নামী কোম্পানির ঘড়িতেই আজকাল মেপে নেওয়া যায় প্রেশার-সুগার। অনেকে তা করেও থাকেন। প্রযুক্তি আজকের দিনে এই বিশেষ সুবিধা এনে দিয়েছে আমাদের হাতের মুঠোয়। তবে যার উপর অগাধ ভরসা করা হচ্ছে, তা নির্ভরযোগ্য তো! সে প্রশ্ন থেকেই যায়। আলোচনায় শঙ্খ বিশ্বাস।
সেন্সর এই শব্দটার সঙ্গে আমরা সকলেই পরিচিত। টেক-জগতে, এর প্রভাব কিন্তু সুদূরপ্রসারী। আমরা সারা দিনে কত পা হাঁটলাম, কত ক্যালরি ফ্যাট ঝরল, সারাদিনে কতক্ষণ বসে থাকলাম, কতক্ষণ ঘুমোলাম, আমাদের স্ট্রেস লেভেল ঠিক কত, আমাদের হার্ট রেট কত, রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ ঠিক কতটা, ব্লাড প্রেসার কত- এই সব চুটকিতে মেপে দিচ্ছে এখনকার স্মার্টওয়াচ। সৌজন্যে ওই সেন্সর। ফলে আমরা আমাদের বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়গুলি সম্পর্কে খুব সহজেই ওয়াকিবহাল থাকতে পারছি। যেমন অনেকক্ষণ বসে থাকলেই দেখবেন আপনার স্মার্টওয়াচ বলতে শুরু করেছে , অনেক হয়েছে এবার একটু উঠে হাঁটুন তো মশাই বা নিদেনপক্ষে একটু দাঁড়ান। বা ধরুন রাতে আপনার ঘুম কেমন হয়েছে, কতক্ষণ আপনি তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিলেন, কতক্ষণ গভীর ঘুমে, বা সারা রাতে কত বার ঘুম ভেঙেছে সব দেখিয়ে দেবে এখনকার স্মার্টওয়াচ। একটু দামি স্মার্টওয়াচগুলো তো আপনার বডি টেম্পারেচার, মহিলাদের পিরিয়ড সাইকেল এমনকি ওভুলেশন ট্র্যাকিং পর্যন্ত করে দিচ্ছে। এই যে লকডাউনে আমরা যখন গৃহবন্দি ছিলাম, ডাক্তারবাবুদের প্রায়ই বলতে শুনেছি, যে প্রত্যেকের উচিত একটা ব্লাড-অক্সিমিটার বাড়িতে কিনে রাখা, যাতে আমাদের রক্তে অক্সিজেন লেভেল কত আছে তা আমরা নিজেরাই বুঝতে পারি এবং সঙ্গে সঙ্গে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে পারি। এটাও কিন্তু এখনকার একটু ভালো স্মার্টওয়াচগুলো দেখিয়ে দিচ্ছে। শুধু তাই-ই নয় আপনি হয়তো ব্লাড সুগার লেভেল-ও মাপতে পারবেন,কোনো রক্তক্ষয় ছাড়া, এমনও শোনা যাচ্ছে স্মার্টওয়াচ-এর জগতের এক অন্যতম নামী সংস্থার তরফে। সুতরাং এক কথায় বলতে গেলে, আমাদের শরীরের যত্ন নিতে আমাদের কিন্তু বেশ সাহায্যই করছে এই স্মার্ট ওয়াচগুলি এবং ভবিষ্যতে তা কার্যকরী হয়ে উঠবে বলেই সকলের ধারণা। তবে প্রশ্ন অন্য জায়গায়। সেটা হল, যন্ত্র নির্ভরতা ভালো , তাতে কোনও অসুবিধা নেই, আমাদের অনেক সময়ও বাঁচে তাতে। কিন্তু এই যে সেই সেন্সরগুলো যে ফলাফল আপনাকে দেখাচ্ছে তা কতখানি বিশ্বাসযোগ্য?
স্মার্টওয়াচ-এর মার্কেটে যে হারে প্রতিযোগিতা বাড়ছে, তাতে মানুষের সাধকে সাধ্যের মধ্যে আনার চেষ্টা করছে বহু স্মার্টওয়াচ প্রস্তুতকারক কোম্পানিই। আর তাই খুব কম দামে বেশি ফিচার থাকে এমন স্মার্টওয়াচই বানাচ্ছে তারা। যে সব সেন্সর আগে শুধু ‘প্রিমিয়াম সিরিজের’ ঘড়িগুলোয় পাওয়া যেত সেই একই সেন্সর এখন ‘এন্ট্রি লেভেলের’ ঘড়িগুলোতেও দেখা যাচ্ছে। আর এখানেই কিন্তু তৈরি হচ্ছে বেশ কিছু প্রশ্ন। গুণগত মানের ক্ষেত্রে কি একটু হলেও কম্প্রোমাইজ করতে হচ্ছে কম দামে এই সব ফিচার দিতে গিয়ে? যে সব সেন্সর এই কম দামি স্মার্টফোনগুলিতে ব্যবহার করা হচ্ছে তারা কি প্রিমিয়াম সিরিজের ঘড়িগুলোর মতোই নির্ভর যোগ্য?
সাধারণ যুক্তি বলে, যত গুড় দেবে ততই মিষ্টি হবে, অর্থাৎ কম দামের ঘড়িতে সেন্সর-ও কম দামি হবে। সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু প্রশ্নটা যে আমাদের শরীরের। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, আমরা যদি পুরোপুরি এই সব স্মার্টওয়াচের উপর বিশ্বাস করতে শুরু করি অন্ধ ভবে, আখেরে কার ক্ষতি? আমি এটা বলছিনা যে, এই স্মার্টওয়াচগুলো সব ভুল দেখায় বা সব সময় ভুল দেখায়, আমার প্রশ্ন এদের উপর কি আমরা পুরোপুরি ভরসা করতে পারি? বা আমাদের পুরোপুরি নির্ভর করা উচিত? প্রযুক্তির উপর অগাধ আস্থা রাখার সময় বোধহয় আমাদের এ কথাও একটু ভেবে দেখা উচিত।