বাঘে ছুঁলে আঠেরো,পুলিশে ছুঁলে ছত্রিশ আর শীত যদি ছোঁয়! কথায় বলে, মাঘের শীত বাঘের গায়ে। এই তো আর ক-টাদিন! শীতকাল তার খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসবে। ঠকঠক কাঁপুনির দিন এল বলে! এর মধ্যে আবার আছে স্নানের হ্যাপা! নাহয় গরম জলে, তা-ও কি কম কষ্টের ব্যাপার। এক শীতে রক্ষে নেই, স্নান দোসর! চিকিৎসকরা অবশ্য বলছেন, এত ভয় পাবার কিছু নেই, কেননা রোজ স্নানের তেমন দরকারও নেই। হ্যাঁ ঠিকই শুনছেন। কী বললেন তাঁরা? আসুন শুনে নিই।
স্নান না করলে চলবে না। বাড়িতে বাড়িতে এই অলিখিত আইন যেন জারি হয়ে আছে। আর সেই আইন যে লঙ্খন করবে তার জন্য বিস্তর খোঁটা-গঞ্জনাও বরাদ্দ। এদিকে শীত আসতে না আসতে ভাবনা শুরু শীতকাতুরের। এই ঠান্ডায় রোজ স্নান করা মানে অনেকটা সাহস সঞ্চয় করে তবেই অভিযানে নামা। এর থেকে যেন পরিত্রাণ নেই। নেই বললে অবিশ্যি ভুল হবে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শই এক্ষেত্রে আশ্রয়। আর তাঁরা বলছেন, রোজ যে স্নান করতেই হবে, ব্যাপারটা কিন্তু অতটাও জরুরি নয়।
আরও শুনুন: গর্ভনিরোধক বড়ি খেলে মহিলাদের সম্পর্কে কী ভাবে পুরুষরা? জানাল সমীক্ষা
কোনও কোনও বিশেষজ্ঞের মতে, রোজকার স্নানের অভ্যাস অনেকের থাকলেও, তা যে খুব উপকারী এমনটা বলা যায় না। কেননা, তাঁদের মতে, রোজ স্নানের ফলে শারীরিক দুর্গন্ধের একটা অংশই মাত্র অপসারিত হয়। যে সব ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রাণী, বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় যাদের মাইক্রোবস বলা হয়, তারা যে সকলেই খুব ক্ষতিকর এমনটা নয়। অনেকে আবার ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষা করতেও সাহায্য করে। ফলত প্রতিদিন স্নানের দরুন, এই মাইক্রোবস অপসারিত হলে ত্বক ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা। পক্ষান্তরে যা অন্য ব্যাকটেরিয়ার জন্য ত্বকের প্রবেশপথ খুলে দেয়। ফলটা হয় এই যে, অ্যালার্জি বা ওই জাতীয় অসুখের সম্ভাবনা এতে বাড়তেও পারে। হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের বিশেষজ্ঞদের মতে তাই রোজ স্নান যে একান্তই জরুরি তা নিশ্চিত করে বলার বিশেষ কারণ নেই। বরং কোনও কোনও দিন স্নান না করার পিছনে বৈজ্ঞানিক ভিত্তি যথেষ্ট।
আরও শুনুন: যেন কুম্ভকর্ণ! দিনের অনেকটা সময় কাটছে ঘুমিয়েই… এই রোগে আক্রান্ত হননি তো?
এর মানে অবশ্য এই নয় যে স্নানকেই জীবন থেকে মুছে দিতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে কতবার স্নান করা আদর্শ? তার অবশ্য কোনও ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, সপ্তাহে বার তিনেক স্নানই যথেষ্ট। যদি না কোনও ব্যাক্তি স্নান না করার কারণে অসুস্থ বোধ করেন, তাহলে ওই তিনবারই শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকার জন্য যথেষ্ট। একই কথা বাচ্চাদের জন্যও প্রযোজ্য। অনেক ক্ষেত্রে স্নানের সময় আমরা যে সাবান ব্যবহার করি, তা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল হয়। যার কারণে ভাল জীবাণুও মরে যায়। আখেরে যা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর। তাই শুধু ঝপ করে জল ঢেলে দেওয়া নয়। স্নান নিয়ে কিছু ভাবনা-চিন্তারও প্রয়োজন আছে। আর শীতের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে স্নানঘরে ঢোকারও প্রশ্ন নেই। শুধু যতবার না করলে নয়, তবার স্নান করলেই শীতের সপ্তাহ আপনি হেলায় পার করে দিতে পারবেন।