কেউ স্নান করতেন গাধার দুধে, কেউ আবার চুল শুকোতেন ধূপের ধোঁয়ায়। হ্যাঁ, রূপচর্চায় অনেককেই টেক্কা দিতে পারতেন সেকালের নারীরা। সালোঁ ট্রিটমেন্ট নয়, নানারকম নিজস্ব টোটকাতেই ত্বকের যত্ন নিতেন তাঁরা। জানেন কি, ঠিক কী কী জিনিস ব্যবহার করে ফিরত ত্বকের জেল্লা? শুনে নেওয়া যাক।
পুজো মানেই সাজো সাজো রব। কিন্তু কেবল মণ্ডপই কি সাজবে? মানুষেরও তো এখন সেজে ওঠারই পালা। কিন্তু পুজোর ভিড়ে সালোঁ কিংবা পার্লারে জায়গা পাওয়াই মুশকিল। আর ঠিক সেই সময়েই আপনার মুশকিল আসান হতে পারে পুরোনো দিনের রূপচর্চার দাওয়াই। আজ্ঞে হ্যাঁ, রূপচর্চা করার ব্যাপারে আদৌ পিছিয়ে ছিলেন না সেকালের নারীরা। নামীদামি পণ্য ছাড়াও ত্বকের জেল্লা ফেরাতে পারেন পুরনো আমলের সেইসব টোটকাতেই।
আরও শুনুন: সাবধানতাতেই মোকাবিলা ডেঙ্গুর, রোজের খাবারে কোন কোন জিনিস অবশ্যই রাখবেন?
শোনা যায়, রানি ক্লিওপেট্রা নাকি স্নান করতেন গাধার দুধে। তাঁর অমিত রূপযৌবনের রহস্য নাকি লুকিয়ে ছিল ওতেই। প্রাচীন ভারতেও হামেশাই রানিদের দুধ বা গোলাপজলে স্নান করার কথা শোনা যায়। তারপর একরাশ ভেজা চুল তাঁরা শুকোতেন ধূপের ধোঁয়ায়। আপনারও যদি লম্বা আর ঘন চুলের শখ থাকে, তাহলে ব্যবহার করতে পারেন আমলা, রিঠা, শিকাকাই কিংবা জবাকুসুম।
বেসন গোলা থেকে হলুদ বাটা, চন্দন থেকে মধু, রূপচর্চার জগতে প্রাচীন পদ্ধতির বিকল্প নেই। গ্রিকরা এবং রোমানরা রূপচর্চার উপাদান তৈরি করতে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করত। তারা ময়শ্চারাইজার হিসাবে জলপাই তেল, প্রাকৃতিক এক্সফোলিয়েন্ট হিসাবে মধু এবং ত্বক পরিষ্কার এবং ডিটক্সিফাই করার জন্য কাদামাটি ব্যবহার করেছিল। সঙ্গে থাকত ক্যামোমাইল বা ল্যাভেন্ডারের মতো ভেষজ। আবার প্রাচীন চিনে, বিশেষ করে চেন বংশের রাজত্বকালে রূপচর্চায় ডিমের ব্যবহার বহুল প্রচলিত ছিল। ডিমের সাদা অংশটা মুখে আর গলায় মাখতেন চিনা মেয়েরা, শুকিয়ে টান ধরলে ধুয়ে ফেলতেন। এমনটা কিন্তু অনায়াসেই করতে পারেন আপনিও। ডিমের প্রোটিন ত্বকে আর্দ্রতা ও পুষ্টি জোগায়। তাই এভাবে ডিম মাখলে ত্বক টানটান, সতেজ হয়। ক্লিওপেট্রার মতো গাধার দুধে স্নান করার দরকার নেই, কিন্তু দুধ, মধু আর অলিভ অয়েল মিশিয়ে আপনিও তৈরি করে নিতে পারেন আপনার নিজস্ব রূপটান! তা ছাড়া রোমছিদ্র বন্ধ করে ত্বক টানটান করতে, মুখ থেকে বয়সের ছাপ ও বলিরেখা দূর করতে গোলাপজল খুবই কাজের। ঘরোয়া উপায়ে চটজলদি মুখে ঔজ্জল্য আনতে জবা ফুলের গুঁড়োর সঙ্গে এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়েও ব্যবহার করতে পারেন।
আবার ধরুন, বয়সের ছাপ সবার আগে আপনার হাতের উপর পড়ে। কারণ হাত সারাক্ষণ অনাবৃত থাকে, সমস্ত কাজকর্মের ঝক্কিও হাতের উপর দিয়েই যায়। সে কথা জানতেন রানি মেরি আঁতোয়ানেত, তাই ঘুমোনোর সময় মোমের আস্তরণ দেওয়া গ্লাভস পরে নিতেন। মোমের আস্তরে মেশানো থাকত সুইট আমন্ড অয়েল আর গোলাপজল। সারা রাত হাতের ত্বকে আর্দ্রতা জোগাত সেই গ্লাভস, সারা দিন ধরে হাত থাকত পেলব, নরম। কী ভাবছেন, আজকের দিনে এমন একটা গ্লাভস জোগাড় করা মুশকিল? বরং সরাসরি আমন্ড অয়েলে কয়েক ফোঁটা গোলাপজল মিশিয়ে নিন, তারপর শোয়ার আগে হাতে ভালো করে মেখে নিন।
আরও শুনুন: ভুল নির্বাচনে হতে পারে সমস্যা, কী দেখে চিনবেন আপনার উপযুক্ত গর্ভনিরোধক?
তবে হ্যাঁ, মনে রাখতে হবে, রূপচর্চা করার আগে শরীরকেও সুস্থ আর সুঠাম রাখা জরুরি। পুরনো দিনের রূপচর্চার কায়দা মাথার চুল থেকে পায়ের নখে জেল্লা ফিরিয়ে আনতে পারেন ঠিকই, তবে তার আগে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল, মরসুমি ফলের রস, অঙ্কুরিত ছোলা, সবুজ টাটকা সবজি ইত্যাদি সুষম পথ্য খাদ্যের তালিকায় রাখুন। শরীরের নিজস্ব লাবণ্যই অনেকখানি সুন্দর করে তুলবে আপনাকে। আর সাজের আসল রহস্য কিন্তু লুকিয়ে আছে মনেই। তাই কেবল বাইরেটাকে সাজালেই হবে না, রূপচর্চার জন্য মন ভালো রাখাও কিন্তু সমান জরুরি।