বাবা-মা এবং এক সন্তান। আপাত সুখের এক সংসার। কোনও ঝুটঝামেলা নেই। কিন্তু আপনি দেখছেন আপনার স্ত্রী আজকাল নানা ছোটখাটো কারণে মেজাজ হারাচ্ছেন, খিটখিটে হয়ে পড়ছেন। চিকিৎসকেরা বলছেন, নারীচরিত্রে এই ধরনের বদলের কারণ হতে পারে কন্ট্রাসেপ্টিভ পিল বা গর্ভনিরোধক বড়ি। কীভাবে? আসুন শুনে নিই।
ভেবে দেখেছেন, আপনার জীবনসঙ্গিনী হঠাৎ খিটখিটে আর অধৈর্য হয়ে পড়ছেন কেন? পাশাপাশি, তিনি আজকাল চোখেও কম দেখছেন। প্রায়শই অসুবিধা হচ্ছে শ্বাস নেওয়ায়। বয়সের কারণে এমনটা হচ্ছে ভেবেই উড়িয়ে দিয়েছেন আপনি। সত্যিই কি তাই? নাকি এসব হচ্ছে কন্ট্রাসেপ্টিভ পিলের কারণে?
আরও শুনুন: সঙ্গমে রোজ কন্ডোম ব্যবহার করেন! হতে পারে নানা সমস্যাও
সাধারণ জন্ম নিয়ন্ত্রণ বা গর্ভ নিরোধের পদ্ধতিগুলির মধ্যে COCP বা কম্বিনেশন ওরাল পিল বিশ্বজুড়ে ব্যপকভাবে গৃহীত এবং বেশিরভাগ মানুষই এটাতে ভরসা করে থাকেন। কিন্তু সব চকচক জিনিসই তীও সোনা না হওয়ার মতো এই কম্বো পিল গুলোও বেশিরভাগ মানুষ ব্যবহার করে বলেই যে তা সবদিক থেকে সুরক্ষিত এমনটা বলা যাবে না। এই ধরনের ওষুধে মূলত বিভিন্ন মাত্রায় ইস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টিন এই দুই হরমোন থাকে। যা বড়ি বা পিলের মাধ্যমে শরীরে গেলে, গর্ভ নিরোধ হয় বটে তবে এতে নারী শরীরে হরমোনের যে স্বাভাবিক ভারসাম্য তা বিঘ্নিত হয়। তাই এই ধরনের গর্ভ নিরোধকে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে, অনিয়মিত পিরিয়েডস, ওজন বেড়ে যাওয়া, স্তন অস্বাভাবিক ফুলে যাওয়া, রক্ত জমাট বাঁধা, শ্বাসকষ্ট, এমনকি হার্ট অ্যাটাক পর্যন্ত হতে পারে। আর এই গর্ভ নিরোধক বড়ি STD বা যৌনরোগ ছড়িয়ে পড়া থেকেও আটকাতে পারে না।
সেক্ষেত্রে গর্ভ নিরোধের আরও কিছু উপায় আছে, যেগুলি হরমোন ছাড়াই কাজ করে। এর মধ্যে প্রথমেই বলতে হবে কন্ডোমের কথা। পুরুষাঙ্গে ব্যবহারের জন্য কন্ডোমের বিষয়ে আমরা প্রায় সকলেই জানি কিন্তু নারীর যৌনাঙ্গে ব্যবহারের জন্যেও আছে কন্ডোম। এটিকে বলা হয় ডায়াফ্রাম। পাতলা নরম টুপির মতো দেখতে এই ডায়াফ্রাম সঙ্গমের আগে মহিলাদের যৌনাঙ্গে প্রবেশ করিয়ে দিতে হয় এবং সঙ্গমের কমপক্ষে ৬ ঘন্টা পর এটি বের করতে হয়।
আরও শুনুন: সাবধানতাতেই মোকাবিলা ডেঙ্গুর, রোজের খাবারে কোন কোন জিনিস অবশ্যই রাখবেন?
এরপর বলতে হয় সার্ভিক্যাল ক্যাপের বিষয়ে (Cervical cap)। এটি নারীদেহের সার্ভিক্সে একটি গার্ড বা আবরণ তৈরি করে যার ফলে শুক্রাণু জরায়ুতে ঢুকতে পারে না। এটি পরার ৪৮ ঘন্টা পর্যন্ত এটি কাজ করে। তবে সাধারণত সঙ্গমের ৪ ঘন্টার আগে এটি খুলতে বারণ করা হয়। এছাড়া রয়েছে, কন্ট্রাসেপটিভ ইমপ্লান্ট, অন্যান্য পদ্ধতির তুলনায় এটি দীর্ঘস্থায়ী ও নিরাপদ গর্ভ নিরোধ পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে, একটি নরম কোমল রডের আকৃতির জিনিস নারীর যৌনাঙ্গে স্থাপন করা হয় যার মাধ্যমে ওভ্যুলেশন প্রক্রিয়া আটকানো সম্ভব হয়। দীর্ঘমেয়াদে গর্ভধারণ না করার সিদ্ধন্ত নিলে এই পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে। লোকাল অ্যানাস্থেশিয়ার মাধ্যমে তিন বছরের জন্য অভিজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে এই ইমপ্লান্ট করা হয়।]
আরও শুনুন: আশেপাশে কারও চোখে কনজাংটিভাইটিস! নিজেকে বাঁচাবেন কীভাবে?
আরও একটি ইমপ্লান্ট পদ্ধতি হল IUD বা ইনট্রা-ইউটেরাইন ডিভাইস। এতে ইংরেজির বড় হাতের ‘T’ আকৃতির, ছোট্ট একটি বস্তু জরায়ুতে স্থাপন করা হয়। সুবিধা হল, অসুরক্ষিত সঙ্গমের পর, জরুরি ওরাল পিল না খেয়ে, ৫ দিনের মধ্যেও IUD করা যেতে পারে। এটি কপারের এবং প্রজেস্টেরন হরমোন সমৃদ্ধ এই দুই প্রকারের হয়ে থাকে। দুই ক্ষেত্রেই এর কার্যকারীতা ৯৯%। এটি নারী শরীরে প্রায় ১০ বছর কাজ করতে পারে। একমাত্র অভিজ্ঞ চিকিৎসকের সাহায্যেই এই ইমপ্লান্ট করা যেতে পারে। সবশেষে অবশ্যই স্থায়ী পদ্ধতিটির কথা বলতে হয়। স্টেরিলাইজেশন বা বন্ধ্যাত্ব। কেউ যদি সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন যে তাঁর জীবনে সন্তানের প্রয়োজন নেই, তাহলে তিনি এই স্থায়ী গর্ভ নিরোধক পদ্ধতির বিষয়ে ভাবা যেতেই পারে।