আবির দিয়ে যে রঙের উৎসবের শুরু, তা শেষ হবেই হবে বাঁদুরে রঙে। ফলে যা হবার তাই হবে। রং খেলার শেষে অবাধ্য রং তুলতে নাকানিচোবানি। কিন্তু এ বছরটা যদি গল্পটা অন্যরকম হয়! আসুন, শুনে নিই, জেদী রং তোলার সহজে কয়েকটা দাওয়াই।
‘খেলব হোলি, রং দেব না তাই কখনও হয়!’ একেবারেই হয় না। তাই রং খেলায় আবিরের পাশাপাশি বাঁদুরে রং না থাকলে দোল জমে নাকি। সকাল থেকে আবিরের উপরে আবির, রঙের উপর রঙের পোচ পড়েছে মুখে। ফলে খেলা শেষে রং তুলতে হিমশিম খাওয়া তো বাধ্যতামূলক। কাপড়, ছোবড়া দিয়ে ঘষতে ঘষতে গায়ের ছাল উঠে যাওয়ার জোগার, কিন্তু রঙের ওঠার নাম নেই। উপরি পাওনা আবার জ্বলুনি। কানের লতি থেকে নখের গোড়া- কোনও জায়গা থেকেই ওঠার নাম নিচ্ছে না অবাধ্য বাঁদুরে রং।
এদিকে, দোল তো একদিন। পরের দিন থেকেই অফিস-কাছারি, কলেজপত্তর। লোকে বলে, হাতে পায়ে রঙের দাগই না থাকল তো রংখেলার মজাটা কোথায়! কিন্তু সে যে যাই বলুক না কেন, রং খেলার পর বিটকেলে দাগ তুলে ফেলতে কে না চায় বলুন তো! তার জন্য দেদার ঘষাঘষি না করে বরং শুনে নেওয়া যাক রং ওঠানোর সহজ কয়েকটা টিপস।
আরও শুনুন: ত্বকের যত্ন নিন… রঙের উৎসবে মেতে ওঠার আগে ঠিক কী করবেন? রইল টিপস
রং খেলে এসে মুখে ফেস ওয়াশ ঘষার আগে একটু নারকেল তেল মেখে নিন। এতে রং খানিকটা গলে যাবে। তার পরে সাবান মাখলে সহজেই উঠবপে রং।
সামান্য আটা ও তেল মিশিয়ে একটা মিশ্রণ তৈরি করুন। সেটাকে কিছুক্ষণ রেখে মুখে মেখে ফেলুন। এরপর হাত দিয়ে সামান্য মাসাজ করুন। এরপরে ক্লেনজার দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন।
বাড়িতে মুলতানি মাটি থাকলে তাও ব্যবহার করতে পারেন। এটা রংকে শুকিয়ে দিতে সাহায্য করবে, যা ধুলে সহজেই উঠে যাবে।
চুলকানি বা ত্বকের অ্যালার্জি এড়াতে গ্লিসারিন ও গোলাপজল মিশিয়ে মেখে নিন। উপকার পাবেন।
দোলের রংয়ের প্রভাব চুলের উপরেও কিছু কম নয়। কীভাবে তুলবেন চুলের রং, শুনে নিন।
রং খেলে এসেই শ্যাম্পু করতে বসবেন না। বরং ডিমের সাদা অংশ দিয়ে একটি প্যাক তৈরি করে মাথায় মেখে নিন। সেটিকে ৪৫ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে নিন। এভাবে রঙের ক্ষতির হাত থেকে চুলকে অনেকটাই বাঁচানো যাবে। রং খেলতে যাওয়ার আগে চুলে ক্যাস্টর অয়েল, অলিভ অয়েল মেখে যান। ব্যবহার করতে পারেন নারকেলের দুধও। রং খেলে এসেও নারকেলের দুধ দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। তার এক ঘণ্টা পরে শ্যাম্পু করুন।
রং খেলতে যাওয়ার আগে নেলপলিশ লাগিয়ে যেতে ভুলবেন না। পাশাপাশি হাতেও সামান্য ভেসলিন মেখে বেরোন। এতে রং তুলতে সুবিধা হবে। নখ ও হাতের জেদি রং তুলতে ঠান্ডা জলে হাত দুটো ভিজিয়ে রাখুন। তাতে ব্যবহার করতে পারেন লেবুর রসও।
আরও শুনুন: রং খেলবেন, কিন্তু রঙের হাত থেকে মোবাইল ফোনটিকে বাঁচাবেন কীভাবে?
এ তো গেল শরীরের রং। জামাকাপড়ের জেদী রং, সে কি কম চিন্তার কথা। তার জন্যও আমাদের কাছে রয়েছে মুশকিল আসান টিপস। কী সেসব? শুনে নিন।
আজকাল তো সাদা জামাকাপড় পরে রং খেলার ট্রেন্ড। সেক্ষেত্রে রং লাগা সাদা জামাটিকে গরম জলে ভিজিয়ে রাখুন। তবে তাতে একটু নন ক্লোরিন ব্লিচ মেশাতে ভুলবেন না। এর পরে সাদা জামাটিকে আলাদা করে কেচে নিন। অন্য রঙের জামাকাপড়ের ক্ষেত্রে কী করবেন, সে কথায় আসি। ২-৩ লিটার জলে আধকাপ ভিনিগার এক টেবিল চামচ ডিটার্রডেন্ট মেশান। এবার সেই জলে রং লাগা জামাকাপড় গুলি ভিডিয়ে রাখুন। দেখবেন অ্যাসিটিক অ্যাসিডের ম্যাজিক। কাচ পরিষ্কার করতে যে অ্যামোনিয়া স্প্রে ব্যবহার করা হয়, সেই জিনিষটি কিন্তু রং তুলতেও ওস্তাদ। জেদী রঙের উপরে একবার সেটিকে ব্যবহার করেই দেখুন না। তার পরে সেটিকে কেচে নিতে ভুলবেন না যেন। তবে রং খেলে দীর্ঘক্ষণ সেগুলিকে ওই অবস্থায় ফেলে রাখবেন না। তাতে রং বসে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। দ্রুত সেগুলি কেচে ফেলুন।
ফলে রং উঠবে কিনা, সে সব ভেবে যাঁরা বাইরে বেরোতে কিন্তু কিন্তু করছেন, তাঁরা নির্ভয়ে বেরিয়ে পড়ুন। মেতে উঠুন দোলের আনন্দে। আর একটু রং না হয় লেগে থাকলই। এমনিতেই তো রোগ, ব্যাধি, যুদ্ধ, মৃত্যুতে জেরবার আমরা। সারা বছরে এমন রঙের উৎসব আর কটাই বা আসে বলুন তো। দাগের ভয়ে সেইটুকু আনন্দে যোগ দেব না, তা আবার হয় নাকি!