প্রবল দাবদাহে হিট স্ট্রোকে প্রাণহানির ঘটনা ঘটছেই। তার মধ্যেই শোনা গেল নয়া আশঙ্কার কথা। গরমের জ্বালায় ঘুম হচ্ছেই না বলে যে হাহুতাশ করছেন, তাতেই নাকি বাড়তে পারে হৃদরোগের ঝুঁকি! আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
গরমের দাবদাহে বাড়ছে হিট স্ট্রোকের আশঙ্কা। দেশজুড়ে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। যাঁরা সুস্থ, তাঁদেরও কিন্তু প্রাণ ওষ্ঠাগত। শুয়ে বসে কোনোভাবেই যেন শান্তি মেলে না। রাতে ঘুমেরও দফারফা। কিন্তু কম ঘুমের দরুন যে আরও বড় বিপদ ঘনিয়ে উঠতে পারে, সে কথা জানেন কি? সম্প্রতি সে বিষয়েই সতর্ক করলেন গবেষকেরা। দিনে কতখানি ঘুমোনো প্রয়োজন তার সময়সীমা বেঁধে দিয়ে তাঁরা জানালেন, অন্যথায় বাড়তে পারে হৃদরোগ বা স্ট্রোকের ঝুঁকি।
আরও শুনুন:
বিদেশে নিষিদ্ধ দেশের নামী সংস্থার গুঁড়ো মশলা, দেশবাসীর চোখ খুলবে কি?
আসলে কোনও যন্ত্রই তো লাগাতার কাজ করতে পারে না। তার বিশ্রামের প্রয়োজন পড়ে। মানুষের শরীরের ক্ষেত্রে সেই বিশ্রামের নাম ঘুম। সারা দিন ধরে আমাদের শরীরে যত ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়, তার মেরামতি চলে ঘুমের মধ্যে। এদিকে ইদানীং পেশাগত কারণে বেশির ভাগ মানুষই রাতে টানা ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা ঘুমোতে পারেন না। রাত জেগে কাজ করতে হয় বলে অনেকেই দিনের বেলা ঘুমিয়ে সেই ঘাটতি পূরণ করেন। গবেষকেরা বলছেন, কোভিড পরবর্তী সময়ে সেই প্রবণতা আরও বেড়ে গিয়েছে। মানুষের ঘুম থেকে ওঠা বা ঘুমোতে যাওয়ার যে স্বাভাবিক সময়, তা একেবারে বদলে গিয়েছে। একে ‘সার্কাডিয়ান রিদ্ম ডিজঅর্ডার’ বা শিফ্ট ওয়ার্ক ডিজঅর্ডার বলে চিহ্নিত করছেন তাঁরা। তার উপরে আবহাওয়ার খামখেয়াল তো রয়েছেই। গ্রীষ্মের অগ্নিবাণে শান্তির ঘুমটুকু বিদায় নেওয়ার পথে, বলছেন অনেকেই।
কিন্তু গবেষকেরা বলছেন, ঘুমের এই চরিত্রগত বদলে বাড়ছে হৃদরোগ বা স্ট্রোকের ঝুঁকি। আর অন্যান্য রোগের পাশাপাশি, ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বাড়িয়ে তুলছে এই অভ্যাস। ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ ক্যানসার’ জানাচ্ছে, দীর্ঘ দিন ধরে যদি ৬ ঘণ্টার কম সময় ঘুমোন, তা হলে ৬০ শতাংশ পুরুষদের মধ্যে প্রস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যেতে পারে। ৫৫ শতাংশেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হতে পারেন ফুসফুসের ক্যানসারে। অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারেন ৪০ শতাংশ মানুষ। আবার ক্যানসার এপিডেমোলজির সূত্র বলছে, দিনে ৬ ঘণ্টার কম ঘুম হলে মহিলাদের মধ্যে ডিম্বাশয়ের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যেতে পারে ৩০ শতাংশ। ৫০ শতাংশের হতে পারে মলাশয়ের ক্যানসার। ২৫ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যেতে পারে। বিশেষ করে ইদানীং কালে হৃদরোগের প্রবণতা রীতিমতো বেড়েছে। কমবয়সিদেরও আর রেয়াত করছে না এই ব্যারাম। তাই শরীরের ঘড়ি মেপে চলা প্রয়োজন বইকি। কার্ডিওভাস্কুলার হেলথ ভালো রাখার তাগিদেই পর্যাপ্ত ঘুম জরুরি, মনে করাচ্ছেন গবেষকেরা।
আরও শুনুন:
খালি মনে হচ্ছে মোটা হয়ে যাচ্ছেন! মনের ভুল, নাকি নেপথ্যে কোনও ট্রমা?
আর এই প্রেক্ষিতেই দিনের ২৪ ঘণ্টা সময়কে ভাগ করে দিচ্ছেন গবেষকেরা। সুস্থতা বজায় রাখতে কোন শারীরবৃত্তীয় কাজ কতটা সময় ধরে করা দরকার, সে কথাই বলছেন তাঁরা। শরীর দাঁড়িয়ে আছে, বসে বা শুয়ে আছে, বা পরিশ্রম করছে, এই প্রাথমিক অবস্থানগুলির নিরিখেই ওই মাপকাঠি স্থির হয়েছে। একটি দিনকে একটি বৃত্ত ধরে নিলে, সেখানে কমবেশি ৬ ঘণ্টা বসে কাজ ও ৫ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে কাজ করা যেতে পারে। আর ঘুমের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে প্রায় ৮ ঘণ্টা। হালকা পরিশ্রম ও মাঝারি বা ভারী পরিশ্রমের জন্য বরাদ্দ গড়ে মোটামুটি ২ ঘণ্টা করে। হালকা কাজ বলতে হতে পারে বাড়িতে বা অফিসে পায়চারিও, যেখানে মিনিটে ১০০ পা-এর কম হাঁটছেন আপনি। একটানা বসে না থেকে মাঝে ৩ থেকে ৫ মিনিটের এমন হালকা শ্রম বিপাক হার বাড়ায়। আবার মিনিটে ১০০ পা-এর বেশি হাঁটলে যে শ্রম হয়, সেই শ্রমের সমান কাজ করলে তাকে ভারী কাজ বলা যাবে। কাজ আর ঘুম, দুয়ের যথাযথ মেলবন্ধনেই শরীর সুস্থ থাকে, এ কথা তো জানাই। তবে হৃদরোগ যেভাবে আজকাল ঘরে ঘরে কড়া নাড়ছে, সেই প্রেক্ষিতেই এ কথা ফের মনে করিয়ে দিলেন গবেষকেরা।