রূপে, গন্ধে মুগ্ধ করা শিউলি ফুল কিন্তু আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে অন্যতম ঔষধি। সর্দি-কাশি-জ্বর তো আছেই। এছাড়াও শিউলির অ্যান্ডি অক্সিডেন্ট গুণ হাজারও রোগ সারাতে কাজে আসে। শিউলির ফুল, পাতা ও বীজকে নানাভাবে কাজে লাগানো হয়। কিন্তু কোন রোগে কীভাবে উপকারি হয়ে ওঠে শিউলি? আসুন শুনে নিই।
শরৎকাল মানে যেমন বাঙালির আনন্দ উৎসব দুর্গাপুজো, তেমনই শিউলি ফুলও। দুর্গাপুজোর আবহাওয়া তৈরি করে যে দুটি ফুল, তারা হল শিউলি ও কাশ ফুল। এর মধ্যে শিউলের রূপে ও গন্ধে যেমন বিভোর হই আমরা, তেমনই এই ফুলের কিন্তু হাজারও ঔষধি গুণ রয়েছে। এই কারণেই আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে শিউলির উল্লেখ মেলে। এই ফুলের আরেক নাম হল পারিজাত। যা স্বর্গের ফুল বলেই পরিচিত। তাই ভগবৎ গীতা ও হরি-বংশ পুরাণে পারিজাতের উল্লেখ পাই। হয়তো এই উল্লেখের পেছনে বিভিন্ন রোগে শিউলির ঔষধি গুণও একটা কারণ। শিউলির পাতা, ফুল বীজ… তিনই পরম্পরাগত চিকিৎসার ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হয়। কোন কোন রোগে ঠিক কীভাবে শিউলি কাজে আসে?
আরও শুনুন:
পুজোয় বেলাগাম খাওয়াদাওয়া, ছুটি শেষে শরীরকে ডিটক্স করবেন কোন উপায়ে?
শিউলি কাশির উপশম করে। শিউলির নির্যাস ব্রংকিয়াল পেশীগুলিকে শিথিল করে দেয়। এর ফলে কাশি এবং ব্রংকাইটিসের উপসর্গগুলি দূর হয়। কাশি, সর্দি থেকে আরাম পেতে আয়ুর্বেদে শিউলির পাতা ও ফুল দিয়ে চা তৈরি করে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ঐতিহ্যগত চিকিৎসাতে শিউলি একটি পরিচিত অ্যান্টি-পাইরেটিকও বটে। কেন? যেহেতু শিউলি জ্বর কমাতে পারে। এক্ষেত্রেও শিউলির পাতা গুড়ো করে চা পান করার কথা বলেছেন চিকিৎসকরা। অন্যদিকে ম্যালেরিয়ার চিকিৎসাতেও কাজে আসে শিউলি। শিউলি গাছের পাতা পেস্ট করে খেতে দেওয়া হয় ম্যালেরিয়ার রোগীকে। যার পর দ্রুত জ্বর কমে যায়। এমনকী রক্তে প্লেটলেটের মাত্রাও বৃদ্ধি পায় দ্রুত। ডায়াবেটিস বা মধূমেহ রোগেও শিউলি একটি দুর্দান্ত ঔষধি। শিউলির পাতার রস খেলে রক্তে শর্করারা মাত্রা কমে যায়। অন্ত্রের সংক্রমণের চিকিৎসাতেও শিউলি একটি ভাল ওষুধ। এই সংক্রমণের অন্যতম কারণ হল পরজীবী। শিউলির এই ক্ষতিকারক পরজীবীকে নষ্ট করে দেয়। এই ধরনের রোগ ছাড়াও আমাদের আরও কিছু সমস্যার সমাধানেও সক্ষম শিউলি।
আরও শুনুন:
দশ প্রহরণ ধারণ করেন দেবী দুর্গা, কী উদ্দেশ্য বহন করে এই দশ অস্ত্র
যেমন, উদ্বেগ কমাতে সিদ্ধহস্ত শিউলি। এই কারণে অ্যারোমাথেরাপিতে শিউলির ব্যবহার বহুল প্রচলিত । শিউলি পাতার নির্যাস মনের উদ্বেগ কমাতে ও মনকে শান্ত করতে বিশেষ ভাবে সাহায্য করে। একটি গবেষণা বলছে, শিউলির নির্যাস মস্তিষ্কে সেরোটোনিন-এর মাত্রা বৃদ্ধি করে। এই সেরোটোনিনই কিন্তু ঘুমোতে সাহায্য করে আমাদের।
আবার ত্বকের চিকিৎসাতেও শিউলির জুড়ি মেলা ভার। মনে রাখতে হবে, শিউলি ফুলের নির্যাস আসলে একটি চমৎকার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। ফলে তা ত্বকে লাগালে ত্বকের গাঢ় দাগ, কালো ছোপ কমে যায়। পরম্পরাগত চিকিৎসায় ভাঙা হাড় জোড়া দিতেও শিউলির ব্যবহার ছিল এককালে। অন্যদিকে চুল পড়া বন্ধ করার আয়ুর্বেদিক প্রতিকারও কিন্তু শিউলি। উকুন এবং খুশকি দূর করতে শিউলির বীজের গুড়োর চা খেতে বলে থাকেন বৈদ্যরা। আর শিউলি ফুল চুলের পুষ্টি যোগায়। চুলের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধির জন্যও শিউলি ফুলের নির্যাস ব্যবহার করা যেতে পারে।
আরও শুনুন:
রামায়ণ ছাড়া মহাভারতেও ছিলেন দেবী দুর্গা, কারা পূজা করেছিলেন তাঁর?
অর্থাৎ কিনা, যে শিউলি মা দুর্গার আগমনী বার্তা দেয়, যার রূপে মুগ্ধ হই আমরা, গন্ধে বিভোর হই, সে আসলে সাক্ষাৎ ঔষধিই। হয়তো এই কারণেই… এককালে অধিকাংশ বাঙালি বাড়ির উঠোনে থাকত অন্তত একটি শিউলি গাছ। শরৎ আসলেই উঠোন ফুলে ফুলে সাজিতে দিত সে।