ভারতীয় রাজনীতিতে তিনি ছিলেন সবথেকে বর্ণময় চরিত্র। কঙ্গনাই প্রিয়দর্শিনীর চরিত্রে প্রথম নয়। এর আগেও বহু অভিনেত্রী এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন। সুচিত্রা থেকে শুরু করে লারা দত্ত। কতটা মানিয়েছিল সেই চরিত্রে তাঁদের? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ভারতীয় রাজনীতিতে তিনি বর্ণময় চরিত্র। আর সেই বর্ণময়তাই যেন একাধিক বার পর্দায় ফিরিয়ে এনেছে প্রিয়দর্শিনী ইন্দিরা গান্ধীকে। কঙ্গনা রানাউতের সাম্প্রতিক ছবি ‘এমার্জেন্সি’, ইন্দিরা আর ইন্দিরা জমানাকে কেন্দ্র করেই। সে-ছবিতে ইন্দিরার চরিত্রে অভিনয় করে ইতিমধ্যেই দর্শকের প্রশংসা পেয়েছেন তিনি। বহুদিন পর ইন্দিরা হয়ে ফ্লপের খরাও কাটিয়েছেন কঙ্গনা। আর সেই সূত্রেই সিনেপ্রেমীদের মনে ফিরে ফিরে আসছে পর্দার ইন্দিরা-কথা।
১৯৭৫ সালের ছবি ‘আঁধি’, যেখানে মহিলা রাজনীতিবিদের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সুচিত্রা সেন। গুলজারের সে ছবিতে সরাসরি ইন্দিরার উল্লেখ ছিল না বটে। তবে আরতি দেবীর মধ্যে ইন্দিরা-ছায়া দেখেছিলেন দর্শক। একজন মহিলা রাজনীতিক, যিনি তাঁর প্রশাসনিক ক্ষমতা আর ব্যক্তিজীবনের মধ্যে সমন্বয় খুঁজছেন, ভারসাম্য খুঁজছেন। আদতে সে এক প্রেমের ছবিই। তবে সেই সময়ের নিরিখে কাহিনি অনুসারে এই দৃঢ়চেতা রাজনীতিককে ইন্দিরাই ধরে নিয়েছিলেন সকলে। তবে, ইন্দিরা-সুলভ বৈশিষ্ট্য হুবহু চরিত্রের মধ্যে ছিল না। বরং চরিত্রটি হয়ে উঠেছিল সুচিত্রা-স্বকীয়তায় ভাস্বর। আবার, ২০১২ সালে রুশদির ‘মিডনাইটস চিলড্রেন’ যখন পর্দায় এল, তখন এবার পাওয়া গেল ইন্দিরার ইঙ্গিত। এখানেও সরাসরি উল্লেখ নেই। তবে, ঘটনাপ্রবাহ যেন জরুরি অবস্থাকেই চিনিয়ে দিচ্ছিল। ফলত সরিতা চৌধুরী অভিনীত চরিত্রটির নেপথ্যে যে ইন্দিরার ইতিহাসই, তা মিলিয়ে নিয়েছেন সিনে বিশেষজ্ঞরা।
:আরও শুনুন:
পর্দায় ইন্দিরা হয়ে হল কী! ‘এমার্জেন্সি’ করে নাকি ভুল হয়েছে! সেন্সরে পড়ে আক্ষেপ কঙ্গনার
পরবর্তী সময়ে অনেক সিনেমাতেই কাহিনিসূত্রে এসেছেন স্বয়ং ইন্দিরা। সেখানে আর রূপকের আড়াল নেই, কাহিনির ব্যঞ্জনা দিয়ে সূক্ষ্ম ফারাকের প্রশ্ন নেই। অতএব ইন্দিরাকেই পর্দায় পেয়েছেন দর্শক। মধুর ভাণ্ডারকরের ছবি ‘ইন্দু সরকার’-এ সুপ্রিয়া বিনোদকে পাওয়া গিয়েছিল ইন্দিরার ভূমিকাতেই। অক্ষয় কুমার অভিনীত ‘বেল বটম’ ছবিটি ইতিহাসের ঘটনার আধারেই তৈরি হয়েছিল। সুতরাং সেখানে ইন্দিরা থাকলেন স্বমহিমাতেই। আর ইন্দিরার ভূমিকায় সকলকে রীতিমতো চমকে দিয়েছিলেন লারা দত্ত। অনেকে বলে থাকেন, ইন্দিরা হিসাবে তিনিই এখনও পর্যন্ত সবথেকে মানানসই। আরও পরে ‘শ্যাম বাহাদুর’ ছবিতে ফতিমা সানা শেখকে পাওয়া গেল তরুণ ইন্দিরা হিসাবে। তবে দর্শকের অভিমত ছিল, ইন্দিরার থেকেও ফতিমা সানা শেখকে যেন অনেকটা প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর মতোই লেগেছে। এই পরম্পরা ধরেই এবার কঙ্গনা রানাউত হয়েছেন ইন্দিরা। তাঁর ছবি নিয়ে নানা বিতর্ক থাকলেও, ইন্দিরা চরিত্রে কঙ্গনার অভিনয় সমালোচকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। আর সেই সূত্রে তুলনাও উঠে এসেছে। লারা দত্ত নাকি কঙ্গনা রানাউত, ইন্দিরা চরিত্রকে কে বেশি জীবন্ত করে তুলেছেন, তা নিয়ে জোর আলোচনা সিনেপ্রেমীদের।
দেশের রাজনীতিতে ইন্দিরা-অধ্যায় যেমন বিতর্কিত, তেমনই আলোচিত তাঁর চারিত্রিক দৃঢ়তা। ইতিহাসবিদদের মধ্যে যেমন তাঁকে নিয়ে আলোচনা, তাঁর শাসন-পদ্ধতি নিয়ে সমালোচনা, তেমনই তাঁর ব্যক্তিত্বের আকর্ষণ প্রভাবিত করেছে কাহিনিকারদের। রূপকের আড়ালে হোক বা সরাসরি, যেভাবে বহুবার পর্দায় ফিরেছেন প্রিয়দর্শিনী, তা বোধহয় আর কোনও ভারতীয় রাজনীতিবিদকে নিয়েই হয়নি। ইন্দিরা চরিত্রের চুম্বক আকর্ষণ যে আজও অটুট, এই সিনে-পরম্পরা যেন তাই-ই প্রমাণ করে।