অ্যাকশন ছবিতে যখন ফিরলেন বলি-বাদশা, তখন স্পষ্টতই জানিয়েছিলেন, শুধু রোমান্স নয়; তাঁর অভিনয়ের ঝুলিতে যে অন্য ধরনের চরিত্র আর মুহূর্ত আছে, তা তাঁর ভারি পছন্দের। সে ‘ডর’ হতে পারে বা ‘রাম জানে, শাহরুখ ভক্তদের থেকে খোদ শাহরুখের পছন্দের ছবির তালিকা একেবারেই আলাদা। প্রশ্ন জাগে, তাহলে নিজের কোন ছবিটি শাহরুখের বিশেষ পছন্দের?
তিনি রোমান্সের রাজা। অথচ ভালোবাসার গল্প নাকি একদমই পছন্দ নয় শাহরুখ খানের। শুধু শাহরুখের ফ্যানরাই নন, এ কথা শুনে হয়তো বলিপাড়ার ভালোবাসার সাম্রাজ্যই খানিক নড়ে যেতে পারে। কিন্তু খোদ বলিবাদশার পছন্দের তালিকায় নাকি কোনও রোম্যান্টিক ছবিই নেই।
হিন্দি সিনেমার খরা কাটাতে তিনি হলেন ‘পাঠান’। তা সে ছবি মুক্তির আগেই তাঁর অ্যাকশন-প্রীতির আভাস দিয়ে দিয়েছিলেন শাহরুখ। রোম্যান্টিক গল্পের থেকেও অ্যাকশন হিরো হিসাবে তিনি নাকি নিজেকে দেখতে পছন্দ করেন বেশি। সম্প্রতি সেই কথাটি আবার মনে করিয়ে দিলেন পরিচালক-প্রযোজক নিখিল আদবানি। শুধু মনে করানোই নয়, এক ধাপ এগিয়ে তিনি বলেছেন, বলি-বাদশা নাকি ভালোবাসার কাহিনি একেবারে পছন্দই করেন না।
অথচ গোটা নয়ের দশক জুড়েই সিনেমার পর্দায় ভালোবাসার ফুল ফুটিয়েছেন শাহরুখ। উলটোদিকে কাজল থাকুন কি প্রীতি জিন্টা কিংবা রানি মুখার্জি, শাহরুখের ছবি মানেই ভালোবাসার নিটোল রূপকথা। গল্প যা-ই হোক না কেন, ভরকেন্দ্র ভালোবাসাই। এমন নয় যে, রোম্যান্টিক সিনেমা কম হয়েছে হিন্দি ছবির দুনিয়ায়। তবে, নয়ের দশক সময়টাই অন্যরকম। মুক্ত অর্থনীতির ছোঁয়া লেগেছে দেশের হাওয়ায়। তার দরুণ অনেক বেড়াই ভাঙছে। মানুষের বেঁচে থাকার ধরণ বদলাচ্ছে, চাহিদার পরিবর্তন হচ্ছে, সংস্কৃতিতেও তাই আসছে পরিবর্তমান। সেই নতুন সময়ের নায়ক হয়ে উঠলেন শাহরুখ। ভালোবাসা শাশ্বত অনুভব। তবে, সময়ভেদে গল্পের টানাপোড়েন বদলে যায়। ভাষা বদলে যায়। যে নায়ককে মানুষ স্বপ্নে দেখে, বদলে যায় সেই স্বপ্নও। যদি প্রশ্ন করা যায়, সেই বদলে যাওয়া দিনকালের স্বপ্ন কেমন ছিল? উত্তর আসবে, সেই স্বপ্নের নামই শাহরুখ খান। যত দিন গড়িয়েছে শাহরুখ খান আর রোমান্স প্রায় সমার্থক হয়ে গিয়েছে। এমনকী তাঁর দু’বাহু প্রসারিত করা পোজ শুধু তাঁর নয়, প্রেমেরই সিগনেচার হয়ে গিয়েছে। আজ বলিউডি রোম্যান্টিক ছবির ইতিহাস লিখতে বসলে শাহরুখকে বাদ দিয়ে তা তো লেখা সম্ভবই নয়; বরং বলা যায় সে ইতিহাসকে যিনি নিজের মতো করে গড়েপিটে নতুন অভিমুখ দিয়েছেন, তিনি শাহরুখ খান-ই।
অথচ ব্যক্তিগত ভাবে এই রোম্যান্টি কাহিনি নাকি শাহরুখের তেমন পছন্দের বিষয় নয়। তাঁর কেরিয়ারের গোড়ার দিকে ছবি দেখলে তা স্পষ্টও হয়ে ওঠে বটে। নায়কের ধারণা যখন বদলাচ্ছে, তখন একটু অন্যরকম পথেরই সন্ধান করছিলেন তিনি। এর মধ্যে এল ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে জায়েঙ্গে’। বাকিটা ইতিহাস। প্রায় তিন দশক রোমান্স সাম্রাজ্যের একছত্র অধিপতি তিনি। হালফিলের নায়করাও স্বীকার করে নিয়েছেন যে, সিনেমার গল্পে রোমান্স থাকতেই পারে; সেই চরিত্রে তাঁরা অভিনয়ও করেন বটে। তবে, শাহরুখ খান হওয়া শুধু মুশকিলই নয়, না মুমকিনও বটে। অ্যাকশন ছবিতে যখন ফিরলেন বলি-বাদশা, তখন স্পষ্টতই জানিয়েছিলেন, শুধু রোমান্স নয়; তাঁর অভিনয়ের ঝুলিতে যে অন্য ধরনের চরিত্র আর মুহূর্ত আছে, তা তাঁর ভারি পছন্দের। সে ‘ডর’ হতে পারে বা ‘রাম জানে, শাহরুখ ভক্তদের থেকে খোদ শাহরুখের পছন্দের ছবির তালিকা একেবারেই আলাদা।
নিখিল আদবানি সেই কথাটিই মনে করিয়ে দিয়েছেন। এমনকী ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ ছবির বাস্কেটবল খেলার সিকোয়েন্সেও তিনি খানিক অ্যাকশনের থ্রিলই এনেছিলেন। প্রশ্ন জাগে, তাহলে নিজের কোন ছবিটি শাহরুখের বিশেষ পছন্দের? নিখিল জানিয়েছেন, ‘দিল সে’। এ ছবি অবশ্য খান সাহেবের ভক্তদেরও যে বিশেষ পছন্দের তা বলার অপেক্ষা রাখে না।