তাঁর কণ্ঠে অসংখ্য জনপ্রিয় গান পেয়েছে হিন্দি সিনেমার জগৎ। গুলজার থেকে এ আর রহমান হয়ে প্রীতম বা জিৎ গঙ্গোপাধ্যায় – কাজ করেছেন প্রায় সব বিখ্যাত সঙ্গীত পরিচালকের সঙ্গেই। তবু কেকে-র বলিউডের পুরস্কার বলতে নামমাত্র। এ নিয়ে কি কোনও আক্ষেপ ছিল শিল্পীর? কী ভাবতেন তিনি পুরস্কার নিয়ে? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
তিনি গাইলেন, তড়প তড়প ইস দিলসে…, আর হিন্দি সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি পেয়ে গেল প্রেম-বিচ্ছেদের কালজয়ী একখানা গান। কিংবা মনে করুন ‘মাচিস’ ছবির সেই বিখ্যাত গানের শুরুর অংশ – ‘ছোড় আয়ে হাম এ গলিয়া’। ‘মাচিস’ বা ‘হাম দিল দে চুকে সনম’ থেকে এই সাম্প্রতিক অতীতের ‘বজরঙ্গি ভাইজান’ – একের পর এক ছবিতে কেকে-র গান শুধু হিট-ই হয়নি, বলা যায়, ছুঁয়েছিল জনপ্রিয়তার অন্য মাত্রা। কোনও একজন নায়কের নেপথ্য কন্ঠ হয়ে থেকে যেতে চাননি কেকে। আর তাই বহু ছবিতে, অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিকোয়েন্সে থেকেছে তাঁর গান। বলা যায় কেকে-র কণ্ঠের দরদ সেইসব ছবিকে আরও বিশিষ্ট করে তুলেছে। ‘ম্যায়নে দিল সে কাঁহা’ গানটির কথাই ধরুন, ছবিটা তেমন জনপ্রিয় না হলেও, কেকে-র গান কিন্তু আসমুদ্র হিমাচল মানুষের হৃদয় স্পর্শ করেছে।
আরও শুনুন: তোমায় হৃদমাঝারে রাখব… কয়েক প্রজন্মের গুমরে ওঠা কান্নার নাম KK
অর্থাৎ শুধু অ্যালবামের গান নয়, হিন্দি সিনেমার প্লে-ব্যাক সিঙ্গার হিসাবে কেকে যে গান গেয়েছেন, তা হিন্দি সিনেমার গানের সম্পদ। সেই কেকে কিন্তু হিন্দি সিনে ইন্ডাস্ট্রির তরফ থেকে পুরস্কার পেয়েছেন নামমাত্র। বহুবার বেস্ট মেল প্লে-ব্যাক সিঙ্গার হিসাবে নমিনেশন পেয়েছেন। ‘বাচনা অ্যায় হাসিনা’ ছবির ‘খুদা জানে’ গানটির জন্য ২০০৯ সালে শ্রেষ্ঠ গায়কের পুরস্কার পেয়েছেন। দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রি অবশ্য তাঁকে বহু পুরস্কারে ভূষিত করেছে। কিন্তু হিন্দি সিনেমা ও সিনেমার গানের জগৎ বলতে গেলে ওই একবারই মাত্র চূড়ান্ত স্বীকৃতি দিয়েছিল গায়ক কেকে-কে।
আরও শুনুন: হোটেলে গান গাওয়া থেকে টাইপরাইটার বিক্রি, গানের জন্য চাকরিও ছেড়েছিলেন কেকে
অথচ খেয়াল করলে দেখা যাবে, তাঁর সমসাময়িক অন্যান্য গায়করা বহুবারই পুরস্কার জিতেছেন। এ নিয়ে কি কোনও আক্ষেপ ছিল স্বয়ং কেকে-র মনে? এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন পুরস্কার নিয়ে তাঁর ভাবনার কথা। সকলকে খুব আশ্চর্য করেই কেকে সেবার বলেছিলেন, পুরস্কার যে পান না, তাতে তিনি খুশি-ই। এ তো খুব সাধারণ ভাবনা নয়। স্বীকৃতি বা পুরস্কার পেলে কার না ভালো লাগে! তাহলে কেকে কেন এইরকম কথা বলেছিলেন? নিজের এই মন্তব্য ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন শিল্পী। বলেছিলন, পুরস্কার না পেলেই তিনি যে গায়ক হিসাবে কম গুরুত্ব পাচ্ছেন, এমনটা ভাবতে তিনি নারাজ। তাঁর কাছে পুরস্কার পাওয়া নয়, বরং জরুরি ভাল গান পাওয়া। ভাল গান গাওয়া। তাই পুরস্কার পাওয়া বা না-পাওয়া তাঁকে বিশেষ বিচলিত করে না। একজন সঙ্গীতশিল্পী হিসাবে তিনি নিজের কাজটি শুধু করে যেতে চেয়েছিলেন তাঁর সেরাটা দিয়ে। অর্থাৎ কেকে-র কাছে পুরস্কার নয়, গান এবং গানের উৎকর্ষই ছিল শেষ কথা।.আর তাই নামমাত্র পুরস্কার পেলেও, তার প্রভাব কখনও তাঁর উপরে পড়েনি বিন্দুমাত্র।
সদা হাসিমুখ মানুষটি দরদ দিয়ে একের পর এক এমন গান গেয়েছেন যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে শ্রোতার মন ছুঁয়েছে অবলীলায়। শ্রোতারা ভালবাসা উজাড় করে দিয়েছেন কেকে-কে। একজন সঙ্গীতশিল্পীর কাছে এর থেকে বড় পুরস্কার আর কী-ই বা হতে পারে!