তারকাদের আসন পাতা ভক্তদের হৃদয়ে। তাই তাঁদের চলে যাওয়া আমাদের নাড়িয়ে দেয় ভিতর থেকে। উত্তম কুমার থেকে শুরু করে বহু অভিনেতাই মারা গিয়েছেন কাজ করতে করতে, শুটিংয়ের মাঝখানে। আর এক জন অভিনেতার কাছে তার চেয়ে সম্মানের আর কী-ই বা হতে পারে। নিজেদের পর্দার শেষ অভিনয় নিজের চোখে দেখে যাওয়া হয়নি অনেকেরই। বলিউডেও এমন উদাহরণ ছড়িয়ে রয়েছে ভূরি ভূরি। কোন কোন বলিউড তারকা রয়েছেন সেই তালিকায়, আসুন শুনে নেওয়া যাক।
সম্প্রতি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও নন্দিতা দাশ পরিচালিত ছবি ‘বেলাশুরু’। গোড়া থেকেই ছবিটি নিয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ দর্শক। এই ছবির দুই কেন্দ্রীয় চরিত্র যাঁরা, গোটা গল্প আবর্তিত হয়েছে যাঁদের কেন্দ্র করে, সেই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বা স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত, দুজনের কেউই আর আমাদের মধ্যে নেই। তাঁদের অনুপস্থিতিতেই মুক্তি পেয়েছে ছবিটি। ছবির কলাকুশলী থেকে দর্শক, প্রচার থেকে প্রিমিয়ার, সমস্ত জায়গাতেই উঠে এসেছে তাঁদের দুজনের কথা।
আরও শুনুন: একজন করেছেন তুলো বিক্রি, অন্যজন আচমকাই অভিনয়ে… এই দুজনের জাদুতে এখন বুঁদ দর্শক
ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে এমন বহু ছবিই রয়েছে, যা মুক্তি পেয়েছে তারকাদের মৃত্যুর পরে। কিছু দিন আগেই ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেয়েছে ঋষি কপূর অভিনীত তাঁর শেষ ছবি ‘শর্মাজী নমকিন’।মুক্তি দেখা তো দূরের কথা, ছবির কাজও পুরোপুরি শেষ করে যেতে পারেননি ঋষি। সেখানে তাঁর ভূমিকায় অভিনয় করে ছবিটি শেষ করেন পরেশ রাওয়াল। ভারতীয় সিনেমার দুনিয়ায় এমন নজির বোধহয় প্রথম, যেখানে একই চরিত্রে একই সঙ্গে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে দুই অভিনেতাকে। বলিউডে এমন অজস্র ছবি রয়েছে, যা দেখে যেতে পারেননি সেই ছবির অভিনেতারা। তার আগেই ঘুমিয়ে পড়েছেন চিরনিদ্রায়। আসুন, শুনে নিই তেমনই কয়েক জন তারকার কথা, যাঁদের মৃত্যুর পরে মুক্তি পেয়েছে তাঁদের অভিনীত শেষ ছবি। উত্তম কুমার থেকে শুরু করে রাজেশ খন্না, অনেক তাবড় অভিনেতাই রয়েছেন সেই তালিকায়।
আরও শুনুন: স্ট্রাগল করেই মিলেছে সাফল্য, এই বলি তারকাদের লড়াইয়ের গল্প হার মানায় সিনেমাকেও
প্রথমেই যাঁর কথা বলব, তিনি বলিউড কুইন শ্রীদেবী। ২০১৮ সালে দুবাইয়ে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে মারা যান শ্রীদেবী। তার পরেই মুক্তি পায় শাহরুখ খান অভিনীত ‘জিরো’ ছবিটি। যেখানে একটি ক্যামিও চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন শ্রীদেবী।
