মস্তিষ্কে প্লাস্টিক! অল্প নয়, বরং পরিমাণে এতটাই যে, একটা ছোট চামচ তৈরি হয়ে যাবে অনায়াসে। অথচ সে জিনিস মাথায় নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে সব্বাই। সাম্প্রতিক গবেষণায় এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এল, যা বড় ধরণের রোগের ইঙ্গিতও দিচ্ছে! ঠিক কোন রোগের আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
প্রকৃতির উপর প্লাস্টিকের প্রভাব যে কী ভয়াবহ, তা তো হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি আমরা। পরিবেশে দূষণ ছড়ানো ক্ষতিকর জিনিসগুলির মধ্যে অন্যতম উপাদান এই প্লাস্টিক। এই যে বিশ্ব উষ্ণায়ণ বা জলবায়ু পরিবর্তনের মতো সমস্যা, তারও একটা মূল কারণ নাকি এই প্লাস্টিক। কিন্তু এই প্লাস্টিক যে মানবশরীরেও মারাত্মক ক্ষতি করছে সে খবর রাখেন!
:আরও শুনুন:
শাহী স্নানে নয়, মাঘ অষ্টমীতে কুম্ভস্নান মোদির! কী মাহাত্ম্য এই বিশেষ তিথির?
এর আগেও রক্তে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি টের পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সেই নিয়ে সতর্কও করেছেন। একইভাবে ভয় ধরাচ্ছে ন্যানোপ্লাস্টিক। আকারে আরও খানিক ক্ষুদ্র, তবে ক্ষতি মারাত্মক। আসলে দিনরাত নানা রকম ভাবে আমরা প্লাস্টিকের জিনিসপত্র ব্যবহার করি। খালি চোখে দেখা না গেলেও সেসব প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অণু-পরমাণু জমা হয় আমাদের শরীরের, যাকে বলে মাইক্রো বা ন্যানোপ্লাস্টিক। পরিবেশ দূষণের মূলেও কিন্তু এই প্লাস্টিকই। একইসঙ্গে যা আমাদের শরীরে যে কী নয়ছয় ঘটিয়ে চলেছে, তা যথেষ্ট উদ্বেগে ফেলেছে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। সম্প্রতি একাধিক মৃত শরীরে গবেষণা চালান বিজ্ঞানীরা। তাঁদের মস্তিষ্ক পরীক্ষা করতেই দেখা যায় এই ধরণের ন্যানোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি। এক্ষেত্রে যারা ডিমেনসিয়া জাতীয় বিরল রোগের শিকার হয়ে মারা গিয়েছেন, তাঁদের মস্তিষ্কেই প্লাস্টিকের মাত্রা বেশি। সুতরাং, প্রতিনিয়ত যে পরিমাণ প্লাস্টিক আমাদের শরীরে ঢুকছে, তা নিয়ন্ত্রণ না করলে ভবিষ্যতে ওই ধরণের বড়সর মস্তিষ্কের ব্যারাম হতেই পারে, মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
:আরও শুনুন:
ন্যূনতম বিল ২ লাখ! বিশ্বের সবচেয়ে দামি বাজার কোথায় বসে জানেন?
মানবশরীরে ন্যানোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি নতুন নয়। ব্রেন, অন্ত্র থেকে শুরু করে মাতৃগর্ভে থাকা শিশুদের প্লাসেন্টা বা অমরায়, এমনকি প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুদের মলেও মিলেছে এই ধরণের প্লাস্টিকের উপস্থিতি। এমনকি মস্তিস্কেও প্লাস্টিকের খোঁজ মিলেছে বহু আগে। তবে বর্তমান গবেষণা ভয় ধরাচ্ছে তার কারণ, প্লাস্টিকের পরিমাণ। চিকিৎসকদের দাবি, ২০১৬ সালে হওয়া গবেষণায় যে পরিমাণ প্লাস্টিকের খোঁজ মিলত, বর্তমানে তার প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি প্লাস্টিক পাওয়া যাচ্ছে মানবশরীরে। এক্ষেত্রে মস্তিষ্কে ন্যানোপ্লাস্টিকের পরিমাণ সবথেকে বেশি। আরও বিস্তারে বললে, বর্তমানে অধিকাংশ মানুষের মস্তিষ্কের রক্ত, মাংস, স্নায়ু সহ যাবতীয় দেহজ পদার্থ রয়েছে ৯৯.৫০ শতাংশ, আর বাকি ০.৫০ শতাংশ প্লাস্টিক। এই হিসাবে পরিমাণ অনেক মনে হলেও, একসময় এই পরিমানটাই ছিল ০.০৫ শতাংশ। গবেষণা বলছে, প্রতি বছরই নানা জিনিসের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক মানবশরীরে প্রবেশ করে। তার কিছুটা অংশ প্রাকৃতিক নিয়মে শরীরের বাইরে বেরিয়েও যায়। বাকিটা মিশে থাকে শরীরে। যা দরুণ বিভিন্ন রোগ বাসা বাঁধতে পারে অনায়াসে, এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা এতটাই কমে যায় যে, সহজে তা সারার সম্ভাবনাও থাকে না। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি যে বেশ কঠিন তা বলাই যায়। তাই এখনই যদি প্লাস্টিক ব্যবহারে আমরা রাশ টানতে না পারি, তবে যে আরও ঘোরতর বিপদের দিন আসতে চলেছে তা বোধহয় বলার অপেক্ষা রাখে না।