বর্ষার সোঁদা গন্ধ আর ভেজা হাওয়া, আপনার মন ভাল করে দিলেও, এগুলিই কিন্তু গোপনাঙ্গে ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়াঘটিত সংক্রমণের মূল কারণ হয়ে উঠতে পারে। বর্ষায় তাই স্ত্রী যৌনাঙ্গের খেয়াল রাখা একান্ত জরুরি। কীভাবে রাখবেন? রইল সেই সুলুক-সন্ধান।
বর্ষায় যেমন খিচুড়ি বা রেইনি ডে-র ভালোলাগা রয়েছে, তেমনই রয়েছে নানান অসুখ-বিসুখের চিন্তাও। সাধারণ হাঁচি-কাশি-জ্বরের পাশাপাশি গোপনাঙ্গেরও নানা সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে এই ঋতুতে। স্ত্রী দেহের জননঅঙ্গ অর্থাৎ যোনিতে এই সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে সবচেয়ে বেশি। তাই গোপনাঙ্গের দেখভাল করাও, এই বর্ষায় বিশেষভাবে জরুরি। আর শুরু থেকেই আপনার বিশেষ যত্ন আপনার যৌনাঙ্গের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করবে।
শুরুতেই জেনে নেওয়া যাক কী কী লক্ষণ কখনই অবহেলা করবেন না। কারণ সেগুলি আপনার যৌনাঙ্গের ব্যাকটেরিয়া-ঘটিত সংক্রমণের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে।
১) দেহের খোলা অংশ, বা সাধারণত যে অংশগুলো অনাবৃত থাকে সেখানে র্যাশ বেরোলে সতর্ক হোন।
২) যোনিতে কোনোরকম জ্বালা বা চুলকানি বা কোনরকম অস্বস্তি হলে বিপদের আশঙ্কা।
৩) গোপনাঙ্গের চারপাশ লালাভ হয়ে থাকাও বিপজ্জনক।
৪) যোনি থেকে অতিরিক্ত ডিসচার্জ হলেও সতর্ক থাকুন।
৫) মূত্রত্যাগের সময় বা সঙ্গমের সময় যোনিতে জ্বালা ভাব থাকলে মোটেও অবহেলা নয়।
আরও শুনুন: দীর্ঘ সময় নয়, বয়সেই লুকিয়ে চাবিকাঠি! কোন বয়সে যৌনতায় বেশি তৃপ্তি পান মহিলারা?
এই সবকটিই যোনি, মূত্রনালী বা স্ত্রী জননঅঙ্গের কোনও অংশে ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক সংক্রমণের কারণ হতে পারে। সংক্রমণ হলে, তা থেকে মুক্তি পেতে আপনাকে অবিলম্বে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে এবিষয়ে পরামর্শ করতে হবে। তবে সংক্রমণ রুখতে কীভাবে যত্নবান হবেন, সে বিষয়ে কয়েকটি টিপস রইল এবার।
১) পিরিয়েডসের সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা – বর্ষায় পিরিয়ডসের সময় অন্তত ৪-৫ ঘণ্টা অন্তর অন্তর বদলে ফেলতে হবে, স্যানিটারি প্যাড বা ট্যাম্পুন। কিন্তু এই সময় ট্যাম্পুন ব্যবহার না করারই পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। তবে মেন্সট্রুয়্যাল কাপ এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভরসাযোগ্য। সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে কম। এর পাশাপাশি মনে রাখতে হবে গোপনাঙ্গ বা তার কাছাকাছি জায়গায় কোনোরকম সুগন্ধির ব্যবহার কিন্তু খারাপ ব্যাকটেরিয়া ডেকে আনতে পারে। সুতরাং গোপনাঙ্গে সুগন্ধি বা গন্ধযুক্ত কোনও তরল ব্যবহার না করাই ভাল। সেই সঙ্গে পরিষ্কার রাখতে হবে হাতও। যাতে ব্যকটেরিয়ার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা কমানো যায়।
২) যৌনাঙ্গের অংশে পিএইচ-এর মাত্রা ঠিক রাখা – গায়ে মাখার সাবানে অনেক সময়ই অতিরিক্ত ক্ষার থাকায় তা যৌনাঙ্গের নরম ও কোমল জায়গার পিএইচ ব্যালেন্স নষ্ট করে দেয়। আজকাল বাজারে পিএইচ ব্যালেন্সড ক্লিনসার পাওয়া যায় যা যোনি ও সংলগ্ন যায়গায় ব্যবহার নির্ভরযোগ্য। এছাড়া গরম জলে যৌনাঙ্গ পরিষ্কার করতে পারলে, যোনিতে আটকে পড়া ব্যাকটেরিয়া ধুয়ে বেরিয়ে যায়।
আরও শুনুন: স্তন ছোট বলে চিন্তা! জীবনে দ্বিতীয়বার বাড়ে স্তনের আকার, কত বয়স পর্যন্ত?
৩) পোশাকি সতর্কতা – বর্ষার সময় বৃষ্টিভেজা জামাকাপড় পরে বেশিক্ষণ থাকলে তা শরীরের নানা যায়গায় ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ ঘটাতে পারে। এমনকি যৌনাঙ্গেও। একই সম্ভাবনা থাকে ঘামে ভেজা জামাকাপড়েও। সুতির, ব্রিদেব্ল অন্তর্বাস পরুন। পাশাপাশি এই স্যাঁতসেতে আবহাওয়ায় ভারি জিন্স, চাপা টাইটস বা শর্টসের বদলে বেছে নিন ঢিলেঢালা বাইফারকেট। এতে র্যাশ বা সংক্রমণের সম্ভাবনা কম থাকে।
৪) সাধারণ শৌচাগার – যার ব্যবহার এড়িয়ে চলাই উচিত। বহুজনের ব্যবহৃত শৌচাগারে, নানান জীবাণু ও ফাঙ্গাস সংক্রমণের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। তবু নিতান্তই জরুরি হলে, অবশ্যই সঙ্গে রাখুন টয়লেট পেপার এবং ডিসপোজেবল টয়লেট সিট।
৫) সুরক্ষিত যৌনতা – যৌনরোগ সংক্রমণের সম্ভাবনা কমাতে, যোনিকে সুরক্ষিত রাখতে, সঙ্গমকালে কন্ডোম বা সমমানের কোনও নিরোধ ব্যবহার অবশ্যই উচিত।
সব ঋতুর যেমন রয়েছে আলাদা আলাদা রং-রূপ তেমনই সব ঋতুতে ভাল থাকারও রয়েছে আলাদা আলাদা উপায়। বর্ষায় যৌনজীবন ও স্ত্রী প্রজননঅঙ্গ সুরক্ষিত রাখতে এই উপায়গুলি অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে জল খাওয়া এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়াও জরুরি। এতে শরীরে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়ে, যা পরোক্ষে যে কোনো সংক্রমণই রুখতে সাহায্য করে।