প্রবীণ অভিনেতা ওম পুরীর জীবনেও ঘটেছে এমনই ঘটনা। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে হৃদরোগে মৃত্যু হয়ে মৃত্যু হয় অভিনেতার। তার কিছুদিন আগেই সলমন খান অভিনীত টিউবলাইট ছবিটির শুটিং শেষ করেছিলেন ওম। সে বছরেরই জুন মাসে হলে মুক্তি পায় ছবিটি।
বলিউডের অন্যতম সুপারস্টার ছিলেন রাজেশ খান্না। তিন দশক জুড়ে হিন্দি ছবিতে রাজত্ব করেছেন তিনি। শেষ জীবনে আক্রান্ত হয়েছিলেন ক্যানসারে। তবে অভিনয় ছাড়েননি তিনি। শেষ পর্যন্ত ছবির কাজ করে গিয়েছেন। ২০১২ সালের জুলাইয়ে প্রয়াত হন রাজেশ। ২০১৪ সালে মুক্তি পায় তাঁর অভিনীত শেষ ছবি ‘রিয়াসত’। সেই ছবিটিও বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল দর্শকদের মধ্যে।
৭০ দশকের হার্টথ্রব ছিলেন শাম্মী কাপুর। ২০১১ সালের অগস্টে ৭৯ বছর বয়সে কিডনিজনিত অসুস্থতায় মৃত্যু হয় অভিনেতার। রণবীর কপূর অভিনীত রকস্টার ছবিতে শেষ বার দেখা গিয়েছিল শাম্মীকে। সে বছরেরই নভেম্বরে মুক্তি পায় ছবিটি।
নিজের শেষ ছবির মুক্তি স্বচক্ষে দেখে যেতে পারেননি বলিউডের অন্য ধারার অভিনেত্রী স্মিতা পাতিল। ছেলে প্রতীক বব্বরকে জন্ম দেওয়ার দু সপ্তাহের মাথায় মারা যান স্মিতা। সেটা ১৯৮৬ সাল। ১৯৮৯ সালে মুক্তি পায় তাঁর শেষ ছবি ‘গলিও কে বাদশা’।
বলিউডকে অবাক করে মাত্র ১৯ বছর বয়সে মৃত্য়ুর কোলে ঢলে পড়েছিলেন দিব্যা ভারতী। মিষ্টি মুখ, চুলবুলে অভিনয়ের জন্য় প্রশংসা পেয়েছিলেন অল্প দিনেই। তাঁর মৃত্যুর ন-মাস পরে মুক্তি পায় তাঁর অভিনীত শেষ ছবি ‘শতরঞ্জ’, যা দুর্দান্ত সাফল্যও পেয়েছিল বক্স অফিসে।
নিজের শেষ ছবি দেখে যেতে পারেননি অভিনেত্রী মধুবালাও। ১৯৬৯ সালে হৃদযন্ত্রের সমস্যায় মারা যান তিনি। ১৯৭১ সালে মুক্তি পায় মধুবালা অভিনীত শেষ ছবি ‘জ্বালা’।
‘শোলে’ থেকে শুরু করে ‘আঁধি’ কিংবা ‘সিলসিলা’, একাধিক ছবিতে দর্শকদের মুগ্ধ করেছেন সঞ্জীব কুমারও কিন্তু নিজের শেষ অভিনয় দেখে যেতে পারেননি। ১৯৮৫ সালে মাত্র ৪৭ বছর বয়সে মারা যান সঞ্জীব। তাঁর মৃত্যুর সাত বছর পরে মুক্তি পায় ‘প্রফেসর কি পড়োসন’। সেটাই রূপোলি পর্দায় সঞ্জীবের শেষ অভিনয়।
বলিউডের সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত মৃত্যুগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল সুশান্ত সিং রাজপুতের আত্মহত্যা। ওই একটা মৃত্যু নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা বলিউডকে। নিজের শেষ ছবি ‘দিল বেচারা’-র মুক্তি নিজের চোখে দেখে যেতে পারেননি অভিনেতা। ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পাওয়া এই ছবিটি ঘিরে দর্শকদের উন্মাদনা ছিল চোখে পড়ার মতোই।
রবি ঠাকুর লিখেছিলেন, ‘নয়ন সমুখে তুমি নাই, নয়নের মাঝখানে নিয়েছ যে ঠাঁই’। তারকাদের ক্ষেত্রে এ কথাটি বোধহয় একশো ভাগ সত্যি। ইহলোকে ছাড়লেও আসলে তাঁদের কখনওই ছাড়েন না দর্শক। নিজেদের কাজের মাধ্যমে সব সময়েই তাঁরা থেকে যান ভক্তদের মনের মণিকোঠায়।