ক্যানসারের মতো মারণরোগ শনাক্তকরণের বিভিন্ন পদ্ধতি উদ্ভাবনে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। অসুখটিকে আগেভাগে চিহ্নিত করতে পারলে, থাকে সুস্থ করে তোলার সম্ভাবনা। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যতক্ষণে রোগ ধরা পড়ে ততক্ষণে চিকিৎসকরা প্রায় অসহায় হয়ে যান। আর তাই ক্যানসার শনাক্তকরণে চলছে নানা গবেষণা। নয়া এক গবেষণা জানাচ্ছে, প্রস্রাবের গন্ধেই ক্যানসারের সম্ভাবনা বোঝা যেতে পারে, আর সেক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে পিঁপড়েরা। আসুন শুনে নিই এই গবেষণার কথা।
কোথাও এক টুকরো খাবারের কণা পড়ে আছে; কিংবা একটা চিনির দানা। কী করে যেন তার খবর পেয়ে যায় পিঁপড়ের দল। কোথা থেকে ঠিক এসে হাজির হয় তারা। পিঁপড়ের এই স্বাভাবিক গুণকেই এবার ক্যানসার শনাক্তকরণের কাজে লাগাতে চান বিজ্ঞানীরা।
আরও শুনুন: শীতকালে এত অসুখবিসুখ কেন? নাকেই লুকিয়ে যত রহস্য
শরীরে যদি ক্যানসার বাসা বাঁধে, তবে প্রস্রাবের গন্ধে তার আভাস মেলে। কেননা বডি ফ্লুইড অর্থাৎ ঘাম বা প্রস্রাবে তখন মিশে থাকে বেশ কিছু অন্য ধরনের রাসায়নিক। আর তার আলাদা ঘ্রাণও থাকে। না, সহজে তা ধরা যায় না বটে। তবে এক্ষেত্রেই কাজে লাগতে পারে পিঁপড়েদের। খুদে এই প্রাণীর নাক নেই ঠিকই, কিন্তু অ্যান্টেনা বা শুঁড়ের মাধ্যমেই ঘ্রাণ পায় তারা। এবং সেই শক্তি তাদের বেশ প্রখর। যে ঘ্রাণ পিঁপড়েরা পায়, তা সহজে অন্যের পক্ষে পাওয়া সম্ভব নয়। বিজ্ঞানীরা এই ক্ষমতাটিকেই কাজে লাগাতে চান মানবকল্যাণের স্বার্থে। বিজ্ঞানীদের দল ইঁদুর এবং পিঁপড়েদের উপর ইতিমধ্যেই একটি পরীক্ষা করেছেন। প্রথমে মানবদেহের ব্রেস্ট-ক্যানসারের টিউমার পরীক্ষামূলক ভাবে ইঁদুরের দেহে প্রতিস্থাপন করা হয়। এই ইঁদুরের প্রস্রাবের কয়েক বিন্দু পিঁপড়েদের সামনে রাখা হয়। টোপ হিসাবে একটু মিষ্টির রসও দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি ক্যানসার নেই এমন ইঁদুরের প্রস্রাবের বিন্দুও রাখা হয়েছিল। এবার বিশেষ প্রজাতির ৩৫টি পিঁপড়েকে আশেপাশে ছেড়ে দেওয়া হয়। দেখা যায়, ক্যানসার আক্রান্ত ইঁদুরের প্রস্রাবের কাছেই পিঁপড়েরা বেশি সময় ভিড় করেছে। অর্থাৎ ওই বিশেষ ঘ্রাণ শনাক্ত করতে পেরেছে তারা। এই পরীক্ষাটিই এবার বৃহত্তর ভাবে করতে চান বিজ্ঞানীরা। অর্থাৎ মানুষের প্রস্রাবের ক্ষেত্রেও পিঁপড়েরা এরকম সক্রিয় ভূমিকা নিতে পারে কিনা, তাই-ই দেখা হবে পরীক্ষা করে।
আরও শুনুন: গর্ভনিরোধক বড়ি খেলে মহিলাদের সম্পর্কে কী ভাবে পুরুষরা? জানাল সমীক্ষা
এর আগে কুকুরদের ঘ্রাণশক্তিকে কাজে লাগিয়েও ক্যানসার শনাক্তকরণের কাজ হয়েছে। বিজ্ঞানীদের দাবি, কুকুরকে প্রশিক্ষিত করতে বেশি সময় লাগবে। সেই তুলনায় অনেক কম সম্যেই পিঁপড়েদের দিয়ে এই কাজ করানো যাবে। প্রশিক্ষণের কথা ধরলেও অনেক কম সময়ই লাগবে। ফ্রান্সের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদলের এই কাজ যদি সফল হয়, তবে ক্যানসারের বায়ো-ডিটেক্টর হিসাবে অবশ্যই বড় ভূমিকা নিতে পারে পিঁপড়েরা।