নতুন বছর শুরু হতে না হতেই ফের চোখ রাঙাচ্ছে করোনা-কাঁটা। ফের শুরু বিধিনিষেধের জীবন। এই পরিস্থিতিতে কোভিড এড়াতে কী করবেন, কী করবেন না, তা নিয়ে সর্বত্র নানা কথা শোনা যাচ্ছে। সে সব শোনা নিশ্চয়ই জরুরি, তবে সবার আগে দরকার পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে নিজের কর্তব্য স্থির করা। ভয় পাওয়া বা দোষারোপ করা নয়, বুঝে নিতে হবে আমাদের করণীয় কী!
করোনা বাড়ছে। তা তো সত্যি কথাই। কার জন্য বাড়ল? কার জন্য পরিস্থিতি গেল হাতের বাইরে? এরকম কিছু প্রশ্ন এখন ঘোরাঘুরি করছে সব জায়গাতেই। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে ব্যক্তিগত পরিসরে এই নিয়ে ক্ষুব্ধ মানুষের নানারকম মতের চালাচালি চলছে। তাতে ভয় বাড়ছে। অথচ বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, এই রকমের সংকটকালে সবথেকে জরুরি যা তা হল মাথা ঠান্ডা রেখে পরিস্থিতি বুঝে নিজের কর্তব্য কী, তা বুঝে নেওয়া।
যেমন, বলা হয় এই সংকটকালে অযথা আতঙ্কের ছবি বা পোস্ট নিয়ে বেশি মাথা না ঘামানোই ভাল। তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে। বাড়তে থাকে স্ট্রেস, এমনকি হতে পারে প্যানিক অ্যাটাকও। সেক্ষেত্রে এমন কিছু প্রয়োজন যা আপনার মানসিক স্বাস্থ্যকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে। এই সময় তাই, নিজের যত্ন নিতে হবে। ভাল রাখতে হবে পরিবারের সকলকেও। নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। অফিসের কাজ তো আছেই, পাশাপাশি ভাল বই পড়ুন, সিনেমা দেখুন। প্রতিদিনের রুটিনে অবশ্যই থাকুক ব্যায়াম। এতে আপনার শরীরও ভাল থাকবে, চনমনে থাকবে মনও।
আরও শুনুন: সংক্রমণ রুখতে কোন ধরনের মাস্ক সবথেকে কার্যকরী? জেনে রাখুন খুঁটিনাটি
সোশ্যাল মিডিয়া অবশ্যই একটা জরুরি মাধ্যম। তবে সেখানে দিনের কতটা সময় কাটাবেন, তা মেপে নেওয়াই ভাল। কেননা ভালর পাশাপাশি এর কিছু মন্দ দিকও থাকে। আমরা জানি, সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে থাকা সব তথু সবসময় সত্যি হয় না। তাই যা চোখে পড়ছে, তার সবটাই যে খাঁটি খবর, তা সবসময় না-ও হতে পারে। তাই দুশ্চিন্তা করার আগে সে সব যাচাই করে নিতে ভুলবেন না।
শারীরিক দূরত্ব অবশ্যই বজায় রাখতে হবে, কিন্তু আত্মীয় বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ, কথাবার্তা যেন বন্ধ না হয়। ভারচুয়াল মাধ্যমের তো অভাব নেই আজকের দুনিয়ায়। এই যোগাযোগ আপনাকে অনেক বেশি মানসিক শক্তি জোগাবে। এর পাশাপাশি শরীরকে ভাল রাখতে স্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়ার উপর নজর দিন। ইমিউনিটি বজায় রাখতে যে সব খাবারদাবার রোজকার মেনুতে রাখা জরুরি, সেগুলো বাদ দেবেন না। কোনও ভাবে শারীরিক বা মানসিক ভাবে দুর্বল লাগলে তা কাছের মানুষকে জানান।
আরও শুনুন: নতুন বছরেও সঙ্গী করোনার ভয়, তাহলে ডিপ্রেশনকে দূরে রাখবেন কীভাবে?
এ তো গেল নিজের কথা। এ দিকে, বিধিনিষেধের ঘেরাটোপে হাঁপিয়ে উঠেতে পারে বাড়ির খুদে সদস্যেরাও। ছোট বলে ওদের অনুভূতি বা ভাবনাকে গুরুত্ব না দিলে, তা কিন্তু আখেরে ওদেরই ক্ষতিই করবে। ওদের কথা শুনুন, বুঝুন এবং সঙ্গ দিন। ভার্চুয়াল মাধ্যমে হলেও ওদের বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে মিশতে দিন। সব কিছুরই তো ভাল, মন্দ দুটো দিক থাকে। ভালগুলোকে চিনতে শেখান ওদের। পাশাপাশি করোনার সতর্কতা নিয়েও ওদের সচেতন করুন নিয়মিত।
বাচ্চাদের ক্ষেত্রে যেমন বেশি যত্নের প্রয়োজন, বাড়ির বয়স্কদের ক্ষেত্রেও কিন্তু ব্যাপারটি একইরকম ভাবে প্রযোজ্য। অতিমারি এবং তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলা প্রযুক্তির ব্যবহার, সবটাই কিন্তু ওদের কাছে ভীষণ রকম নতুন। ফলে তাঁরা নিজেরাই একটা সমস্যার মধ্যে থাকেন। সেক্ষেত্রে ধৈর্য না হারিয়ে ওঁদের মতো করে ওঁদের সমস্যাগুলো বুঝুন, কথা বলে সেসব সমাধানের চেষ্টা করুন। খুদে হোক বা বৃদ্ধ, পরিবারের সঙ্গে ভাল সময় কাটানোর চেষ্টা করুন।
করোনা চোখরাঙানি, কড়া বিধিনিষেধ- মানসিক স্বাস্থ্যের উপর কিন্তু সব কিছুরই একটা দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব আছে। করোনা রুখতে সতর্কতা যেমন নেবেন, তেমনই মন ভাল রাখা কিন্তু ভীষণই জরুরি। মনে রাখা ভাল, নিজেকে ও পরিবারকে ভাল রাখার চাবিকাঠি কিন্তু রয়েছে আপনারই হাতে। সেই সঙ্গে আপনার পরিচিত বৃত্তের মানুষকেও ভাল রাখতে পারেন আপনি। তাই ভয় পাওয়া বা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে বড় বিপদ ডেকে আনার থেকে বরং নিজে সচেতন থাকুন। অন্যকে সচেতন রাখুন। তাহলেই এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুলে যাবে আমাদের সামনে।