প্যারিস অলিম্পিকে চতুর্থ স্থানে শেষ করার পর মীরাবাই চানু বলেছিলেন, ইভেন্টের সময়ই পিরিয়ডস চলছিল তাঁর। ফর্ম খানিক পড়ে যাওয়ার কারণ হয়তো সেই শারীরিক পরিস্থিতিই। সত্যিই কি ঋতুচক্রের দরুন ক্ষতিগ্রস্ত হন মহিলা অ্যাথলিটরা? কীভাবে? শুনে নেওয়া যাক।
ঋতুচক্র, নারীশরীরের স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। তবে সেই স্বাভাবিক প্রক্রিয়াও মেয়েদের স্বাভাবিক কাজকর্ম খানিক থমকেই দেয় সে সময়ে। শরীরের মধ্যে নিয়ত রক্তক্ষরণ নিয়ে ভারী কাজ করা যেমন সমস্যার, তেমনই এই সূত্রে আসে ক্লান্তি আর মুড সুইং। এই অবস্থা মহিলা অ্যাথলিটদের ক্ষেত্রে কীভাবে প্রভাব ফেলে? ঋতুচক্রের দরুন কি ক্ষতিগ্রস্ত হন মহিলা অ্যাথলিটরা?
২০১২-র লন্ডন অলিম্পিক্সে বক্সিং-এর ৫১ কেজি বিভাগের সেমিফাইনালে পৌঁছে মেডেল নিশ্চিত করেছিলেন মেরি কম। তবে কেবল উলটোদিকে কঠিন প্রতিযোগীর মোকাবিলাই করতে হয়নি তাঁকে, মোকাবিলা করতে হয়েছিল নিজের শরীরের সঙ্গেও। কেন-না সেমিফাইনালের আগের দিনই পিরিয়ডস শুরু হয়েছিল তাঁর। বাউটের দিন ছিল তাঁর ঋতুচক্রের দু’নম্বর দিন। স্বাভাবিকভাবেই সেদিন পেশি খানিক ক্লান্ত হয়ে পড়বে। গোটা শরীর স্বাভাবিক গতি আর ছন্দ পাবে না। এই অবস্থাতেই লড়াই করতে হয়েছিল তাঁকে। সেমিফাইনালে হেরে শেষমেশ ব্রোঞ্জ পেয়েছিলেন মেরি কম। সদ্য শেষ হওয়া প্যারিস অলিম্পিক্সের ক্ষেত্রেও একই পরিস্থিতিতে পড়েছিলেন মীরাবাই চানু। পদক-পাওয়া মেয়ের দিকে আশায় আশায় তাকিয়ে ছিল গোটা দেশ। তবে চার নম্বরে শেষ করেন চানু। তিনিও পরে জানান, পিরিয়ডস নিয়েই ভারোত্তোলনের মঞ্চে নেমেছিলেন তিনি। মাত্র এক কিলোগ্রামের জন্য ছিটকে যান পদকের দৌড় থেকে।
পিরিয়ডসকে হিসাবে ধরেই অনুশীলন চালান মহিলা অ্যাথলিটরা। শরীরকেও বেঁধে নেন সেই অনুযায়ী। কিন্তু তারপরেও সবকিছু তো হাতে থাকে না। অনেকসময়ই ঋতুচক্রের দিন এগিয়ে পিছিয়ে যায়। আর হরমোনের ওষুধ খেয়ে সেই দিন নিয়ন্ত্রণ করাও সম্ভব হয় না, যেহেতু অ্যাথলিটদের হিসেব মেনেই ডায়েট ও ওষুধের চার্ট মানতে হয়। ফলে ওই অবস্থাতেই প্রতিযোগিতায় নামতে হয় মহিলা অ্যাথলিটদের। পিরিয়ডসের সময় পেট-তলপেট-পায়ের পেশি স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে না। জরায়ুকে ঋতুচক্রের জন্য প্রস্তুত করতে ইউটেরাইন মাসল সঙ্কুচিত হয়। উপরন্তু এই সময়ে অনেক মহিলাই তলপেটে ক্র্যাম্প বা যন্ত্রণা সহ্য করেন। এই অবস্থায় শারীরিক কসরতের কাজ সহজ নয়। তবে সেইসব প্রতিকূলতা নিয়েই লড়ছেন মীরাবাই-মেরি কমরা।