যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে। তবে যে চুল বাঁধে, সে কিন্তুই অনায়াসেই সামলে ফেলতে পারে ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে কঠিন প্রশাসনিক পদও। বিউটি মানেই ব্রেনলেস, সেই ভাবনার দিন কিন্তু শেষ। বিউটি পেজেন্টের মঞ্চ হোক বা অন্য পেশা, দু-জায়গাতেই সমান সাবলীল তাঁরা। যেমন ধরুন, রাজস্থানের কন্যা ঐশ্বর্য শেহরান। মিস ইন্ডিয়ার মঞ্চ থেকে ইউপিএসসি-তে অভাবনীয় রেজাল্ট, দু-জায়গাতেই ক্যারিশমা দেখিয়েছেন ঐশ্বর্য। শুধু সুন্দর মুখ নয়, মেধা, মনন, দায়িত্ব- সবটা মিলিয়েই আজকের সুন্দরীরা।
আগেকার দিনে মনে করা হত, অভিনেত্রী বা তথাকথিত সুন্দরী নায়িকা মানেই তাঁরা বুদ্ধিশুদ্ধিতে মোটা দাগের। মডেলিং বা অভিনয়কে কেরিয়ার হিসেবে ভাবার ক্ষেত্রেও ছিল অনেক ধরনের প্রতিবন্ধকতা। তবে সময় বদলেছে। সাবালক হয়েছে ভাবনাচিন্তাও। আজকাল সেরা সুন্দরীর মঞ্চে শুধু সৌন্দর্যই নয়, গুরুত্ব দেওয়া হয় মেধা ও মননকেও। স্কুলে ফার্স্ট হওয়া মেয়েও পৌঁছে যায় বিউটি পেজেন্টের মঞ্চে। শুধু পৌঁছয়ই না, জিতেও ফেরে। আবার কেউ কেউ গ্ল্যামার জগতের মোহময় টানকে তাচ্ছিল্য করে ফিরতে পারে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে। কেউ আবার দুটোকেই সামলায় দারুণভাবে।
আরও শুনুন: কোন প্রশ্নের কী উত্তর দিয়ে বিশ্বকে মন্ত্রমুগ্ধ করলেন ‘মিস ইউনিভার্স’ হরনাজ?
রাজস্থানের ঐশ্বর্য শেহরানের কথাই ধরুন না! মিস ইন্ডিয়ার মঞ্চ থেকে ইউপিএসসি-তে অভাবনীয় ফলাফল। সব ক্ষেত্রেই দুর্দান্ত রাজস্থানের এই কন্যা।
বিশ্বসুন্দরী ঐশ্বর্য রাই বচ্চনের নামের থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে মা নাম রেখেছিলেন ঐশ্বর্য। মায়ের বরাবরের ইচ্ছা ছিল মডেলিং করুক মেয়ে। জিতুক নানা সুন্দরী প্রতিযোগিতার শিরোপা। ২০১৪ ও ১৬ সালে দু-দুটি সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণও করেন ঐশ্বর্য। মিস ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বেও পৌঁছেছিলেন ঐশ্বর্য। তবে অল্পের জন্য হাতছাড়া হয় সেরার মুকুট।
তবে ইউপিএসসি পরীক্ষা টপকেছেন প্রথম চেষ্টাতেই। শুধু টপকেছেন বললে ভুল হবে। দেশের অন্যতম কঠিন এই পরীক্ষায় ৯৩তম স্থানটি দখল করেন তিনি। তার জন্য আলাদা করে কোনও প্রশিক্ষণ নেননি ঐশ্বর্য। শুধু দশটি মাস নিজের ঘরে বসেই টানা পড়াশোনা করেছিলেন তিনি। আর তাতেই মেলে সাফল্য।
বরাবরই পড়াশোনায় ভাল ছিলেন ঐশ্বর্য। স্কুলেও বরাবর প্রথম হয়েছেন। দিল্লির শ্রীরাম কলেজ অব কমার্স থেকে স্নাতক হন। আইআইএমেও ভর্তির সুযোগ পেয়েছিলেন। তবে আইএএস হওয়াই ছিল জীবনের লক্ষ্য। ফলে এগিয়েছেন সেদিকেই। ঐশ্বর্যর বাবা কর্নেল অজয় কুমার এনসিসি তেলঙ্গানা ব্যাটেলিয়নের কম্যান্ডিং অফিসার। বাবাকে দেখে ছোট থেকেই দেশের জন্য কিছু করার ইচ্ছা হত তাঁর। তাই বাবার দেখানো পথেই দেশের প্রশাসনিক পদে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ঐশ্বর্য।
কী ভাবছেন! তাই বলে মডেলিংকে একেবারে টাটা বলে দিয়েছেন ঐশ্বর্য? মোটেই না, তাও চলছে পুরোদমে। আগামী দিনেও দুটোকেই পাশাপাশি চালিয়ে যেতে চান ঐশ্বর্য। আর তাঁর মায়ের ইচ্ছা, কোনও ভাবে মিস ইন্ডিয়া খেতাবটাও যেন ওঠে মেয়ের মাথায়।
আরও শুনুন: ভারতীয় সেনার বীরগাথা উঠে আসুক সিনেমায়, চাইতেন বিপিন রাওয়াত
সম্প্রতি ২১ বছরের খরা কাটিয়ে ভারতবর্ষকে মিস ইউনিভার্সের খেতাব এনে দিয়েছেন পঞ্জাবের মেয়ে হরনাজ সান্ধু। সৌন্দর্যের সঙ্গে হরনাজের তুখোড় বুদ্ধিমত্তা আকৃষ্ট করেছে বিচারক থেকে দর্শক সকলকেই। স্নাতক পেরিয়ে স্নাতকোত্তরে ঢুকেছেন হরনাজ। ডাক্তার মায়ের সঙ্গে নিয়মিত স্বাস্থ্যশিবির সামলান। ভালবাসেন ঘোড়ায় চড়তে, আবার অবসরে লিখে ফেলেন কবিতাও। আবার বছরখানেক আগে মিস ওয়ার্ল্ডের খেতাব জিতে নেন হরিয়ানার মেয়ে মানুষী চিল্লার। ডাক্তারির ছাত্রী মানুষী একজন পেশাদার কুচিপুড়ি নৃত্যশিল্পীও।
ফলে সুন্দরী নায়িকা বা অভিনেত্রী মানেই যে ব্রেনলেস বিউটি, তা ভাবার দিন কিন্তু গিয়েছে। আজকের দিনে সবটা মিলিয়েই পরখ হয় সৌন্দর্যের। অন্তত ঐশ্বর্য, হরনাজ বা মানুষীর মতো মডেলরা তো সেই বার্তাই দিচ্ছেন।