ পরীক্ষা করে তা চেনা সম্ভব। প্রয়োজন দুই গ্লাস জল। একটিতে নুন অন্যটিতে একচামচ করে চিনি মেশাতে হবে। ভালো করে মেশানোর পর যদি জলের রং ঘোলাটে না হয়, তাহলে এতে ভেজাল নেই। কিন্তু কোনওভাবে যদি চকের গুঁড়ো থাকে তাহলে রং ঘোলাটে হতে বাধ্য। তবে শুধু মশলা নয়, ভেজাল মিশছে দুধ, ঘি, মাখন, ডাল, এমনকি প্যাকেটজাত মটরশুঁটিতেও। সেসব বোঝার জন্য বিশেষ পরীক্ষা রয়েছে। যেমন দুধের ভেজাল বুঝতে হলে, তার সঙ্গে জল মিশিয়ে ভালোকরে ঝাঁকিয়ে দেখতে হবে। যদি অতিরিক্ত ফেনা দেখা যায়, তাহলে দুধে সাবান গুঁড়ো থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। মাখন বা ঘি-এর মধ্যে ভেজাল থাকলে তা বোঝা যাবে তার সঙ্গে অল্প চিনি মিশিয়ে। পদ্ধতি প্রায় এক, ভালো করে ঝাঁকিয়ে নিতে হবে। যদি রং বদলে লালচে হয়ে যায়, তাহলে বুঝতে হবে ভেজাল রয়েছে। সুতরাং একটু চোখ কান খোলা রাখলেই ভেজাল চেনা সম্ভব। সাবধান হলে বিপদ এড়ানো খুব একটা কঠিন হবে না। সময় বাঁচাতে গুঁড়ো মশলা ব্যবহার করা যেতেই পারে, বুঝে নিতে হবে তার মধ্যে ভেজাল রয়েছে কি না।