অনেকেই বলে থাকেন, বাড়ির বাইরে বেরনোর সময় পকেটে বা সঙ্গে পিঁয়াজ রাখলে নাকি গরম অনেক কম লাগে। কেননা বডি-হিট কমিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা আছে পিঁয়াজের। কিন্তু সত্যিই কি তা হতে পারে! তাহলে তো সকলেই গরমের হাত থেকে বাঁচতে পিঁয়াজকেই বেছে নিতেন। অতএব প্রশ্ন ওঠে, এ কি শুধু কথার কথা অর্থাৎ মিথ? নাকি এর নেপথ্যে কিছু সত্যিও আছে? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
খাবার-দাবারের সঙ্গে তো বটেই, গরমকালে সঙ্গে পিঁয়াজ রাখলেও নাকি বেজায় উপকার। শোনা যায় প্রবীণরা নাকি বলে থাকেন, পকেটে পিঁয়াজ রাখলে তাপের উপদ্রব এমনকী হিটস্ট্রোক থেকেও বাঁচা যায়। কিন্তু এই কথার কি কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে? এই প্রশ্নের সামনে থমকেই দাঁড়াতে হয়। কেননা শুধু পিঁয়াজ পকেটে রাখলেই যে হিটস্ট্রোক থেকে বাঁচা যাবে, এরকম কথা বিজ্ঞান সমর্থন করে না। অর্থাৎ এ হল একধরনের মিথ। তবু প্রশ্ন হল, প্রবীণরা যে গরমের সঙ্গে লড়তে পিঁয়াজকে হাতিয়ার করেছেন, সে কি এমনি এমনি? আমরা জানি, জনজীবনে যে সব অভ্যাস থাকে, তা দীর্ঘ পরীক্ষারই ফল। মানুষ প্রতিদিনের যাপনে যা লক্ষ করেছে, সেই পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতেই কোনও একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে। দেখা যায়, যে সব জায়গায় বেজায় গরম পড়ে, সেখানকার বাসিন্দাদের খাবারের পাতে পিঁয়াজ থাকেই থাকে। কোনও কার্যকারণ না থাকলে এরকম খাদ্যাভ্যাস নিশ্চয়ই গড়ে উঠত না। তাহলে, প্রাচীনকাল থেকেই যে পিঁয়াজকে গরমে স্বস্তিদায়ক হিসাবে ভাবা হয়েছে, তার কিছু ভিত্তিও আছে।
আরও শুনুন: গরমে রোদের তেজে ঝলসে যাচ্ছে ত্বক! ঘরোয়া উপায়ে পোড়া দাগ তুলবেন কীভাবে?
কেউ কেউ বলে থাকেন, পিঁয়াজের রস শরীরের তাপমাত্রা কমাতে ব্যবহৃত হয়। তবে তা প্রস্তুতির নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে, নইলে তা কার্যকরী হবে না। ত্বকের জ্বালা-পোড়া ভাব কমানোর জন্য অনেক সময় এই রস প্রয়োগ করা হয়। পিঁয়াজে থাকা হিস্টামাইন এক্ষেত্রে ম্যাজিকের মতো কাজ করে। এ ছাড়া অন্যান্য গুণাগুণের দিক থেকেও পিঁয়াজ অন্যান্য সময়ে তো বটেই, এই গরমের সময় বেশ উপকারী। পিঁয়াজে প্রচুর পরিমাণে থাকে ভিটামিন খনিজ এবং উদ্ভিজ্জ রাসায়নিক, যা এই গ্রীষ্মে আমাদের প্রয়োজনীয়। গরমের সময় তাই কাঁচা পিঁয়াজ মেনুতে রাখার পরামর্শই দেন বিশেষজ্ঞরা। রোগ প্রতিরোধ বাড়ানোর ক্ষেত্রে পিঁয়াজের ভূমিকা আছে। অর্থাৎ ইমিউনিটি বুস্টার হিসাবে পিঁয়াজ বেশ কদরেরই জনিস। গরমের সময় নানারকম সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে, যা রুখে দিতে পারে পিঁয়াজ। পতঙ্গবাহিত অসুখ এবং ত্বকে র্যাশের সমস্যা নিরাময়েও উপকারী পিঁয়াজ। এই গরমে হজমের সমস্যা লেগেই থাকে, সেই হজম ক্ষমতা বাড়াতেও এটি সাহয্য করে। যে কোনও খাবারের সঙ্গে স্যালাড হিসাবে সেই কারণেই কাঁচা পিঁয়াজ রাখা হয়। যে ব্যাড কোলেস্টেরলের কারণে হার্টের সমস্যা দেখা দেয়, তাও প্রতিরোধে সহয়াক পিঁয়াজ। অর্থাৎ খেয়াল করলে দেখা যাবে, গরমকালের একাধিক শারীরিক সমস্যার প্রতিষেধক হিসাবে পিঁয়াজকে ব্যবহার করা যেতে পারে। সেই কারণেই গরমের খাবার হিসাবে বহুকাল ধরেই পিঁয়াজকে পাতে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মানুষ।
আরও শুনুন: তেলের দামে লাগছে ছেঁকা! অল্প তেলেও দিব্যি হয় রান্না, রইল সাশ্রয়ের উপায়
তবে পিঁয়াজ সঙ্গে রাখলেই যে হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচা যাবে, এমন কথা বৈজ্ঞানিক ভাবে সত্য নয়। তীব্র দাবদাহের সময় নানা ভাবে সতর্ক থাকতে হবে। সেই সঙ্গে এটাও মাথায় রাখতে হবে যে, সকলের শরীর একরকম নয়। একজনের ক্ষেত্রে যা কার্যকরী, অন্যজনের ক্ষেত্রে তা না-ও হতে পারে। ফলে, যে কোনও সমস্যায় বিশেষজ্ঞের পরামর্শই শিরোধার্য। তবে সাধারণ কিছু গুণাগুণ থাকে, যা এক একটি খাদ্যবস্তুকে একটা নির্দিষ্ট মরশুমের জন্য উপযোগী করে তোলে। সেই হিসাবে গরমের সময় কাঁচা পিঁয়াজ খাওয়া যেতেই পারে। তাতে উপকার বই অপকার হবে না।