প্রতিটি ক্ষত আদতে কোনও না কোনও লড়াইয়ের বার্তা দেয়। আর লড়াই সবসময়েই সুন্দর। তাহলে সুন্দর হওয়ার জন্য ক্ষত ঢাকতে হবে কেন! ক্ষতচিহ্ন নিয়েই র্যাম্পে হেঁটে সে প্রশ্ন জাগিয়ে দিলেন সারা আলি খান। একইসঙ্গে ক্ষইয়ে দিলেন গ্ল্যামার দুনিয়ার সৌন্দর্যের ধারণাকেও।
আমাদের ক্ষতগুলোই সেই গোপন জাদু, যা আমাদের অন্যরকম করে তোলে। প্রতিটি ক্ষতচিহ্নে আসলে লুকিয়ে থাকে কোনও না কোনও লড়াইয়ের গল্প। সে লড়াই পেরিয়ে আসার কথা লেগে থাকে শুকিয়ে যাওয়া ক্ষতচিহ্নে। আর কে না জানে, এই প্রতিটি লড়াইয়ের পথ আমাদের পথ চলতে শেখায়। তাই সেইসব ক্ষত আদতে যুদ্ধজয়ের নিশান। অথচ সমাজ জুড়ে যে নিখুঁত হওয়ার ফাঁদ বিছানো আছে, তা এইসব ক্ষতকেও খুঁত বলেই বাতিল করে দেয়। নির্দেশ দেয়, সুন্দর হওয়ার জন্য সমস্ত ক্ষত ঢেকে রাখাই জরুরি। এবার সেই নিখুঁত সাজের ছককেই প্রশ্নের মুখে ফেলে দিলেন বলি তারকা সারা আলি খান। নিজের শরীরের পোড়া দাগ না লুকিয়ে সদর্পে হেঁটে গেলেন র্যাম্পে। আর সেই ভঙ্গিতে গ্ল্যামার দুনিয়ার বেঁধে দেওয়া সৌন্দর্যের ধারণাকেই তিনি উড়িয়ে দিলেন সপাটে।
আরও শুনুন:
স্মৃতিদের নতুন নাম দিলেন করিনা, ভারতীয় ক্রিকেটে এবার ‘রানি’দের যুগ শুরু?
অকৃত্রিম হওয়ার মধ্যে, স্বচ্ছতার মধ্যে যে নিজস্ব সৎ সৌন্দর্য জেগে থাকে, গ্ল্যামার দুনিয়া তাকে চেনে না। সে জানে অভিনয়ের ব্যাকরণ। তাই রিল লাইফের মতোই, রিয়েল লাইফেও জীবনের সব ক্ষত-আঘাত-যন্ত্রণাকে অভিনয়ের মোড়কে ঢেকে রাখতেই সে অভ্যস্ত। সেই নিয়ম মেনে চলতে অনেকেই অভ্যস্ত হলেও, অনেকে কিন্তু সেই নিয়মের বিরুদ্ধেও দাঁড়িয়েছেন। যেমন স্তন ক্যানসার ধরা পড়ার পর অস্ত্রোপচার সেরে জীবনে ফিরেছিলেন অভিনেত্রী ছবি মিত্তাল। বাদ দিতে হয়েছিল স্তন, সেই অস্ত্রোপচারের দাগ চলে গিয়েছিল পিঠ অবধি। কিন্তু সেই দাগ নিয়ে বিন্দুমাত্র কুণ্ঠা ছিল না হিন্দি টেলিপর্দার ব্যস্ত অভিনেত্রীর। রেডিয়েশনের পরে ক্ষতচিহ্ন-সহ নিজের ছবি সোশাল মিডিয়ায় দিয়ে তিনি জানিয়েছিলেন, ওই দাগ লেজার দিয়ে মুছে ফেলতে তিনি রাজি নন। কারণ ওই লড়াইয়ের চিহ্নই তাঁকে আত্মবিশ্বাস জোগায়।
খ্যাতনামা মডেল পদ্মলক্ষ্মীর হাতেও প্রায় ৭ ইঞ্চি লম্বা ক্ষত রয়েছে। যা এক গাড়ি দুর্ঘটনার ফল। তিনি বলেছিলেন, শুধু এই একটি ক্ষতই নয়, আরও ক্ষত তিনি পেয়েছেন। কখনও কোনও দুর্ঘটনা থেকে, কখনও আবার মেয়ের জন্মের সময়ে পাওয়া। শরীরের প্রত্যেকটি ক্ষতে কোনও না কোনও গল্প লেখা রয়েছে, এমনটাই মনে করেন তিনি। লেখিকা এবং আয়ুষ্মান খুরানার স্ত্রী তাহিরা কাশ্যপও স্তন ক্যানসারের শিকার। বিশ্ব ক্যানসার দিবসে অস্ত্রোপচারের চিহ্ন সহ উন্মুক্ত পিঠের ছবি দিয়ে তিনি বলেছিলেন, এ তো আমারই দিন! ক্যানসারজয়ী সোনালি বেন্দ্রেও ১২ ইঞ্চি ক্ষতচিহ্ন সহই নিজের ছবি দিয়েছেন সোশাল মিডিয়ায়।
আরও শুনুন:
পুরুষের নগ্নতা হাসির খোরাক! প্রশ্ন জাগিয়ে দিল অস্কারের মঞ্চ
কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট করার ক্ষত-সহই সুইমস্যুট পরা ছবি দিয়েছিলেন সেলেনা গোমেজ। বলেছিলেন, শারীরিকভাবে নিখুঁত হতে চাওয়ার যে মিথ, তা আসলে এক মারাত্মক ফাঁদ। আধুনিকারা সে ফাঁদে পড়ে হতাশা আর নিজেকে খারাপ লাগার এক ভয়ংকর চক্রে ঢুকে পড়েন- এমনটাই মনে করেন তারকা।
আর এই সাহসিনীদের তালিকাতেই এবার ঢুকে পড়লেন তরুণী অভিনেত্রী সারা আলি খানও। পোড়া দাগ না লুকিয়ে গ্ল্যামার দুনিয়ার ক্লিশে ধারণাই পুড়িয়ে দিলেন সারা।