অনেক রক্তঝরা দিন পেরিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছে দেশ। সেই স্বাধীনতার লড়াই হার মানায় যে কোনও সিনেমার গল্পকেও। তাই সেই দিনগুলি বারবার উঠে এসেছে রুপোলি পর্দায়। আসুন, শুনে নেওয়া যাক তেমনই কিছু সিনেমার কথা, যার কেন্দ্রে রয়েছে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা।
পরাধীন ভারতে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মরণপণ লড়াইয়ের কথা বলে নিষিদ্ধ হয়েছিল শরৎচন্দ্রের রাজনৈতিক উপন্যাস ‘পথের দাবী’। পরে উপন্যাসটি অবলম্বনে ‘সব্যসাচী’ ছবিটি তৈরি হয়। পীযূষ বসু পরিচালিত এই ছবিতে বিপ্লবী দলের নেতা নেত্রীর ভূমিকায় পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেন উত্তমকুমার ও সুপ্রিয়া দেবী। মনে করা হয়, বিপ্লবী রাসবিহারী বসু যেভাবে দেশের বাইরে থেকে সেনাবাহিনী গড়ে স্বাধীনতার যুদ্ধ চালিয়েছিলেন, সেই ঘটনাকেই তুলে ধরেছিল এই উপন্যাস ও ছবির কাহিনি। একইভাবে ব্রিটিশ সরকারের কোপে পড়েছিল সন্ন্যাসী বিদ্রোহ নিয়ে লেখা বঙ্কিমচন্দ্রের ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাসটি। এই বিতর্কিত উপন্যাসকেই পরে তুলে ধরা হয় রুপোলি পর্দায়। বঙ্কিমচন্দ্রের ‘দেবী চৌধুরানী’ উপন্যাসেও ভবানী পাঠকের ব্রিটিশবিরোধী লড়াইয়ের কথা এসেছিল। এই উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি ছবিটিতে দেবী চৌধুরানী-র ভূমিকায় অভিনয় করেন সুচিত্রা সেন।
আরও শুনুন: গৃহবধূ থেকে বিপ্লবী, অস্ত্র আইনে প্রথম সশ্রম কারাদণ্ড হয় দুকড়িবালা দেবীর
‘সব্যসাচী’-র নেপথ্যে যেমন অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল রাসবিহারী বসুর জীবন, তেমনই সুভাষচন্দ্র বসু-র জীবনের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল ‘সুভাষচন্দ্র’ নামে একটি সিনেমা। পরেও অবশ্য নেতাজিকে নিয়ে তৈরি হয়েছে শ্যাম বেনেগালের ‘বোস: দ্য ফরগটেন হিরো’, সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘গুমনামি’-র মতো ছবি, কিংবা একতা কাপুরের ‘বোস: ডেড অর অ্যালাইভ’-এর মতো সিরিজ। বিপ্লবী অরবিন্দ ঘোষ, পরবর্তী কালের ঋষি অরবিন্দের জীবন অবলম্বনে তৈরি হয় ‘মহাবিপ্লবী অরবিন্দ’ ছবিটি। ভগৎ সিংয়ের জীবনের ওপর নির্ভর করেও বেশ কয়েকটি সিনেমা তৈরি হয়েছে বলিউডে। এর মধ্যে রাজকুমার সন্তোষীর পরিচালনায়, অজয় দেবগনের দ্য লেজেন্ড অফ ভগৎ সিং ছবিটির কথা ভুলতে পারেননি কেউই।
শুধু কোনও ব্যক্তি কিংবা স্বাধীনতা সংগ্রামের কোনও আন্দোলন নয়, এই সময়পর্বের টুকরো টুকরো ঘটনা নিয়েও তৈরি হয়েছে একাধিক সিনেমা। ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল সূর্য সেনের নেতৃত্বে যে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের অভিযান চালিয়েছিলেন বিপ্লবীরা, সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই তৈরি হয়েছিল ‘চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন’ সিনেমাটি। বিনয় বাদল দীনেশের রাইটার্স অভিযানের ঘটনাটিকে কেন্দ্র করেও তৈরি হয়েছে ৮/১২ ছবিটি। আবার এই সময়পর্বের প্রেক্ষাপটে ফুটে উঠেছে কোনও কাল্পনিক কাহিনি। যেমন আশুতোষ গোয়ারিকর পরিচালিত ‘লগান’ ছবিটি। এই ছবিতে মূল ভূমিকায় অভিনয় করেন আমির খান। ব্রিটিশের অন্যায়ভাবে চাপিয়ে দেওয়া কর মকুব করার জন্য তাদের বিরুদ্ধে ক্রিকেট খেলতে নামে গ্রামের মানুষেরা। খেলা সেখানে হয়ে দাঁড়ায় লড়াইয়ের অন্য নাম। একইভাবে ‘এগারো’ ছবিটির মূল কাহিনি হল গোরা ফুটবলারদের সঙ্গে মোহনবাগানের খালি পায়ে লড়ে জয় ছিনিয়ে নেওয়ার গল্প।
আরও শুনুন: পর্দায় তাঁর ভয়ে কেঁপেছিল পাক মুলুক, ভারত-পাক সম্পর্কের অবনতিতে নেতাদেরই দুষলেন সানি
লড়াইয়ের দীর্ঘ ইতিহাস পেরিয়ে স্বাধীনতার সূর্য দেখেছিল এ দেশ। আর সেই বাস্তবের গল্পই বারে বারে ফুটে উঠেছে সিনেমার পর্দায়।