অতিমারির দিন শেষ ভেবে যাঁরা ইতিমধ্যেই মাস্কপত্তর শিকেয় তুলেছেন, নিজেদের বিপদ নিজেরাই ডেকে আনছেন না তো তাঁরা? কারণ ফের উঁকি দিচ্ছে করোনার চতুর্থ ঢেউয়ের আশঙ্কা। ইতিমধ্যেই চিন-সহ এশিয়া ও ইউরোপের বেশ কিছু দেশে বিচ্ছিন্ন ভাবে ধরা পড়েছে করোনার নয়া স্ট্রেন বিএ-টু ভাইরাস। শ্বাসযন্ত্র নয়, এবার কোভিডের নিশানায় শরীরের অন্য অংশ। কোথায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলতে পারে করোনার নয়া স্ট্রেন? এ-ও শোনা যাচ্ছে, আরটিপিসিআরে নাকি না-ও ধরা পড়তে পারে এই ভাইরাস। সব মিলিয়ে কতটা বিপজ্জনক এই স্টেলথ ওমিক্রন? কী বলছেন বিশেষজ্ঞেরা? শুনে নিন।
সবে অতিমারির তৃতীয় ঢেউ কাটিয়ে ছন্দে ফিরতে শুরু করেছে দেশ। জানুয়ারির গোড়ায় আতঙ্ক উসকে বাড়তে শুরু করেছিল সংক্রমণ। প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ে কোনওমতে করোনার আঁচ বাঁচিয়ে ছিলেন যাঁরা, তাঁরাও অনেকে রেহাই পাননি ওমিক্রনের হাত থেকে। তবে মার্চের গোড়া থেকেই নামতে শুরু করেছিল দেশের করোনা গ্রাফ। দেখতে দেখতে বেশ স্বস্তিজনক জায়গাতেও পৌঁছয় তা। তবে সেই সুখ বোধহয় বেশিদিন নয়। কারণ ফের উঁকি দিচ্ছে করোনার চতুর্থ ঢেউয়ের আশঙ্কা।
ওমিক্রনের পর অনেকেই ভেবেছিলেন, এবার বোধহয় শেষ। ইতিমধ্যেই করোনা বিধিনিষেধ তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। স্বাভাবিক হচ্ছে আন্তর্জাতিক বিমান পরিষেবাও। কিন্তু ফের ইকান পাতলেই শোনা যাচ্ছে করোনার খবর। চিনের উহানে সংক্রমণ এতটাই বেড়েছে যে, সম্পূর্ণ লকডাউন করতে বাধ্য হয়েছেন সে দেশের সরকার। বিভিন্ন দেশ থেকেই সংক্রমণের খবর আসছে বিচ্ছিন্ন ভাবে। যা ফের উসকে দিচ্ছে চতুর্থ ঢেউয়ের সম্ভাবনা।
আরও শুনুন: শুধু পরিবেশেই নয়, রক্তেও বিষ ঢালছে মাইক্রোপ্লাস্টিক! হতে পারে মারাত্মক ক্ষতি
দিন কয়েক আগেই ব্যাপারটি নিয়ে সতর্ক করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। জানিয়েছিল, এটা হিমশৈলের চূড়ামাত্র, উপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে আরও বড় বিপদ অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। চতুর্থ তরঙ্গে আরও ভয়ঙ্কর কোনও রূপ নিয়ে আসছে না তো করোনা ভাইরাস! কী বলছেন বিশেষজ্ঞেরা।
জিনের আরও বদল ঘটিয়ে চতুর্থ ওয়েভে দেখা দিতে পারে ওমিক্রনের নয়া ভ্যারিয়েন্ট বিএ-টু ভাইরাস বা স্টেলথ ওমিক্রন। সম্প্রতি এ নিয়ে সতর্ক করেছেন কলকাতার এক দল ভাইরোলজিস্ট। তাঁদের মতে, কোভিডের চতুর্থ ঢেউয়ের উপসর্গ আগের ঢেউগুলি থেকে একেবারে আলাদা হতে চলেছে।
আগে করোনা ভাইরাস সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলত আমাদের শ্বাসযন্ত্রের উপর। জ্বর, সর্দি, হাঁচি-কাশি এসবই ছিল করোনার প্রাথমিক লক্ষণ। পরে তৃতীয় ঢেউয়ে যুক্ত হয় তীব্র গায়ে হাত পায়ে ব্যথা। তবে বিএ-টু ভ্যারিয়েন্টটির প্রভাব হতে পারে একদম আলাদা। ভাইরাসের এই ভ্যারিয়েন্টটি সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলতে পারে পেটের উপর। বাড়তে পারে পাকস্থলী ও অন্ত্রের সমস্যা। পেটের যন্ত্রণা, বমি এমনকি ডায়েরিয়া পর্যন্ত হতে পারে করোনার এই নয়া ভাইরাসের কারণে।
আরও শুনুন: আর দেরি নয়, এবার মাত্র ৪ মিনিটেই জানা যাবে করোনা পরীক্ষার ফল
তবে সবচেয়ে বড় মুশকিল হল, সাধারণ আরটিপিসিআর পরীক্ষার মাধ্যমে নাকি ধরা পড়বে না কোভিডের এই নয়া ভ্যারিয়েন্ট। নাক বা গলার চেয়ে পেটের উপর বেশি আক্রমণ করায় আরপিসিআরের মাধ্যমে নতুন এই ভাইরাস ধরা কঠিন বলেই মনে করা হচ্ছে। ফলে কীভাবে রোগ ধরা পড়বে তা-ও একটা নতুন চিন্তার বিষয়। গবেষকদের মতে, আগের চেয়ে আরও বেশি সংক্রামক হতে চলেছে কোভিডের এই নয়া স্ট্রেন। তবে তীব্রতা তেমন হবে না বলেই আশাবাদী গবেষকেরা। পেটের সমস্যার পাশাপাশি বাড়বে গায়ে হাত পায়ে ব্যথা ও ক্লান্তি। ওমিক্রনের সময়ই ব্যাপক গায়ে-হাত-পায়ে কিংবা কোমরে ব্যথার সম্মুখীন হয়েছেন আক্রান্তরা। সে সমস্যা এবার আরও বাড়বে।
সব মিলিয়ে ফের হয়তো ফিরে আসতে চলেছে দুর্বিসহ সেই সব দিন। করোনা চলে গিয়েছে ভেবে অনেকেই ঢিলেঢালা দিতে শুরু করেছেন বিধিনিষেধে। মাস্ক পরা বন্ধ করেছেন অনেকেই। অথচ কেন্দ্রীয় সরকারের গাইডলাইনে স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে, করোনা বিধিনিষেধ উঠে গেলেও মাস্ক পরা ও পারষ্পরিক দূরত্ববিধি মেনে চলতে হবে প্রত্যেককে। অনেকেই ব্যাপারটিকে বিশেষ পাত্তা দিচ্ছেন না। নিজেদের অজান্তেই করোনার চতুর্থ ঢেউকে নেমন্তন্ন করে ডেকে আনছেন না তো তাঁরা! এখন থেকে সতর্ক না হলে কিন্তু বিপদের খুব বেশি দেরি নেই, তেমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের।