ফুলেরা গ্রামের জামাই! খাতির, যত্ন, আদরের খামতি হলে চলবে না। পঞ্চায়েতের প্রতিটি সিজনেই ধরা পড়েছে সেই ছবি। কিন্তু বাস্তবে পঞ্চায়েতের সেই ‘দামাদজি’কে কাজ করতে হয়েছিল হোটেলে। বাসন অবধি ধুতে হয়েছিল সেইফ-করিনার পার্টিতে! আসুন শুনে নেওয়া যাক।
পঞ্চায়েতের প্রতিটি চরিত্র নিয়েই আলোচনা চলতে পারে। প্রত্যেকের নিজস্ব বৈশিষ্ট রয়েছে। তথাকথিত ভালো চরিত্ররা যেমন অভিনয়ের জোরে দর্শকদের মন জিতেছেন, ভূষণের মতো খারাপ চরিত্রকেও অবহেলার উপায় নেই। একইভাবে নজর কেড়েছেন দামাদজি!
আরও শুনুন: বহিরাগত নায়কের বাজিমাত ‘শোলে’ থেকে ‘স্বদেশ’-এ, খেলা ঘোরাল ‘পঞ্চায়েত’
সিরিজের প্রথম সিজনেই গ্রামের বিয়ে উপলক্ষে এই চরিত্রের আগমন। যেহেতু জামাই, তাই যা ইচ্ছা ইনি তাই করবেন। সেসব বাকিরা মেনে নিলেও, সচিবজির বেজায় আপত্তি! হবে নাই বা কেন, সাধের চাকা লাগানো চেয়ার যদি কেউ জোর করে নিয়ে যায়, তাহলে কার না মাথা গরম হবে। নরমে গরমে প্রথম দুই সিজনের জামাই আদর চলেছে। তবে, তৃতীয় সিজনে পঞ্চায়েতের বেশ কিছু চরিত্রকে নতুনভাবে দেখানো হয়েছে। সচিবজির কথাই ধরা যাক! এই সিজনে তাঁর আচরণ এটুকু প্রমাণ করে দিয়েছে, তিনি আর শহরের ছেলে নন। ফুলেরারই একজন হয়ে গিয়েছেন। একইভাবে দামাদজিও নিজেকে ফুলেরার সন্তান বলেই দাবি করেছে। গ্রামের মানুষের সম্মান ফেরাতে বিধায়কের সামনে বুক ফুলিয়ে দাঁড়াতেও ভয় পাননি তিনি। সচিবজির সঙ্গেও সম্পর্ক কিছুটা সহজ হয়েছে। সবমিলিয়ে প্রথম দুই সিজনে যার আচরণে বেশ বিরক্ত হয়েছিলেন দর্শকরা, এই সিজনে তাঁকেই ভালোবেসেছেন অনেকে। এই দামাদজি হোটেলে কাজ করছেন, বাসন মাজছেন, এমনটা কেউ কল্পনা করতে পারেন?
আরও শুনুন: ‘পঞ্চায়েত ৪’ কবে আসছে? পরিচালক বলছেন, পঞ্চম সিজনের ভাবনাও চলছে…
সিরিজে না হলেও বাস্তবে এমনটা সত্যিই হয়েছে। আসলে, পঞ্চায়েতের দামাদজি চরিত্রটির নেপথ্যে রয়েছেন আসিফ খান। তাঁর অভিনয়ের জোরেই এই চরিত্র এমন জীবন্ত হয়েছে। কম সময়ের জন্য হলেও সিরিজে তাঁর উপস্থিতি ছাপ ফেলেছে ভালমতো। পঞ্চায়েত ছাড়াও মির্জাপুর, পাতাললোক, জামতারার মতো সিরিজে অভিনয় করেছেন আসিফ। সব ক্ষেত্রেই তুখোড় অভিনয়ের জোরে দর্শকদের মন জিতেছেন। এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে তাঁকে নিয়ে বলিপাড়ায় বেশ আলোচনা চলে। তবে ইন্ডাস্ট্রির শুরুর দিনগুলো মোটেও সহজ ছিল না আসিফের। অন্যান্য অনেকের মতো বলিউডে কাজের স্বপ্ন নিয়ে মুম্বইয়ে পা রাখেন আসিফ। সালটা ২০০৯। কাজ করব ভাবলেই তো হল না, কাজ পেতেও হবে! তার জন্য সময় লাগবে। ততদিন পেট চলবে কীভাবে? উপায় না বুঝে, মুম্বইয়ের এক হোটেলে কাজ শুরু করেন আসিফ। কাজ বলতে বাসন ধোয়া, পরিষ্কার করা। এভাবেই কয়েক মাস কাটে। এরই মাঝে একদিন ওই হোটেলে বিরাট এক পার্টির আয়োজন দেখে বেশ চমকে যান আসিফ। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, এই পার্টি শেফ-করিনার রিশেপসনের। সেখানে প্রথমবারের জন্য দূর থেকে অমিতাভ বচ্চনকে দেখেছিলেন আসিফ। আরও অনেক তারকা আসছেন শুনে, পার্টিতে যাওয়ার ইচ্ছা হয় তাঁর। কিন্তু হাজার কাকুতি মিনতি করেও কাজ থেকে ছুটি পাননি। এরপর অবশ্য হোটেলের চাকরি ছেড়েও দেন আসিফ। কখনও শপিং মলের কাজ, কখনও আবার অন্য কোনও কাজ করে দিনগুজরান করতেন। একইসঙ্গে অডিশন দেওয়ার কাজ চালিয়ে যেতেন। কিন্তু অভিনয়ের জ্ঞান না থাকায় কোথাও চান্স পেতেন না। সকলের পরামর্শ মতো যোগ দেন জয়পুরের অভিনয় শেখার স্কুলে। সেখান থেকে বছর ৬ ট্রেনিং নিয়ে আবারও মুম্বই ফিরে আসেন। এরপর অবশ্য কাজের সুযোগ পেয়েছেন। বেশ কিছু সিনেমা এবং সিরিজে অভিনয় করে ইতিমধ্যেই চর্চায় উঠে এসেছেন আসিফ খান। তবে পঞ্চায়েতে তাঁর অভিনয় দর্শকের মন জিতেছে বিশেষভাবে। যা আগামীদিনে তাঁর উন্নতি সাহায্য করবে বলা যায়।