মেয়েদের ভালো লাগলেই কি সিনেমা সুপারহিট? একের পর এক ছবিতে নায়কের ধুন্ধুমার দেখে এমনই ভাবনা উসকে দিলেন নাসিরুদ্দিন শাহ। কী বললেন তিনি? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
মেয়েদের যে ছবি ভালো লাগে, তা নাকি সবসময়েই সুপারহিট হয়- এমনই একটা বিশ্বাস রয়েছে সিনেদুনিয়ায়। সম্প্রতি ব্লকবাস্টার সিনেমার প্রসঙ্গে বক্স অফিসের সেই গোপন কথা ফাঁস করলেন বর্ষীয়ান অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহ। আর একইসঙ্গে তিনি সাফ জানালেন, যে ছবিতে কেবল নায়কের পৌরুষকেই বড় করে তুলে ধরা হয়, তাকে আদৌ ভালো ছবি বলে মনে করেন না তিনি। এমনকি সে ছবি দেখতে কজন মহিলা আকৃষ্ট হবেন, তা নিয়েও তাঁর সন্দেহ রয়েছে। কারণ যে ছবি সংবেদন আর অনুভূতিকে গুরুত্ব দেয়, সেই ছবিই মহিলারা দেখতে পছন্দ করেন বলে ধারণা নাসিরুদ্দিনের। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, একের পর এক বক্স অফিস কাঁপিয়ে চলেছে ওই অন্য জাতীয় সিনেমাগুলোই, যেখানে পর্দা জুড়ে রয়েছে কেবল নায়কের ধুন্ধুমার কীর্তি। আর সেই প্রসঙ্গে বর্ষীয়ান অভিনেতার বক্তব্য থেকেই উসকে উঠল এই ভাবনা, তবে কি সেই পৌরুষের নির্মাণই আকৃষ্ট করছে মহিলাদের, আর তার জেরেই কি সুপারহিট এই সিনেমাগুলো?
আরও শুনুন: কে আছ Jawan, হও আগুয়ান! শাহরুখ দেখালেন যোদ্ধা দেশের নারীরাই
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে রাখঢাক না করেই ইদানীং কালের একাধিক সুপারহিট ছবি নিয়ে মত প্রকাশ করেছেন নাসিরুদ্দিন। এর আগেও ‘দ্য কাশ্মীর ফাইল্স’, ‘দ্য কেরালা স্টোরি’-র মতো ছবিকে বিরক্তিকর বলেছিলেন বলিউডের এই কৃতী অভিনেতা। এই ধরনের ছবিতে রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডাকেই উসকানি দেওয়া হচ্ছে বলেই মত প্রকাশ করেন তিনি। আর এবারও অন্য আরেক প্রোপাগান্ডা নিয়ে মুখ খুললেন নাসির। একের পর এক হিট ছবিতে নায়ক চরিত্রকে যেভাবে দেখানো হচ্ছে, তাকে পৌরুষের একরকম প্রোপাগান্ডা বলেই মনে করছেন বর্ষীয়ান অভিনেতা। সাম্প্রতিক কালে বাণিজ্যিক ভাবে চূড়ান্ত সাফল্য পেয়েছে দক্ষিণের দুটি ছবি ‘আরআরআর’ এবং ‘পুষ্পা’। কিন্তু এই দুটি ছবি প্রসঙ্গেই নাসিরুদ্দিনের সাফ কথা, এই দুটি ছবিই তিনি দেখার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তা বসে দেখা যায় না। তিনি বলেন, ‘‘এই ধরনের ছবিগুলিতে রোমাঞ্চ ছাড়া কিছুই নেই। আসলে ভারতে পুরুষরা মনে হয় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। সেই কারণেই পুরুষতান্ত্রিক ছবির নির্মাণ বাড়ছে।’’ এই প্রসঙ্গেই উঠে এসেছে কবীর সিং-এর প্রসঙ্গও, সেটিও আসলে দক্ষিণী ছবি ‘অর্জুন রেড্ডি’-র রিমেক। সেখানেও দেখা গিয়েছে নায়কের চূড়ান্ত পৌরুষের উদযাপন। অথচ বক্স অফিসে বিপুল সাফল্য পেয়েছে এই ছবিও।
আরও শুনুন: ‘বিশ্বাস বদলায় নাকি!’ ধর্মপ্রাণ মুসলিম হয়েও হিন্দু পুত্রবধূর ধর্ম বদলাতে চাননি নাসিরুদ্দিন শাহের মা
নাসিরুদ্দিন যদিও প্রশ্ন ছুড়েছিলেন, “আমি ভাবি, ঠিক কজন মহিলার এ জাতীয় ছবি ভালো লাগবে?” একইসঙ্গে তিনি আরও বলেছিলেন, মহিলারা যে ছবি পছন্দ করেন, তা সবসময়েই বিপুল সাফল্য পায়। তাহলে এই ছবিগুলোর বিরাট সাফল্যের প্রেক্ষিতে কি আরও একটি ভাবনার ইঙ্গিত দিচ্ছে এই বক্তব্য? এ দেশের সমাজ যে পৌরুষ বা মর্দাঙ্গির সংজ্ঞা তৈরি করে, দেশের মেয়েদের মধ্যে সেই ভাবনার ছাপ পড়বে না এমনটা তো হতে পারে না। এদিকে ভারতীয় সিনেমাতেও বারে বারেই সমাজের সেই ভাবনার ছবি উঠে এসেছে, আর তা সাফল্যও পেয়েছে। তাহলে নাসিরুদ্দিনের বলা সাফল্যের ফর্মুলা মেনেই বলতে হয়, পুরুষের নিরাপত্তাহীনতা, নাকি মেয়েদের পৌরুষের প্রতি টান, কোন কারণে এ জাতীয় একাধিক ছবি তৈরি হয়ে চলেছে? যে পৌরুষের বাড়াবাড়িকে ক্ষতিকারক বলেই মনে করছেন নাসিরুদ্দিন, মহিলা দর্শকদের একটা বড় অংশের ভাবনা কি তার উলটো পথেই হাঁটছে? অভিনেতার এ কথার প্রেক্ষিতে সে প্রশ্নটি কিন্তু থেকেই যায়।