অস্কারমঞ্চে উইলস্মিথের চড় নিয়ে তোলপাড় বিশ্ব। নীতিগত ভাবে ব্যাপারটি কতটা যথাযথ, এ নিয়ে ইতিমধ্যেই দ্বিধাবিভক্ত নেটদুনিয়া। এরই মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল উইলস্মিথের পুরনো একটি ভিডিও। যা দেখে নেটিজেনরা বলছেন, নিজের তির বুমেরাং হয়ে ফিরেছে উইলস্মিথের কাছেই। কী রয়েছে সেই ভিডিওটিতে? শুনে নিন।
‘কর্মা ব্যাকস’- খুব চলতি একটা কথা। যাকে বলে কর্মফল। কিন্তু তা যে এমন ভাবে ফিরতে পারে, তা বোধহয় বিশ্বাস করা কঠিন। কিন্তু সম্প্রতি ইন্টারনেট মনে করিয়ে দিয়েছে এমনই কিছু স্মৃতি। ওই যে বলে, মানুষ ভুলতে পারে। তাই বলে ইন্টারনেট! নৈব চ। তার স্মৃতিশক্তিকে চ্যালেঞ্জ জানানো শক্ত।
দিন কয়েক ধরেই গোটা বিশ্বে আলোচনার হট টপিক উইলস্মিথের চড়। তা-ও আবার অস্কারের মঞ্চে, যেখানে কিনা তার কিছুক্ষণের মধ্যেই অস্কারের পুরষ্কার গ্রহণ করবেন অভিনেতা স্বয়ং। সেদিন অস্কারমঞ্চে সঞ্চালকের ভূমিকায় ছিলেন কৌতুকাভিনেতা ক্রিস রক। দীর্ঘদিন ধরেই অ্যালোপেশিয়ায় ভুগছেন উইলস্মিথের স্ত্রী জাডা পিঙ্কেট। সেই তাঁকেই অস্কার মঞ্চে চুল কম নিয়ে আওয়াজ দিয়ে বসেন ক্রিস। ব্যাপারটা সহ্য হয়নি উইলস্মিথের। মঞ্চে উঠে সপাটে গিয়ে চড় কষিয়ে দেন ক্রিসের গালে। ঘটনার আচম্বিকতায় চমকে যান ক্রিস।
আরও শুনুন: ‘সঞ্জীব কুমার নন, আমিই যোগ্য’, গুলজারকে জানিয়েছিলেন স্কুলপড়ুয়া নাসিরুদ্দিন শাহ
অস্কারমঞ্চে সঞ্চালককে চড় মেরে উইলস্মিথ ঠিক করেছেন কিনা এ নিয়ে ইতিমধ্যেই দ্বিধাবিভক্ত নেটদুনিয়া। কেউ বলছেন, এক্কেবারে যথার্থ কাজটি করেছেন অভিনেতা। স্ত্রীর অপমানে তাঁর প্রতিক্রিয়া একেবারেই যথাযথ। অন্য পক্ষ সরব হয়েছেন, অসহিষ্ণুতার প্রসঙ্গে। কোনও একটি পাবলিক ফোরামে দাঁড়িয়ে সহশিল্পীকে প্রকাশ্যে চড় মারা যায় কিনা কিংবা প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে শারীরিক হেনস্থা কতটা সমর্থনযুক্ত, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। ইতিমধ্যেই চড় মারার ঘটনায় ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন অভিনেতা। নিজের মন্তব্যের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষমা চেয়েছেন ক্রিসও।
তবু বিতর্কের বিরাম নেই। তবে এত সব বিতর্কের মাঝে ইন্টারনেট মনে করিয়ে দিয়েছে এমন একটি ঘটনা, যা দেখে কর্মফল শব্দটায় বিশ্বাস না করে থাকা যাচ্ছে না আর! কী সেই ঘটনা?
কোনও একটি অনুষ্ঠানে স্মিথ মুখোমুখি হয়েছিলেন মার্কিন গিটারিস্ট জন বি উইলিয়ামসের সঙ্গে। সেখানে নেড়া মাথা উইলিয়ামসকে নিয়ে ঠাট্টায় মেতেছিলেন স্মিথ। বলেছিলেন, প্রতিদিন সকালে নিয়ম করে মাথায় ওয়াক্সিং করেন ওই গিটারিস্টে। আর তার পরে হেসে স্মিথ এ-ও বলেন, তিনি মজা করছিলেন। তার উত্তরে প্রতিবাদের পথে যাননি উইলিয়ামস। বরং স্মিত হেসে ব্যপারটি উড়িয়ে দেন। পরে একটি সাক্ষাৎকারে উইলিয়ামস জানিয়েছিলেন, বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজনবোধ করেননি তিনি। স্মিথ একজন কৌতূকাভিনেতা, তাই সেটাকে মজা হিসেবেই নেন বিখ্যাত ওই গিটারিস্ট।
আরও শুনুন: আলিয়ার সঙ্গে মিল, ঠিক যেন গাঙ্গুবাই! সংস্কার ভেঙে যৌনকর্মী মায়ের ছবি সামনে আনলেন ছেলে
তবে তিনি ভুলে গেলেও, ঘটনাটি ভোলেনি ইন্টারনেট। ঠিক সময় মতো মাটি খুঁড়ে খুঁজে এনেছে সেই ভিডিওটি। অস্কারমঞ্চে উইলস্মিথের চড়কাণ্ডের পরেই ইন্টারনেটে দেদার ছড়িয়েছে সেই ভিডিও। যা দেখে নেটিজেনদের বক্তব্য, নিজের ছোড়া তির আসলে বুমেরাং হয়ে ফিরে এসেছে তাঁর কাছেই। তিনি যদি কারওর নেড়া মাথা নিয়ে সর্বসমক্ষে ঠাট্টা করতে পিছপা না হয়, তাহলে জাডাকে নিয়ে ঠাট্টা সহজে মেনে নিতে পারলেন না কেন? বিষয়টি নিয়ে উইলস্মিথকে কাঠগড়ায় তুলতে ছাড়েননি তাঁরা। এর আগেও এক সাংবাদিককে চড় কষিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল উইলস্মিথের বিরুদ্ধে। ফের অস্কারমঞ্চে একই কাজ করে বিপাকে অভিনেতা। অস্কার কমিটিও তাঁর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনতে চলেছে বলে জানা গিয়েছে। সব মিলিয়ে গত কয়েকদিন ধরে নেটদুনিয়ায় সর্বক্ষণের চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছেন উইলস্মিথ। আর এসব দেখেশুনে একটা প্রবাদই বারবার মনে পড়ে যাচ্ছে। সেই যে ভাবসম্প্রসারণে আসত- “আপনি আচরি ধর্ম অপরে শিখাও!”
উইলস্মিথের ব্যাপারে সেটাই যেন অক্ষরে অক্ষরে ফলে গিয়েছে।