আর জি কর কাণ্ডের আবহে যে কোনোরকম হেনস্তা নিয়েই সরব হয়েছেন নারীরা। এর মধ্যেই ঝড় তুলেছে মালয়ালম ছবির জগতে অভিনেত্রীদের হেনস্তার অভিযোগ। তাঁদের প্রতিবাদ কি অন্য কর্মক্ষেত্রের মহিলাদেরও সাহস জোগাবে এবার?
আর জি কর কাণ্ড যেমন একদিকে মেয়েদের বিপন্নতাকে সামনে এনেছে, তেমনই এই ঘটনার জেরে যেন প্রতিবাদের বাঁধও ভেঙেছে। এতদিন যে মেয়েরা হেনস্তার সামনে বিপন্ন হয়েছেন, আবার প্রতিবাদ করতে গেলেও ভয় পেয়েছেন নতুন কোনও বিপন্নতার, তাঁরা অনেকেই এখন সাহস জুগিয়ে সামনে এগিয়ে আসছেন। সব ক্ষেত্রে মেয়েদের নানাভাবে দমিয়ে রাখা, পিছিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে অধিকার দখলের আওয়াজ তুলেছেন তাঁরা। আর এই পরিস্থিতিতেই সামনে আসছে অন্য আরও অনেক হেনস্তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের স্বর। যার মধ্যে অন্যতম মালয়ালম ছবির জগতে হেনস্তার অভিযোগ।
আরও শুনুন:
যৌনকর্মী, কিন্তু ‘ভালো মেয়ে’! দর্শকের খিদে মেটাতে যে পথে হেঁটেছে বলিউড
সম্প্রতি মালয়ালম চলচ্চিত্র জগতে যৌন হেনস্থা নিয়ে রিপোর্ট পেশ করেছে হেমা কমিশন। আর গত ১৯ অগস্ট হেমা কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই কার্যত ধস নেমেছে দক্ষিণী বিনোদন দুনিয়ায়। রিপোর্ট অনুযায়ী, মালয়ালম ছবির অভিনেতা সিদ্দিকী, পরিচালক রঞ্জিত বালকৃষ্ণন-সহ একাধিক খ্যাতনামীর বিরুদ্ধে অভিনেত্রীদের হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে। রঞ্জিত বালকৃষ্ণনের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ এনেছিলেন বাংলার অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্রও। কেরল পুলিশে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন তিনি। প্রাথমিকভাবে অভিযোগ অস্বীকার করলেও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কেরলের সরকারি সংস্থা ‘কেরল চলচ্চিত্র অ্যাকাডেমি’ থেকে পদত্যাগ করেন রঞ্জিত। এদিকে মালয়ালম অভিনেতা পৃথ্বীরাজ সুকুমারন স্বীকার করে নিয়েছেন, ‘অ্যাসোসিয়েশন অফ মালায়ালম মুভি আর্টিস্টস’ যৌন হয়রানির অভিযোগগুলির সঠিক সমাধান করতে পারেনি। দায় স্বীকার করে ওই সংগঠনের সভাপতির পদ ত্যাগ করেছেন মোহনলাল, তাঁর সঙ্গে কার্যনির্বাহী কমিটির সকল সদস্য পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।
আরও শুনুন:
যৌন হেনস্তার শিকার প্রায় সকলেই! কত বয়সে? ভয়াবহ অভিজ্ঞতা উঠে আসছে সোশাল মিডিয়ায়
যদিও, সিনে মহল নিয়ে ওয়াকিবহালেরা বলছেন, মালয়ালম ছবির জগতে অভিনেত্রীদের হেনস্তার ঘটনা নতুন নয়। এর আগেও একাধিকবার সরব হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন আক্রান্তেরা। কিন্তু, প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে তাঁদের স্বর চাপা পড়ে থেকেছে। তবে এবার ছবিটা বদলেছে। একসঙ্গে অনেক অভিনেত্রী মুখ খোলায় অভিযোগের জোর বেড়েছে। সকলকে একসঙ্গে চুপ করিয়ে দেওয়াও সহজ নয়। বিশেষ করে হেমা কমিটির রিপোর্ট প্রশাসনের উপরমহল পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে। আশা করা যায়, এই সাহস অন্যান্য ক্ষেত্রের মেয়েদের মনেও সাহস পুরে দেবে অনেকখানি। হয়তো তাঁরাও এবার মুখ খোলার সাহস পাবেন। আর, একটি অন্যায়ের সমাধান হতে দেখলে তো সত্যিই আশা জাগে যে, আরও একটি অন্যায়ের ক্ষেত্রেও পদক্ষেপ করা হবে। প্রভাবশালীরা যেমন ভয় দেখিয়েই বাকিদের ভয় পাইয়ে মুখ বন্ধ করে রাখার চেষ্টা করেন, একইভাবে একজনের সাহস অন্য অনেকের ভয়ও কাটিয়ে দেয়। মালয়ালম ইন্ডাস্ট্রির প্রতিবাদী মেয়েরা অন্য কর্মক্ষেত্রের মহিলাদেরও সেই ভয় কাটিয়ে ওঠার সাহস জোগাবেন, এমনটাই আশা করা যায়।