‘বেটে কো হাত লাগানে সে পহলে বাপ সে বাত কর’, শাহরুখের হুংকারে আপাতত কাঁপছে গোটা দেশ। কিন্তু এই বাবা আর ছেলে, দুজনেই যে আসলে একজন। হ্যাঁ, এক নয়। ‘জওয়ান’-এ দেখা গিয়েছে দুজন শাহরুখকে। যেসব দৃশ্যে একইসঙ্গে পর্দায় দুই শাহরুখকে দেখেছেন দর্শকরা, কীভাবে শ্যুটিং হয়েছিল সেইসব দৃশ্যের? সম্প্রতি সেই অভিজ্ঞতার কথাই শোনালেন অন্য এক ‘শাহরুখ’। আসুন শুনে নিই।
‘ফিরবে ফিরবে, ব্যাক করবে, আর যখন ফিরবে তখন কেউ পার পাবে না’- জনপ্রিয় বাংলার সিনেমার এই ডায়লগ যে কতটা সত্যি, তা প্রমাণ করেছেন শাহরুখ। তিনি ফিরেছেন। আর এমনভাবে ফিরেছেন যে কেউ সত্যিই পার পাচ্ছে না। বিগত কয়েক বছরে তেমনভাবে সাফল্যের মুখ দেখেনি শাহরুখের একের পর এক সিনেমা। তারপর এক বছরের মধ্যে পর পর দুটো সিনেমা। আর দুটোই বক্সঅফিসে ঝড় তুলেছে। ‘পাঠান’ ঝড় শান্ত হতে না হতেই ‘জওয়ান’ জ্বরে আক্রান্ত সিনেপ্রেমীরা। আর এখানে তো আবার একা কুম্ভে রক্ষা নেই, যাকে বলে ডবল ধামাকা। এখানে একইসঙ্গে বাবা ও ছেলের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন কিং খান। দীর্ঘ দিন একে অন্যকে দেখেনি, এমন দুজন বাবা ছেলে। দুজনের প্রথম দেখা হওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন দৃশ্যে দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরা, স্ক্রিন জুড়ে ভরপুর আবেগের গল্পও শুনিয়েছেন শাহরুখ। তবে একজন মানুষের পক্ষের তো এমনটা করা সম্ভব নয়।
আরও শুনুন: বুড়ো হাড়ের ‘জওয়ান’ শোনাল অন্য এক স্বদেশের গল্প
তাহলে, কীভাবে শ্যুটিং হয়েছিল সেইসব দৃশ্য?
সম্প্রতি সেই গল্পই ফাঁস করলেন শাহরুখের বডি ডাবল প্রশান্ত। আদ্যন্ত শাহরুখ ভক্ত এই ব্যক্তিকে দেখতেও ঠিক শাহরুখের মতোই। সেইসঙ্গে কিং খানকে এতটাই ভালভাবে তিনি নকল করতে পারেন, যে দূর থেকে দুজনকে আলাদা করতে পারবেন না অনেকেই। বিগত ১৭ বছর ধরে শাহরুখের বিভিন্ন সিনেমায় তিনি বডি ডাবল হিসেবে কাজ করে আসছেন। জওয়ান-এর দ্বৈত চরিত্র বাস্তবায়িত করার নেপথ্যেও তিনিই রয়েছেন। সিনেমায় কখনও বাবার চরিত্রে আবার কখনও ছেলের চরিত্রে, শাহরুখের মতো করে সাজতে হয়েছে প্রশান্তকে। মূলত ক্যামেরার ক্লোজ শট নেওয়া হত শাহরুখেরই। তবে সেই সময় অন্য শাহরুখের ভূমিকায় থাকতেন প্রশান্ত। তবে দ্বৈত চরিত্র হলেও, গল্পের খাতিরে বিভিন্ন ‘লুক’ নিয়ে পর্দায় হাজির হয়েছেন শাহরুখ। বাবা-ছেলে দুই চরিত্রেই একাধিকবার নিজের লুক বদলেছেন কিং খান। তাই কেবল শাহরুখের মতো দেখতে হওয়ার দরুনই যে কাজ মিটে গিয়েছে, এমনটাও নয়। তারপরও গল্পের প্রয়োজনে নতুন লুক তৈরি করা বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল বলেই দাবি প্রশান্তের। সমস্যা এড়াতে, প্রতিদিন মাত্র দুটো লুকের শুটিং হত বলেও জানিয়েছেন তিনি।
আরও শুনুন: শাহরুখ মানেই হারানো স্বদেশ, নিরুদ্দেশের উদ্দেশে আমাদের ব্যক্তিগত ঘোষণা
এই বিপুল পরিশ্রমের ফলই এবার পাচ্ছে জওয়ান। সমালোচনা হচ্ছে না বলা ভুল। এমন বিনোদনের প্যাকেজে ঠাসা সিনেমা অনেকের কাছেই অবাস্তব, কল্পনা হিসেবে মনে হয়েছে। তবে বিনোদনের আড়ালে এ সিনেমা যে দেশের সিস্টেমের দিকে আঙুল তুলেছে, আইন ও রাজনীতির অপব্যবহারের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছে, সে কথাও কেউই অস্বীকার করতে পারছেন না। প্রথম দিনের বক্স অফিস কালেকশনের বহু রেকর্ড ইতিমধ্যেই ভেঙে ফেলেছে শাহরুখের জওয়ান। এমনকি পিছনে ফেলে দিয়েছে ‘পাঠান’-কেও। পরিচালক অ্যাটলি থেকে সিনেমার অন্যান্য কলাকুশলী, বিজয় সেতুপতি, নয়নতারা-রাও প্রশংসার বন্যায় ভাসছেন। তবে সবার মধ্যমণি তো সেই বছর ৫৭ বয়সের লোকটাই। একাই দুজন হয়ে যে এখনও পর্দা কাঁপিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। আর সেই পর্দার অবতার গোটা দেশের মানুষকে আরও একবার মনে করিয়ে দেয়, শাহরুখ খান, নাম তো শুনা হি হোগা!