যে অধ্যায় দেশের গণতন্ত্রের ইতিহাসে সবথেকে বিতর্কিত, সেটিই তাঁর ছবির বিষয়বস্তু। ঘটনাচক্রে এই সময়ে তিনি আবার রাজনীতিবিদও বটে। ভারতীয় জনতা পার্টির একজন হয়ে, কংগ্রেস আমলের সেই অধ্যায়কে ঠিক কীভাবে তুলে আনবেন কঙ্গনা? তিনি নিজেই যেহেতু পরিচালক তাই বারবার এই প্রশ্ন উঠেছে। সিনেমার মধ্যে তাঁর রাজনৈতিক মতামত কতখানি থাকবে, আর কতখানি তা তথ্যনিষ্ঠ হবে এই আলোচনা চুপিসাড়ে চলছে সিনেমহলে।
অভিনয় থেকে এসেছেন রাজনীতিতে। কিন্তু রাজনৈতিক ছবিতে অভিনয় নিয়ে এবার সরাসরি আপত্তিই জানালেন কঙ্গনা রানাউত। তাও এমন সময় যখন তাঁর রাজনৈতিক ছবি ‘এমার্জেন্সি’ নিয়ে চর্চা তুঙ্গে। এই ধরনের ছবি তৈরির বিষয়েও তাঁর একই আপত্তি। বলিপাড়ার ‘কুইন’ তো বলেই ফেলেছেন, রাজনৈতিক ছবি তিনি আর করবেন না। এ ছবি করাও নাকি ভুল হয়েছে।
আরও শুনুন: ‘পাক-সীমান্ত পেরিয়ে ঘুড়ি ওড়াব, দেখি কে আগে গুলি করে!’ সীমানাহীন স্বপ্ন ইরফানের
জরুরি অবস্থার মতো বিষয়কে ছবিতে তুলে আনা একরকম সাহসী পদক্ষেপই বলা যায়। আর কঙ্গনা যে সাহসী সে তো সকলেই জানেন। এ ছবিতে তিনি যে শুধু পর্দায় ইন্দিরা হয়েছেন তাই-ই নয়, ছবির পরিচালকও তিনি। যে অধ্যায় দেশের গণতন্ত্রের ইতিহাসে সবথেকে বিতর্কিত, সেটিই তাঁর ছবির বিষয়বস্তু। ঘটনাচক্রে এই সময়ে তিনি আবার রাজনীতিবিদও বটে। ভারতীয় জনতা পার্টির একজন হয়ে, কংগ্রেস আমলের সেই অধ্যায়কে ঠিক কীভাবে তুলে আনবেন কঙ্গনা? তিনি নিজেই যেহেতু পরিচালক তাই বারবার এই প্রশ্ন উঠেছে। সিনেমার মধ্যে তাঁর রাজনৈতিক মতামত কতখানি থাকবে, আর কতখানি তা তথ্যনিষ্ঠ হবে এই আলোচনা চুপিসাড়ে চলছে সিনেমহলে। ইতিমধ্যে সেন্সর বোর্ড ছবিতে কাট-ছাঁট করার নিদানও দিয়েছে। আর এতকিছুর মধ্যেই এল কঙ্গনার স্বীকারোক্তি যে, তিনি আর রাজনৈতিক ছবি করবেন না। কিন্তু কেন? তাঁর সাফ বক্তব্য, এই ধরনের ছবি তৈরির ক্ষেত্রে তিনি কোনও প্রেরণা পান না। একই সঙ্গে তাঁর উপলব্ধি যে, রাজনৈতিক ছবি তৈরি করা এ দেশে ঠিক কতখানি কঠিন কাজ। বিশেষত যাঁরা ঐতিহাসিক চরিত্র, তাঁদের উপর কাজ করা বেশ শক্ত। তিনি বরং অনুপম খেরের প্রশংসা করেছেন, ‘দ্য অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার’ ছবিটির জন্য। তবে এরকম রাজনৈতিক ছবি তিনি নিজে যে আর করতে চান না, সে বিষয়ে তাঁর কোনও দ্বিধা নেই।
আরও শুনুন: অস্কারে তিরস্কার! ভারত-বিরোধী সিনেমাই হালে পানি পায়? কিরণ-পায়েলকে একহাত কঙ্গনার
এমন ছবি বানানো যে ভুল হয়েছে, এ আসলে তাঁর আক্ষেপ। সেন্সর বোর্ড ছবিতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের নিদান দিয়েছে। কঙ্গনার বক্তব্য, তথ্যগত কোনও ভুল তিনি ছবিতে দেখাননি। এমন কোনও দৃশ্যই নেই। জরুরি অবস্থায় ইন্দিরা ঠিক কেমন ছিলেন, তখনকার রাজনৈতিক অবস্থা কেমন ছিল, আগামী প্রজন্মের সামনে তাই-ই তুলে ধরতে চাইছেন মাত্র। এমনটাই তাঁর দাবি। তাঁর আক্ষেপ, তা সত্ত্বেও কাটছাঁট করতে হচ্ছে। কারণ কোনও কোনও দৃশ্যে নাকি ভাবাবেগ আহত হতে পারে। ঐতিহাসিকদের মতামত, তথ্য, নথি দেওয়ার পরও এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হচ্ছে। যদিও কেন্দ্রে এখন কংগ্রেস ক্ষমতায় নেই, আছে তাঁরই দল বিজেপি। তবু কেন্দ্রীয় সংস্থার নিদানে যে এই পরিবর্তন ও সম্পাদনা যে করতে হচ্ছে তাতে স্পষ্টতই হতাশ তিনি। আর সেই জায়গা থেকেই তাঁর বক্তব্য যে, রাজনৈতিক ছবি তিনি আর করবেন না। কঙ্গনার তাই মত, সরাসরি ওটিটি রিলিজের দিকে এগোলে বোধহয় এই সমস্যা তৈরিই হত না।
তবে কি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতবাদের ছবির ক্ষেত্রে ওটিটি-ই ভবিষ্যৎ? সেন্সর এড়িয়ে তা সহজেই প্রকাশ করা সম্ভব? নাকি যে কোনও রাজনৈতিক ছবির ক্ষেত্রেই বহু জটিলতার মুখে পড়তে হচ্ছে পরিচালকদের! কঙ্গনা হয়তো ব্যতিক্রম নন। তবে তাঁর আক্ষেপে যে প্রশ্নগুলো থেকে গেল, তা বোধহয় সরিয়ে রাখাও যায় না।