সকালে ঘুম ভাঙার পর এক কাপ ধূমায়িত চা না পেলে যেন দিনটাই ঠিকমতো শুরু হয় না। কিন্তু সেই চায়ের রূপ রস গন্ধ স্বাদ সবই তো একইরকম। কেমন হবে, যদি মাঝে মাঝে বদলে যায় সেই বৈশিষ্ট্যগুলিই? শুনে নিন অন্যরকম চায়ের সুলুকসন্ধান।
সেই কবে নাগরিক কবিয়াল লিখেছিলেন, ‘এক কাপ চায়ে আমি তোমাকে চাই’। প্রিয়তমাকে পাওয়া যাক বা না যাক, চায়ের কাপে ঠোঁট ডুবিয়ে প্রেম বিরহ, অফিসের টেনশন কিংবা সহকর্মীর প্রোমোশন, সব কিছুই দিব্যি সামলে নেওয়া যায়। যুগ বদলানোর সঙ্গে সঙ্গে লাল চা কিংবা দুধ চা-র একঘেয়েমি কাটিয়ে চায়ের সঙ্গেও জুড়ে গিয়েছে নিত্যনতুন রং আর ঢং। জরুরি কথা হল, সেইসব রং কিন্তু কৃত্রিম নয়, একেবারেই প্রাকৃতিক উপায়ে পাওয়া। তেমনই কয়েকটি চায়ের হদিশ রইল আপনার জন্য।
আরও শুনুন: কাপড় থেকে লিপস্টিকের জেদি দাগ তুলবেন কীভাবে? মাথায় রাখুন এই উপায়গুলি
হালকা সবজে আভার গ্রিন টি আজকাল অনেকেই খেয়ে থাকেন। যাঁরা স্বাস্থ্যসচেতন, গ্রিন টির গুণাগুণ সম্পর্কে তাঁরা অবহিত। কিন্তু গ্রিন টি ছাড়াও শরীরের যত্ন নিতে পারে আরও কয়েকরকম ভেষজ চা। যেমন ধরুন, লেমন গ্রাস টি। নামে গ্রাস থাকলেও এর রং কিন্তু সবুজ নয়, বরং হলদেটে। মজার কথা হল, বাগান করার শখ থাকলে ছোট্ট টবে লেমন গ্রাস বাঁচিয়ে রাখতে পারেন আপনি নিজেই। গরম জলে কয়েকটা লেমন গ্রাস ফেলে ফুটিয়ে নিন। তারপর সেই জলেই গ্রিন টি দিন। যোগ করতে পারেন লেবু আর মধুও।
সুগন্ধি লেমন গ্রাসের কথা যখন উঠলই, বলে নেওয়া যাক আরেকরকম সুগন্ধি চায়ের কথাও। ঠান্ডা লাগলে বা জ্বর হলে অনেক বাড়িতেই কাড়া বানিয়ে খাওয়ার চল আছে। জলে দারচিনি, এলাচ, লবঙ্গ ফুটিয়ে জলের পরিমাণ অর্ধেক করে ফেলে ছেঁকে নেওয়া হয়। জল ফোটানোর সময় এই মশলাগুলির সঙ্গেই যোগ করুন সামান্য কেশর বা জাফরান। জল ফুটে উঠলে এতে দিন গ্রিন টি। চা তৈরি হয়ে যাওয়ার পর চাইলে যোগ করতে পারেন সামান্য মধুও। ব্যাস, আপনার চায়ের কাপেই হাজির এক টুকরো কাশ্মীর, থুড়ি, কাশ্মীরি জাফরানের চা।
আরও শুনুন: শীতে ত্বক ভাল রাখে টোম্যাটো, জেনে নিন এর ব্যবহার
হার্বাল টি বানাতে গেলে অনেকেই আজকাল বিভিন্ন ফুলের ব্যবহার করছেন। অপরাজিতা বা নীলকণ্ঠ ফুলের নির্যাস দিয়ে তৈরি হচ্ছে অপূর্ব নীল আভার চা, গোলাপের পাপড়ি জলে ফুটিয়ে রোজ টি বানিয়ে ফেলছেন কেউ কেউ। অপরাজিতা কিংবা জবা ফুলে থাকে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আবার ত্বক ও চুলের জন্যও উপকারী।
বেছে নেওয়া যাক সবচেয়ে সহজলভ্য ফুলটিকেই। জবা ফুল। এই ফুলের কয়েকটি পাপড়ি ভালো করে ধুয়ে গরম জলে ফেলে দিন। কিছুক্ষণ ভেজালেই জবা ফুলের নির্যাস পেয়ে যাবেন আপনি। আপনি যদি লাল চা তথা লিকার চায়ের ভক্ত হয়ে থাকেন, এই অন্যরকম লাল চায়ের স্বাদ নিয়ে দেখতেই পারেন।
ভেষজ চায়ের খোঁজ তো পেলেন, কিন্তু অপরিমিত ভাবে খাবেন না। আর মনে রাখুন আরও কয়েকটি কথা। এই চায়ে কিন্তু চিনি চলে না। বড়োজোর মধু মেশাতে পারেন। বাজার থেকে কেনা ফুলের পাপড়ি মেশানোর ক্ষেত্রে সতর্ক থাকবেন। কোনও উপাদানের ক্ষেত্রে আপনার অ্যালার্জি আছে কি না, জেনে নিন সে কথাও। শরীর সুস্থ করতে গিয়ে যেন বাড়তি বিপত্তি ডেকে আনবেন না।