নাসিরুদ্দিন শাহ্ চাইছেন, তরুণ পরিচালকদের সিনেমার বিষয় হয়ে উঠুক ধর্ম। এক সাক্ষাৎকারে যখন তাঁকে প্রশ্ন করা হল, সামাজিক ও সাম্প্রতিক কোন বিষয়টিকে তিনি ছবিতে দেখতে চাইছেন, তিনি দ্বিধাহীন জানালেন যে, ধর্মই সেই বিষয়। কিন্তু কেন?
সেই ১৯৭৬ সালের সিনেমা ‘মন্থন’। এই ২০২৪-এ কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে যখন তা দেখানো হল, সিনেরসিকদের উচ্ছ্বাস ছিল দেখার মতো। একটা ছবি যে কীভাবে সময় অতিক্রম করে দর্শকের মন ছুঁয়ে ফেলতে পারে, তা যেন আবার দেখা গেল। আর সেই মুহূর্তের সাক্ষী থাকলেন ছবির অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহ্ স্বয়ং। মূলধারার বিনোদনের বাইরে সিনেমার যে ভিন্নস্বর, তাই-ই বরাবর প্রাধান্য পেয়েছে তাঁর কাছে। তবে, বর্তমানে কী ধরনের ছবি তিনি চাইছেন? বর্ষীয়ান অভিনেতার মত, ধর্মকে বিষয় করেই ছবি তৈরি করুন এখনকার পরিচালকরা।
দেশের নানারকম ইস্যুতে নাসিরুদ্দিন শাহ্ বরাবরই সরব। শুধু এক বিশেষ ধরনের সিনেমার অভিনেতা তিনি নন; বরং তাঁর সামগ্রিক জীবনচর্যা ও মতাদর্শেও সেই প্রতিফলন দেখা যায়। অর্থাৎ হতে পারেন তিনি অভিনেতা, কিন্তু তাঁর ছবি আর জীবনের মতামতগুলোকে খুব আলাদা করে দেখা উচিত নয়। খতিয়ে দেখতে গেলে মনে হবে, সিনেমা আর জীবনকে যেন একটাই কর্মসূচি হিসাবে গ্রহণ করেছেন তিনি। আর তাই যেখানে দেশের যখন গণতান্ত্রিক পরিসর সংকুচিত হয়ে আসছে বলে মনে হয়, সেখানেই সরব হন তিনি। সরব হন মানুষের অধিকার নিয়েও। এখন তাই তিনি চাইছেন, তরুণ পরিচালকদের সিনেমার বিষয় হয়ে উঠুক ধর্ম। এক সাক্ষাৎকারে যখন তাঁকে প্রশ্ন করা হল, সামাজিক ও সাম্প্রতিক কোন বিষয়টিকে তিনি ছবিতে দেখতে চাইছেন, তিনি দ্বিধাহীন জানালেন যে, ধর্মই সেই বিষয়। কিন্তু কেন? সন্দেহ নেই যে, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতিই তাঁকে এরকম একটি উত্তরের দিকে ঠেলে দিয়েছে। ধর্ম, যার কিনা মানুষকে ধারণ করার কথা ছিল, তাই-ই যেন বিভাজন হয়ে দেখা দিয়েছে মানুষের কাছে। রাজনীতি যেভাবে ধর্মকে ব্যবহার করেছে, সেই বিষবাতাসে মানুষ অতিষ্ঠ। এখন, এই যে পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তা আমরা সকলেই জানি। প্রবীণ অভিনেতা চাইছেন, সেটাই বিষয় হয়ে উঠুক আধুনিক সিনেমার। তাঁর মতে, ধর্ম যেভাবে আমাদের মনে বাসা বেঁধে ফেলেছে, তা আখেরে ক্ষতিকর হচ্ছে মানুষের সভ্যতারই। অর্থাৎ ধর্মকে ব্যবহার করে যেভাবে মানুষকে কবজা করে ফেলা হচ্ছে, সেই দিকটির কথাই উল্লেখ করতে চাইছেন তিনি। তাঁর মতে, এই বাস্তবতার প্রতিফলন হওয়া উচিত সিনেমাতেও।
সিনেমার সেই ভিন্নস্বর কি ইদানীং কমে এসেছে? নাসিরুদ্দিনের বক্তব্যে তার খানিক আভাসও মিলেছে। তাঁর মতে, আধুনিক বাস্তবতাকে ভিত্তি করে কাজ করার চেষ্টা কেউ কেউ করে যাচ্ছেন। দিনেদিনেহয়তো সেই ধরনের কাজের সংখ্যা আরও বাড়বে। তবে তাঁর পর্যবেক্ষণ যে, শিল্পের মাধ্যমে বা সিনেমার সূত্রে কোনও স্থির বিবৃতি দেওয়া এখনও তেমন সহজ কাজ নয়। সেক্ষেত্রে ফর্মটিও গুরুত্বপূর্ণ। কেননা যা বলতে চাওয়া হচ্ছে তা যাতে ঠকঠাক ভাবে মানুষের কাছে পৌঁছয়, সেই দিকটাই শেষ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। অতএব, কাজটি যে সহজ নয়, তা তিনি জানেন। তবে, তাঁর আশা, এখনকার পরিচালকরা সাহসী হয়ে ধর্মকেই সিনেমার বিষয় করবেন। তাহলে সিনেমার পরিসরে মিশে যাবে বর্তমানের বাস্তবতা।