ছবিতে পাকিস্তানের নাম নেওয়া হয়েছিল, তার সঙ্গে সঙ্গে আইএসআই-এর কথাও বলা হযেছিল। ইদানীং বহু সিনেমাতেই তা করা হয়, কিন্তু তখনও পর্যন্ত সে রীতি ছিল না। সেন্সর বোর্ডের নিয়মই ছিল যে, কোনও দেশের নাম সরাসরি নেওয়া যাবে না। বরং পড়শি দেশ হিসাবে উল্লেখ করতে হবে। আর সেখানেই সহায় হলেন আদবানি।
সিনেমায় নাম করে পাকিস্তানের উল্লেখ করা হল কেন? আড়াই দশক আগে এমনই প্রশ্নের মুখে পড়েছিল আমির খানের সিনেমা ‘সরফরোশ’। এখন সে সিনেমা হিন্দি ছবির জগতে প্রায় কাল্টের তকমা পায়। সদ্য পঁচিশ-পূর্তি উপলক্ষে সিনেমার কলাকুশলীরা একজোট হয়ে উদযাপনও করছিলেন। আর সেখানেই কথায়-কথায় উঠে এসেছিল এক মজার গল্প। জানা গেল, ‘সরফরোশ’ মুক্তির নেপথ্যে বেশ ভালোরকম ভূমিকা আছে লালকৃষ্ণ আদবানির।
আরও শুনুন: নারীবাদের জন্যই সমাজ গোল্লায় যাচ্ছে! মত নোরা ফতেহির, মোক্ষম জবাব রিচার
ছবির পরিচালক জানাচ্ছেন, আমির খান আর নাসিরুদ্দিন শাহ্ ছাড়া ছবির পুরো গল্প কেউ জানতেনই না। তার উপর ছবিতে পাকিস্তানের নাম নেওয়া হয়েছিল, তার সঙ্গে সঙ্গে আইএসআই-এর কথাও বলা হযেছিল। ইদানীং বহু সিনেমাতেই তা করা হয়, কিন্তু তখনও পর্যন্ত সে রীতি ছিল না। সেন্সর বোর্ডের নিয়মই ছিল যে, কোনও দেশের নাম সরাসরি নেওয়া যাবে না। বরং পড়শি দেশ হিসাবে উল্লেখ করতে হবে। অথচ পরিচালক চাইছিলেন যে, ভারত-পাকিস্তানের ভিতরকার যে সমস্যা, তা যেন তাঁর ছবিতে উঠে আসে। অতএব পাকিস্তানের নাম না নিয়ে তাঁর কোনও উপায়ও ছিল না। তবে ছবির গল্প তিনি পাঁচকান করেননি। শুধু ছবির দুই গুরুত্বপূর্ণ অভিনেতাই পুরোটা জানতেন।
আরও শুনুন: লোকসভায় ভোটই দিতে পারবেন না আলিয়া ভাট, কিন্তু কেন?
এখন, ছবির সংলাপে তো পাকিস্তান ছিল। শুটিং-ও হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সেন্সর বোর্ড ছাড়পত্র দেবে তো! প্রশ্ন পরিচালকের মনে। আর তখনই মনে মনে তিনি একটা জবাবও ভেবে রেখেছিলেন। যথারীতি সিনেমা দেখামাত্র সেন্সর বোর্ডেও আপত্তি ছুটে এল। তখন মোক্ষম অস্ত্রটি তিনি আস্তিন থেকে বের করলেন। বললেন, স্বয়ং লালকৃষ্ণ আদবানি যখন সংসদে পাকিস্তানের নাম করেই বক্তৃতা দিতে পারেন, তাহলে সিনেমায় পাকিস্তানের নাম নিতে অসুবিধা কোথায়? সংসদে যা হয়, তা তো প্রকাশ্যেই। ফলত সিনেমায় যদি প্রকাশ্যে পাকিস্তানের নাম নেওয়া হয়, তাহলে তো আপত্তি থাকার কথা নয়। পরিচালকের যুক্তি মনে ধরেছিল সেন্সর কর্তাদের। তাঁরা এ বিষয়ে কোনও কাটছাঁট না করেই সিনেমাটিকে ছাড়পত্র দিয়েছিলেন। বর্তমানে ওটিটি জমানায় এই সমস্যার কথা হয়তো ভাবাই যায় না। তবে সেদিন পরিচালক যে অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সঙ্গেই সমস্যার সমাধান করেছিলেন, তা এতদিন পরে জানা গেল। বলতে গেলে, সেদিন আমিরদের বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন আদবানিই।
তবে, সরফরোশ-এর সিক্যুয়েল আর এল না কেন? বিশেষত এখন যখন এই ধরনের সিনেমার চল বেড়েছে, তখন আমির তো তাঁর কিংবদন্তি হয়ে যাওয়া চরিত্রে ফিরতেই পারেন। অভিনেতার বক্তব্য, এ নিয়ে তাঁরা বহুবার ভেবেছেন। এবার সিরিয়াসলি ভাবনাচিন্তা শুরু করেছেন। অতএব সরফরোশ-এর পরের পর্বের জন্য অপেক্ষার প্রহর গোনা শুরু করতেই পারেন আমিরভক্তরা।