বরেলির বাজারে ঝুমকা নাহয় হারিয়েই গেল। কিন্তু সে এলই বা কোথা থেকে, আর খামোখা পড়েই বা গেল কেন? তা নিয়েই নানা মুনির নানা মত। আলিয়া-রণবীরের নতুন ছবির মরশুমে সেই গানের সঙ্গে সঙ্গে ফের বাজারে ছড়িয়ে পড়ল সেইসব গল্পই। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
কানের দুলের প্রবণতাই হচ্ছে হারিয়ে যাওয়া। সবসময় পুরো দুলটাও নয়, তার খিল বা আংটা যে ঠিক কোথায় ডুব মারে তা বলা মুশকিল। কিন্তু এ সমস্যা কেবল আমার আপনার নয়। দোষটা আসলে বরেলি বাজারে তৈরি হওয়া ঝুমকাদেরই। সেই কবে, ষাটের দশকে আশাজি আপশোশ করে বলেছিলেন, “বরেলি কি বাজার মে ঝুমকা গিরা রে”, আর এখন, এই এতদিন পরেও সেই একই প্রশ্ন করছেন আলিয়া ভাট, ‘হোয়াট ঝুমকা?’ আর তাঁর সঙ্গে সঙ্গেই সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে প্রশ্ন ঘুরছে, ‘হোয়াট ঝুমকা?’
আরও শুনুন: ভারতের জন্য বদল ‘ওপেনহাইমারে’র নগ্ন দৃশ্যে! খাজুরাহোর দেশেই ছুঁতমার্গ কেন, উঠছে প্রশ্ন
আজ্ঞে হ্যাঁ, আলিয়া-রণবীরের নতুন ছবি ‘রকি অওর রানি কি প্রেমকাহানি’-র এই গান এখন নেটদুনিয়ার নয়া সেনসেশন। যা আসলে ‘বরেলি কি বাজার মে ঝুমকা গিরা রে’ গানটিরই নতুন ভার্সন। সেই কত যুগ আগে যে গান গেয়েছিলেন আশা ভোঁসলে। হ্যাঁ, ১৯৬৬ সালের বলিউড সিনেমা ‘মেরা সায়া’-তে মুক্তি পেয়েছিল সে গান। তখন সে গান লিখেছিলেন রাজা মেহদি আলি খান আর কম্পোজ করেছিলেন মদন মোহন। এই দুই শিল্পীকে শ্রদ্ধা জানাতে ভোলেননি নতুন গানের নির্মাতারা। আলিয়া-রণবীরের ছবিতে যে গান শোনা যাচ্ছে, তা লিখেছেন অমিতাভ ভট্টাচার্য, সুর দিয়েছেন প্রীতম আর গেয়েছেন এক ও অদ্বিতীয় অরিজিৎ সিং। কিন্তু কথাটা হল, আসলে তো এ গান কেউই লেখেননি। সুরও দেননি কেউই। কারণ এই গান আসলে একটি লোকগান, যা মুখে মুখেই ছড়িয়ে পড়েছে এতদিন ধরে। ঠিক কবে, কে যে কোথায় এ গান বেঁধেছিলেন, তা নিশ্চয় করে বলা মুশকিল। তবুও দিনের পর দিন ধরে এ গান বয়ে চলেছে। আর তার সঙ্গেই বয়ে নিয়ে চলেছে অজস্র গল্পও। লোকগান শুনে শুনে নানা লোক নানারকম করে তার ব্যাখ্যা করেন। আর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গানের শরীরে জুড়ে যায় সেইসব ব্যাখ্যারা।
এই যেমন ধরুন, এক গণিতজ্ঞ মনে করছেন, এ আসলে প্রবাবিলিটি বা সম্ভাব্যতার অঙ্ক। কে ঝুমকা বানাচ্ছেন, তিনি কতটুকু কাজ শেখার সুবিধা পাচ্ছেন, এইসব ভ্যারিয়েবল-এর উপরই নির্ভর করে ঝুমকাটি খারাপভাবে তৈরি হওয়া এবং পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। বায়েশিয়ান মেথড দিয়ে এই শর্তসাপেক্ষ সম্ভাব্যতার অঙ্কটি সমাধান করা যেতে পারে, এমনটাই তাঁর মত। আবার আরেক গণিতজ্ঞের মতে, এই অঙ্ক সমাধান করতে গেলে আরও পরিসংখ্যান দরকার। তবে তাঁর কথা উড়িয়ে অন্য এক গণিতজ্ঞ কিন্তু সে অঙ্ক কষে ফেলেছেন। তাঁর মতে, ১০বারের মধ্যে কমবেশি ১.০৩ বার এই ঝুমকা পড়ে যেতে পারে।
আরও শুনুন: ঈশ্বর নয়, ক্যাটরিনার দেখা পাওয়াই একমাত্র ইচ্ছা! অভিনেত্রীর ছবি টাঙিয়ে রোজ পুজো দম্পতির
পদার্থবিদের মত অবশ্য অন্য। ঝুমকা গিরা রে, এই কথার মধ্যে দিয়ে আসলে অভিকর্ষ বলের কথা বোঝানো হচ্ছে বলে দাবি করছেন তিনি। এদিকে অর্থনীতিবিদের সাফ কথা, আসলে সোনার দামের বাড়া কমা, কিংবা শেয়ার বাজারের উত্থান পতন বোঝাচ্ছে ঝুমকার এই পড়ে যাওয়া। তবে এই সব তত্ত্বকেই নস্যাৎ করে পুলিশ আধিকারিক জানিয়ে দিয়েছেন, ঝুমকার পড়ে যাওয়া মোটেই কোনও আকস্মিক ঘটনা নয়। এ আসলে নিপুণ ছিনতাইয়ের ঘটনাই।
লোকগানের মজা আসলে এখানেই। লোকের মুখে মুখে তার কথা, তার অর্থ, সবই বদলে বদলে যেতে থাকে। আর সেই নানারকম অর্থ নিয়েই জনপ্রিয়তার এক অন্যরকম বয়ান লিখেছে এই গান।