পিডিএ, অর্থাৎ প্রকাশ্যেই ভালোবাসার প্রদর্শন, এই মুহূর্তে বেশ আলোচনার বিষয়। আর ঠিক তখনই একেবারে সেই পিডিএ-র আদলেই ধরা দিলেন শাবানা-রেখা। তাঁরা যেন মনে করিয়ে দিলেন, ‘পিডিএ’ বলা হোক বা না-ই হোক, একের প্রতি অন্যের ভালোবাসা প্রদর্শনে দোষের কিছু নেই।
শাবানা আজমি আর রেখা। যেই কবে সিনেমার পর্দায় একসঙ্গে এসেছিলেন। ‘রাস্তে পেয়ার কে’, ‘এক হি ভুল’-এর মতো ছবি কেউ কেউ মনে রেখেছেন হয়তো। তবে, সম্প্রতি তাঁরা একসঙ্গে এসে আবার ঝড় তুলেছেন। তবে, এবার কোনও সিনেমার কারণে নয়। একটি পার্টিতে দুজনের দেখা হয়েছিল। আর সেখানেই শাবানার গালে বন্ধুত্বের চুম্বন এঁকে দেন রেখা। সে মুহূর্তটি ক্যামেরাবন্দি করতে কেউই ভোলেননি। আর ছবিটি সামনে আসা মাত্রই শুরু হয়েছে নতুন চর্চা। এক তো দুই কিংবদন্তি অভিনেত্রীর বন্ধুত্বের দিকের কথা তুলে ধরছেন অনেকে। আর একটি প্রসঙ্গ হল, পিডিএ। অর্থাৎ প্রকাশ্যেই ভালোবাসার প্রদর্শন। তরুণ প্রজন্মের কাছে এ খুব সাধারণ জিনিস। আবার বিতর্কও তা নিয়ে কম নেই। অনেকেই বিষয়টিকে পছন্দ করেন না। সমালোচনা করেন। আর তাই রেখা-শাবানার এই বন্ধুত্বের বাঁধনে বাঁধা পড়া দেখে অনেকেই বলছেন, সেইসব সমালোচনা কি উড়িয়ে দিচ্ছেন এই প্রবীণারাই?
শাবানা, রেখা দুজনেই স্বক্ষেত্রে কৃতী। দুজনের অভিনয় ঘরানার তফাত আছে। তবে, আভিজাত্যে-সংস্কৃতিতে দুজনেই প্রমাণ করেছেন, আপন শর্তে বাঁচা কাকে বলে। সিনেমার দুনিয়ায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা আর সেই সূত্রে মনোমালিন্য নিয়ে কম গসিপ ছড়িয়ে নেই। যে কোনও পেশাদার দুনিয়াতেই তা থাকে। তবে, সে সব সরিয়েও থাকে এই নির্ভেজাল বন্ধুত্বের আকাশ। রেখা, শাবানা আবার যেন নতুন করে সে কথা প্রমাণ করেছেন। পেশাগত দুনিয়াদারির ভিতরও যে সম্পর্কের সুতো অটুট থাকতে পারে, এই তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার পৃথিবীর সামনে যেন সেই উদাহরণ রাখলেন তাঁরা।
একই সঙ্গে দ্বিতীয় প্রসঙ্গটিও আলোচনার দাবি রাখে। শাবানা-রেখার এই বন্ধুতা-চুম্বনের সঙ্গে হয়তো এই শব্দটি সেভাবে খাপ খায় না। তা একান্তই তরুণ প্রজন্মের নিজস্ব। আর তা নিয়ে তরুণ প্রজন্মের বিস্তর অভাব-অভিযোগও আছে। একদল তরুণী-তরুণী এ ব্যাপারে বেশ স্বচ্ছন্দ। তাঁদের মতে, এই খোলামেলা পৃথিবীতে এতে দোষের কিছু নেই। সবকিছু নিয়ে যেমন খোলামেলা আলোচনা জরুরি, কথোপকথন দরকারি, তেমনই প্রকাশ্যে ভালোবাসার প্রদর্শনেও অপরাধের কিছু নেই। তবে, তরুণ প্রজন্মের একাংশই এ নিয়ে বিরূপ। তাঁদের বক্তব্য, পাবলিক প্লেসে এই ধরনের কাজ গোটা প্রজন্মটাই সম্পর্কে ভুল বার্তা দিচ্ছে। বাস কিংবা মেট্রোয় পিডিএ-র ঘটনা নিয়ে সমালোচনাও হয় বিস্তর। যাতে মনে হতে পারে, তরুণ প্রজন্ম যেন আর কোনও বিষয়ে সচেতন নয়। শুধু পিডিএ-কেই তাঁদের বোল্ডনেসের প্রতীক ভেবে ফেলেছে। অনেকের মত, ব্যক্তিগত আবেগের প্রকাশকে ব্যক্তিগত পরিসরেই সীমাবদ্ধ রাখা উচিত। পালটা যুক্তিতে অনেকেই বলেন, প্রকাশ্যে হিংস্রতা প্রদর্শনের চেয়ে ভালোবাসার প্রদর্শন অনেক শ্রেয়। কেউ কেউ এ কথাও বলেন, চুম্বন আলিঙ্গন ইত্যাদি নিয়ে যে ছুঁতমার্গ এখনও রয়ে আছে, তা ভাঙছে পিডিএ।
ঠিক-ভুলের তর্ক পেরিয়ে যা বলা যায়, পিডিএ এই মুহূর্তে বেশ আলোচনার বিষয়। আর ঠিক তখনই একেবারে সেই পিডিএ-র আদলেই ধরা দিলেন শাবানা-রেখা। তাঁরা যেন মনে করিয়ে দিলেন, ‘পিডিএ’ বলা হোক বা না-ই হোক, একের প্রতি অন্যের ভালোবাসা প্রদর্শনে দোষের কিছু নেই। তরুণ প্রজন্মের মনে, বেড়া যদি কিছু থেকেও থাকে, তা যেন ভেঙে দিলেন প্রবীণারাই।