শ্যুটিং বাতিল করলেই লক্ষ লক্ষ টাকার লোকসান। তাই ১০২ ডিগ্রি জ্বর নিয়ে নাচলেন নায়িকা। দর্শক, রুপোলি পর্দায় নায়িকার বৃষ্টিভেজা রোম্যান্স দেখে মন ভরাল দর্শকের। নাচের তারিফ এখনও করে থাকেন সিনেপ্রেমীরা। কিন্তু নেপথ্যে নায়িকার এই প্যাশনটা জানতে পারলেন কতজন? কোন গানের কথা বলছি! আসুন শুনে নিই।
এখনও পর্যন্ত বৃষ্টিভেজা বলিউডি গানগুলোর মধ্যে অন্যতম অক্ষয় কুমার-রবিনা ট্যান্ডন অভিনীত, ১৯৯৪-এর ‘মোহরা’ সিনেমার, ‘টিপ টিপ বরসা পানি/ পানি মে আগ লগাই।’ বৃষ্টি-ভেজা রোম্যান্সের উত্তাপে সেঁকা অক্ষয়, আর হলুদ শিফন শাড়িতে শরীরে ঢেউ তোলা রবিনাকে দেখে উদ্বেল দর্শক। আনন্দ বকসির সুরের জাদুতে এই গানে সত্যি যেন জলেও আগুন জ্বলে। এখনও সে গানে রোমাঞ্চিত হন দর্শক। কিন্তু অন স্ক্রিন সেই রোমান্স ফুটিয়ে তুলতে কত কাঠ-খড় পোড়াতে হয়েছে জানেন?
আরও শুনুন: পর্দায় নয়, বাস্তবে রেগে গেলে কী করেন সানি দেওল? জেনে অবাক ফ্যানরা
তখন ‘মোহরা’ সিনেমার প্রায় পুরোটারই শ্যুটিং শেষ হয়েছে। বাকি শুধু এই গানটা। মোট চার দিন শ্যুট হয়েছিল এই গানটার। বারংবার বৃষ্টিতে ভিজে ধুম জ্বর এল রবিনার। এদিকে শ্যুটিং পিছোবারও সুযোগ নেই। নায়িকার গা-হাত-পা পুড়ে যাচ্ছে জ্বরে। আর হালকা শিফন শাড়ি পরে থাকায় ঠান্ডায় রীতিমতো কাঁপছেন। তার ওপর জ্বর নিয়েও জলে ভিজতে হচ্ছে বারবার। তবু দাঁতে দাঁত চেপে হাসিমুখে অভিনয় করে যাচ্ছেন, পর্দায় এক লাস্যময়ী চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে। একটা করে শট শেষ হচ্ছে আর চলছে একটু উষ্ণতার খোঁজে চলছে আগুন পোহানো। ডিরেক্টর আবার লাইটস, ক্যামেরা, অ্যাকশন… বলার সঙ্গে সঙ্গেই উঠে দাঁড়াচ্ছেন শট দিতে। প্রতিকূলতার অবশ্য এখানেই শেষ নয়। যে জায়গায় শ্যুটিং চলছিল সেটা একটা কনস্ট্রাকশন সাইট। এদি সেদিক পেরেক, পাথর ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে আছে। তার উপর রবিনাকে নাচতে হয়েছিল খালি পায়ে। সেই সময় রবিনা আবার ঋতুমতী থাকার দরুন আরও সমস্যায় পড়েছিলেন। পরে তাই রবিনার বলেছিলেন, ‘অভিনয়ের সময় তো আমি রোমান্সের ছিটেফোঁটাও বুঝতে পারিনি, জ্বরে কাঁপছিলাম। আপনারাই শুধু বলেন এটা নাকি বলিউডের অন্যতম সেরা রোম্যান্টিক গান।’ শুধু দেখতে সুন্দরী আর ছিপছিপে নির্মেদ ফিগার নয়, এমন অভিনয়ের জন্য দরকার অনেকখানি পেশাদারিত্বের। কারণ একদিন শ্যুটিং বাতিল করা মানে কয়েক লক্ষ টাকা লোকসান। তাই তবে এটাও বলে রাখা দরকার, যে অন-স্ক্রিন সেই রোম্যান্সের পাশাপাশি রবিনা-অক্ষয় জুটির অফ-স্ক্রিন রোম্যান্সও বেশ দানা বাঁধছিল সেই সময়।
আরও শুনুন: স্নান না করে প্রায় দু’সপ্তাহ কাটিয়েছিলেন আমির খান, কিন্তু কেন?
পরবর্তীকালে মাধুরী, শ্রীদেবীদের কাছেও এ নিয়ে অনুযোগও করেছেন রবিনা। যে, তাঁরাই নাকি শিফন শাড়ি পরে পাহাড়ে, ঠান্ডার মধ্যে শ্যুটিং করে বলিউডে রোম্যান্স আর শিফন শাড়ির একটা ট্রেন্ড শুরু করেছিলেন। আর তাঁর জেরেই পরবর্তীকালে অভিনেত্রীদের ঠেলা সামলাতে হচ্ছে। হালফিলে এই ধরনের নাচ-গানের সিনেমায় বদল এলেও, বলিউডের মেইনস্ট্রিম সিনেমার মেজাজ যে এই দৃশ্যগুলিতেই জমে ওঠে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আর তার নেপথ্যে নায়িকাদের পরিশ্রম, ডেডিকেশন আর প্যাশনের গল্পগুলোও থেকে যায়। হয়তো অকথিত। তবু এগুলো মনে না রাখলে বলিপাড়ার ইতিহাসটাকেই আসলে অস্বীকার করা হয়।