টেস্টে বেস্ট নাকি সে-ই। এই দাবিতেই দেশের বাজার ছেয়েছে এই নামী সংস্থার গুঁড়ো মশলা। অথচ সম্প্রতি বিদেশের একাধিক জায়গায় নিষিদ্ধ করা হল সেই মশলাই। কী খাচ্ছেন, তা নিয়ে দেশবাসী কি আদৌ সচেতন? শুনে নেওয়া যাক।
বিজ্ঞাপন যা বলে, তা-ই নির্ভেজাল সত্য। ভেজালের যুগেও মানুষের এ বিশ্বাসে চিড় ধরেনি। তাই বিজ্ঞাপন যাকে ‘বেস্ট’ বলছে, তার দলে নাম না লিখিয়ে জনতার উপায় কী! এদিকে বিজ্ঞাপন যা বলছে, বিজ্ঞান আবার সে কথা বলছে না। দিনকয়েক আগেই হেলথ ড্রিংক আর ফুড সাপ্লিমেন্টের বেলায় এই দ্বন্দ্ব দেখা গিয়েছিল, এবার ফের টান পড়ল সেই খাবারের দুনিয়াতেই। ক্ষতিকর রাসায়নিক রয়েছে, এই যুক্তিতে একটি নামী ব্র্যান্ডের গুঁড়ো মশলাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হল একাধিক দেশে। হ্যাঁ, প্রথমে সিঙ্গাপুর, তারপর হংকং, দু’জায়গাতেই জোর ধাক্কা খেল ভারতের এই সংস্থাটি। এই সংস্থার মশলা রান্নায় ব্যবহার করলেই নাকি স্বাদ হবে সবার সেরা, বরাবরই জোর গলায় এ ঘোষণা করে এসেছে তারা। পত্রিকা থেকে টিভির পর্দা, খবরের কাগজ থেকে রাস্তার হোর্ডিং, সর্বত্রই বড় বড় অক্ষরে জ্বলজ্বল করেছে এ দাবি। সে কথা বিশ্বাস করেছেন দেশবাসীও। কিন্তু স্বাদ বাড়াক বা না বাড়াক, শরীরে ক্ষতির পরিমাণ যে রীতিমতোই বাড়িয়ে দিতে পারে এই মশলা, সম্প্রতি সে কথা সাফ জানিয়ে দিল বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা। হংকং অবশ্য শুধু এই একটি সংস্থাকেই নয়, তার সঙ্গে নিষিদ্ধ করেছে আরও একটি নামী সংস্থার মশলাও।
আরও শুনুন:
দুধে-ভাতে নয়, সন্তান যেন থাকে সেরেল্যাক-বোর্নভিটায়! প্রার্থনা বদলাল, লাভ হল কি?
দুই দেশেরই খাদ্যসুরক্ষা দপ্তর পরীক্ষানিরীক্ষা করে জানিয়েছে, এই মশলায় ইথিলিন অক্সাইডের পরিমাণ অনেক বেশি, যা আদতে একটি কীটনাশক। বলাই বাহুল্য যে, তা মানুষের ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত নয় তো বটেই, উপরন্তু বিপজ্জনকও। সিঙ্গাপুর আগেই একটি সংস্থার মাছ রান্নার মশলা নিয়ে আপত্তি তুলেছিল, এবার অন্য সংস্থার আরও তিন মশলা নিয়েও একই কথা জানাল হংকং। সত্যি বলতে, এমন অভিযোগ যে এই প্রথম উঠল তাও নয়। ২০২৩ সালেও মার্কিন খাদ্য সুরক্ষা দপ্তর প্রথম সংস্থার খাদ্যপণ্য নিয়ে একইভাবে অভিযোগ এনেছিল। যদিও, ফের অভিযোগ ওঠার পরেও, এখনও পিছু হটতে নারাজ সংস্থা।
আরও শুনুন:
ঘুম নেই ভারতীয়দের চোখে! কিন্তু কেন?
পুঁজির দুনিয়ায় আসলে সবই বাজারের পণ্য হয়ে যায়। সে মানুষ হোক কিংবা মানুষের স্বাস্থ্য। মানুষ যা খাবে, তা সে যতটা ঠিক করে, তার চেয়েও বেশি করে সে সিদ্ধান্ত নেয় পুঁজি। বিজ্ঞাপনের পাখায় ভর করে সে মানুষের ঘরে ঢুকে পড়ে। বুঝিয়ে দেয়, কী না খেলে আসলে পিছিয়ে পড়তে হয়। আর পিছিয়ে থাকা শ্রেণির সদস্য হতে কে-ই বা চায়! তাই রমরমিয়ে বাজার বাড়ে কোনও বিশেষ খাবার, বিশেষ পণ্য, বিশেষ জিনিসের। তার কোয়ালিটি কন্ট্রোল হল কি হল না, সে প্রশ্নও ভেসে যায় বাজারের ঢেউয়ে। বিদেশের এই নিষেধ জারির দৌলতে এই পণ্যগুলির খবর সামনে এল বটে। কিন্তু এ দেশের মানুষেরা তাতে সচেতন হবেন কি?