সৃষ্টির ক্ষেত্রে স্রষ্টার স্বাধীনতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয় চিরকালই। তবে, সেই স্বাধীনতার অপব্যবহার যদি কেউ বা কারা করে থাকেন, তবে একদিন কোপ পড়ে সকল স্রষ্টার সৃষ্টিতেই। ওটিটি-র দুনিয়া কি ক্রমশ সেই পথেই এগোচ্ছে? সাম্প্রতিক ঘটনাবলি সেই প্রশ্নই উসকে দিচ্ছে।
পদক্ষেপ বেশ কঠোর। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রকের তরফ নির্দেশ জারি করে বেশ কয়েকটি ওটিটি প্ল্যাটফর্মকে নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছে। বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও, এই প্ল্যাটফর্মগুলি এমন কিছু কনটেন্ট দেখিয়ে চলেছিল, যা কাম্য নয়। নগ্নতার যথেচ্ছ ব্যবহারও এর মধ্যে অন্যতম একটি কারণ। এই কোপে পড়েছে ১৮টি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম। অশ্লীল, আপত্তিজনক, এমনকী পর্নোগ্রাফিকে কনটেন্ট হিসাবে চালানোর অভিযোগেই নেমে এসেছে এই নিষেধাজ্ঞা।
আরও শুনুন: তারকা হলেও রক্ষা নেই! ‘সাহসী’ পোশাক নিয়ে কটাক্ষ ধেয়ে এল সুনিধির দিকেও
ভারতবর্ষে সিনেমাকে এখনও সেন্সরের বেড়া টপকে যেতে হয়। তার যেমন কয়েকটি সুবিধা আছে, তেমন অসুবিধাও আছে বিস্তর। কোনও শিল্পই নিয়মের গণ্ডি মেনে তৈরি হতে পারে না। তার উপর সিনেমা এমন একটি শিল্প, যা অনেকগুলো শিল্পমাধ্যমের যোগফল। সামগ্রিকতায় তা একটি শিল্প হয়ে ওঠে। ভারতীয় জনমানসে সিনেমা সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলে। ফলত সিনেমার প্রদর্শনের ক্ষেত্রে সেন্সর বেশ কঠোর অভিভাবকের ভূমিকাই পালন করে। কিন্তু এখানে একটা গোলমাল আছে। শিল্প কোনও দেশের মানচিত্রে তো আটকে থাকে না। সিনেমাও নেই। কিন্তু সেন্সরের নিয়ামবলি তৈরি হয় একটি দেশের চরিত্র মেনেই। সেই দেশের পরম্পরা ও জনমানসের গড় বৈশিষ্ট্যের কথা মাথায় রেখেই ঠিক করা হয় যে, কোনটি প্রদর্শনের যোগ্য আর কোনটি নয়। এই দোটানায় দর্শকের সাবাকলত্ব একটি ধোঁয়াশাময় বিষয় হয়ে ওঠে। একই সঙ্গে গেরোয় পরে শিল্পীসত্তা। যাঁরা বিশ্বের অন্যান্য দেশের সিনেমা দেখেন বা দেখতে অভ্যস্ত তাঁদের রুচি বা সিনেমা সম্পর্কিত ধারনাও ততখানিই প্রসারিত। কিন্তু সেই বিস্তারিত ধারণা যে সেন্সর মেনে নেবে, তার কোনও মানে নেই। ফলে এক রকমের বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়, যা শিল্পীর সৃষ্টির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা ডেকে আনে। বহু শিল্পীই এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। কেউ কেউ আবার সব মানিয়ে নিয়ে নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যেই নিজের শিল্পকে আরও উৎকর্ষ করে তোলেন। তবে, শিল্পের ক্ষেত্রে আদৌ সেন্সর থাকা উচিত কি-না, সে তর্ক কিন্তু চলছেই।
এর মধ্যে ওটিটি এখনও অনেকটাই মুক্তাঞ্চল। সেভাবে সেন্সরের আওতায় তাকে পড়তে হয় না। ফলত এ দেশের পরিচালকরাও অনেকটা মনের মতো কাজ করতে পারেন, এই প্ল্যাটফর্মে। এমনটাও দেখা যায়, সিনেমার যে অংশ হলে প্রদর্শিত হয় না, তা চলে আসে ওটিটি-তে। কিন্তু বৃহস্পতিবার সরকার যে পদক্ষেপ করতে বাধ্য করল,তাতে স্পষ্ট হয় যে এই স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে চলেছে বেশ কয়েকটি প্ল্যাটফর্ম। কারণ যে ধরনের কনটেন্টে আপত্তি জানানো হয়েছে, তা শিল্পকে আদৌ উৎকর্ষের জায়গায় পৌঁছে দিচ্ছে না। এ ছাড়া এই ধরনের কনটেন্ট প্রচারের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ারও যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে। স্বাভাবিক ভাবেই তা বরদাস্ত করা হয়নি। এই প্রবণতা সাফ একটি প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে। কয়েকটি প্ল্যাটফর্মের দোষে আদতে ওটিটি-ই কি সেন্সরের দিকে গিয়ে যাচ্ছে। যদি বারবার একই ঘটনা ঘটতে থাকে, তাহলে সেদিন আর বেশি দূরে নেই। আর যদি তা হয়, তাহলে শিল্পীসমাজের প্রতি তা দুঃসংবাদ হয়েই আসবে।