মন যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ততটাই গুরুত্বপূর্ণ হল হরমোন। আর এই হরমোনের সামান্য খেয়ালখুশিতে যে শরীরে কী কী বদল ঘটে যেতে পারে, তা সবসময় ঠিকমতো আঁচ করাও যায় না। চেনা উপসর্গের আড়ালে বেড়ে চলে অন্য কোনও গুরুতর অসুখ। আসুন, চিনে নেওয়া যাক তেমনই এক সমস্যাকে।
হঠাৎ করেই দেখা দিয়েছে চুল পড়ার সমস্যা? চুল আঁচড়াতে গেলেই চিরুনিতে ঠাঁই করে নিচ্ছে গুছি গুছি চুল? এই শ্যাম্পু থেকে ওই কন্ডিশনার, ঘরোয়া টোটকা, বিভিন্ন উপায় পরখ করে চলেছেন, কিন্তু রেহাই মিলছে না সমস্যা থেকে। অথবা, আচমকা মুখের মসৃণ ভাব উধাও? এখানে ওখানে গজিয়ে উঠছে ব্রণ? ফেস প্যাক মাখবেন, নাকি ডায়েটে বদল আনবেন, ভাবনায় জেরবার। আচ্ছা, যদি এমনটা হয়ে থাকে যে, এগুলো আদতে কোনও সাধারণ চর্মরোগ নয়? বরং এ সব কিছুই কোনও বড়সড় সমস্যার ইঙ্গিত দিচ্ছে?
আরও শুনুন: সঙ্গে পিঁয়াজ রাখলে গরম কম লাগে! চলতি ধারণার নেপথ্যে আসল সত্যিটা কী?
আজ্ঞে হ্যাঁ। আপনার চুল কিংবা ত্বকের সমস্যা হয়ে থাকতেই পারে। কিন্তু জানেন কি, এইসব উপসর্গ হতে পারে পিসিওএস, তথা পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোমেরও লক্ষণ?
পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম, এই নামটি যতই ভারী হোক, এখন আর তা খুব একটা অচেনা নেই। অতিরিক্ত মানসিক চাপ, শরীরচর্চার অভাব, খাওয়াদাওয়ার অনিয়ম ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে অধিকাংশ মেয়েকেই ভুগতে হচ্ছে এই সমস্যায়। আর তার জেরে চলছে হরমোনের মাত্রার ওঠাপড়া। যার দরুন কখনও ওজন বাড়ে, কখনও ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। চর্মরোগ চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এসবের সঙ্গে যোগ দিয়েছে ত্বকের নানা সমস্যাও।
পিসিওএস হলে তার উপসর্গ হিসেবে কী কী ত্বকের সমস্যা দেখা দিতে পারে?
আরও শুনুন: গরমে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ফল কিংবা সবজি? ঘরেই বানিয়ে ফেলতে পারেন ফেসপ্যাক
বিশেষজ্ঞদের মতে, এর ফলে হতে পারে অ্যান্ড্রোজেনেটিক অ্যালোপেশিয়া, অর্থাৎ অত্যধিক চুল পড়ার সমস্যা। এমনকি টাক পড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও দেখা দিতে পারে। ছুঁচলো মুখওয়ালা ছোট ছোট ব্রণ, ডাক্তারি পরিভাষায় যার নাম অ্যাকনে ভালগারিস, তাদের আনাগোনা বাড়তে পারে সারা মুখ জুড়েই। এ ছাড়াও শরীরে দেখা দিতে পারে অত্যধিক রোম। এমনকি পুরুষদের মতো দাড়ি গোঁফের জায়গাতেও রোমের আধিক্য হতে পারে। আবার ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া, বিভিন্ন অংশে কালো ছোপ পড়ার মতো সমস্যাও দেখা দেয় এই অসুখের ফলে।
মুশকিল হল, এই উপসর্গগুলিকে আপাতদৃষ্টিতে চর্মরোগ বলেই ভুল করেন অনেকে। এর সঙ্গে যে আসলে জড়িয়ে রয়েছে হরমোনের ওঠাপড়া, সাধারণের পক্ষে তা চট করে বোঝা সম্ভব নয়। ফলে ডাক্তারের কাছে না গিয়ে রূপচর্চায় মন দেন অনেকেই। এদিকে ভিতরে ভিতরে রোগ আরও বাড়তে থাকে। পিসিওএস-এর ফলে ঋতুচক্র অনিয়মিত হতে পারে, বেড়ে যেতে পারে ওজন, এমনকি এই সমস্যা বিপদ ডেকে আনতে পারে সন্তানধারণের ক্ষেত্রেও। সুতরাং, এমন এক বা একাধিক উপসর্গ দেখা দিলে সচেতন হোন। রোগ বেড়ে ওঠার আগেই সারিয়ে ফেলা ভালো, তাই না?