থাইরয়েডজনিত সমস্যায় ভোগেন পৃথিবীর অন্তত ১২ শতাংশ মানুষ। বিশেষ করে মহিলারা। বা বলা ভাল, মহিলাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা আরও অনেক শারীরিক সমস্যার রাস্তা খুলে দেয়, বা সমস্যাগুলিকে বাড়িয়ে দেয়। সুতরাং এ বিষয়ে আগেভাগেই সতর্ক থাকা দরকার, যাতে সমস্যা বেড়ে যাওয়ার আগেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শুরু করা যায়। কিন্তু শরীরে যে থাইরয়েডজনিত কোনও সমস্যা হচ্ছে, কী করে বুঝবেন সে কথা?
অনেকেই বলে থাকেন, আমার থাইরয়েড আছে। কিন্তু কথা হল, থাইরয়েড আমাদের সকলের শরীরেই থাকে। মানবদেহে থাকা থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয় শরীরের পক্ষে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় থাইরয়েড হরমোন। যা বিপাকের ক্ষেত্রে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশের গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সমস্যা হয়, যখন সেই নিঃসরণের মাত্রা প্রয়োজনের তুলনায় কম বা বেশি হয়ে পড়ে। আর তখনই দেখা দেয় বিভিন্ন সমস্যা।
আরও শুনুন: রাত জাগার কারণে দিনভর ক্লান্ত লাগে! নিজেকে তরতাজা রাখবেন কীভাবে?
এর সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হচ্ছে ক্লান্তি। এখন অধিকাংশ মানুষ যেমন ব্যস্ত রুটিনে অভ্যস্ত, তাতে কাজের কারণে ক্লান্তি আসতেই পারে। কিন্তু আপনি যদি প্রায়ই অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব করেন, তাহলে তা থাইরয়েডজনিত সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। এই ক্লান্তি কেবল শারীরিক নয়, মানসিকও। মনোযোগ দিতে না পারা, বা সহজেই কোন কথা ভুলে যাওয়া, এগুলি থাইরয়েডঘটিত সমস্যার ক্ষেত্রে অত্যন্ত পরিচিত লক্ষণ। আর কেবল ক্লান্তি নয়, আসতে পারে অবসন্নতাও। বিভিন্ন সমীক্ষা জানিয়েছে, যাঁরা থাইরয়েডের সমস্যায় ভুগছেন, অবসাদের কবলে পড়েন তাঁদের মধ্যে অনেকেই।
আরেকটি লক্ষণ হল হঠাৎ ওজন বেড়ে যাওয়া। শরীরের বিপাকের মাত্রা যদি কমে যায় বা বেড়ে যায়, তাহলে তার ছাপ আপনার ওজনে পড়তে বাধ্য। আবার বিপাকের সমস্যার কারণেই আপনার পেশি এবং জয়েন্টে ক্ষয় হতে পারে। ফলে হাতে পায়ের গাঁটে গাঁটে ব্যথা হতে পারে।
চুলের গোড়া দুর্বল হয়ে যাওয়ার জন্য অনেক ক্ষেত্রেই দায়ী থাইরয়েডজনিত সমস্যা। এর ফলে চুল পড়া বেড়ে যেতে পারে।
আরও শুনুন: বড় অসুখ বাসা বেঁধেছে শরীরে! জিভ দেখেই বোঝা যায় অসুখের বহর
থাইরয়েডজনিত সমস্যার কারণে ঠান্ডা লেগে যায় খুব সহজেই। আসলে থাইরয়েড হরমোনের মাত্রায় গোলমাল হলে শরীর যথেষ্ট পরিমাণে ক্যালরি ঝরানোর বদলে তা সঞ্চয় করে রাখে। সেক্ষেত্রে বেশি শীত না পড়লেও ঠান্ডা লাগে।
মহিলাদের ক্ষেত্রে আরেকটি বড়সড় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে থাইরয়েড হরমোনের অনিয়ন্ত্রিত নিঃসরণ। শরীরের অন্যান্য হরমোনের সঙ্গে থাইরয়েড হরমোনের সম্পর্ক থাকায়, সেই হরমোনের বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া অন্যান্য হরমোনের কার্যকারিতাকেও প্রভাবিত করতে পারে। মহিলাদের ক্ষেত্রে যার প্রভাব পড়ে পিরিয়ডসের ক্ষেত্রে। তা অনিয়মিত হয়ে যেতে পারে। শুধু তাই নয়, পরিমাণেও হেরফের ঘটতে পারে।
বুঝতেই পারছেন, আপনার শরীরে থাইরয়েডঘটিত সমস্যা হলে তার ওয়ার্নিং-ও আসতে থাকবে বিভিন্ন দিক দিয়ে। যাতে তা বোঝা যায়, সেইজন্যই মনে রাখুন এই লক্ষণগুলি। শরীর কিংবা মনে এই ধরনের সমস্যা হলে দ্রুত পরামর্শ নিন চিকিৎসকের। জানেন তো, রোগ ছড়িয়ে পড়ার আগেই তা সারিয়ে ফেলা উচিত।