পর্দার মতো জীবনের ক্ষেত্রেও সপাট অভিনেত্রী কুবরা সইত। আগে এক সাক্ষাৎকারে পর্ন ছবি দেখার কথা খোলাখুলি স্বীকার করেছিলেন তিনি। আর এবার নিজের আত্মজীবনীতে তিনি লিখলেন, কিশোরী বয়সে কীভাবে তাঁকে নিয়মিত যৌন হেনস্তা করতেন এক পরিচিত ব্যক্তি। কী জানিয়েছেন সেক্রেড গেমসের অভিনেত্রী? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
রুপোলি পর্দায় অভিনয় করার ক্ষেত্রে বরাবরই সাহসী কুবরা সইত। অনুরাগ কশ্যপের নির্দেশনায় ‘সেক্রেড গেমস্’ ওয়েব সিরিজে এক তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের চরিত্রে দ্বিধাহীন অভিনয় করেছিলেন তিনি। চরিত্রের চাহিদার কারণে পরেছিলেন প্রস্থেটিকের তৈরি লিঙ্গ, এমনকি ক্যামেরার সামনে নগ্ন হতেও আপত্তি করেননি। সহ-অভিনেতা নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকির সঙ্গে তাঁর অভিনীত যৌনদৃশ্যগুলি যখন পর্ন সাইটে ছড়িয়ে পড়ে, তা নিয়েও বিচলিত হননি অভিনেত্রী। তিনি এমনটাই। নিজের অবস্থানে দৃঢ়, নিজের কাছে স্পষ্ট। কোনও ছুঁতমার্গের কাছে তাই হার মানতে নারাজ কুবরা সইত। নিজের সাম্প্রতিক বইয়ে ফের সেই কথারই যেন প্রমাণ দিলেন তিনি।
আরও শুনুন: ক্যামেরার সামনে নগ্ন হয়েছেন সাত বার, পর্ন দেখা নিয়েও সাহসী Kubbra Sait
সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে কুবরা সইত-এর লেখা বই, ‘ওপেন বুক: নট কোয়াইট আ মেমোয়্যার’। অভিনয়ে যেমন, লেখার ক্ষেত্রেও তেমনই সততার পরিচয় দিয়েছেন সেক্রেড গেমসের অভিনেত্রী। অকপটে তুলে ধরেছেন শৈশবে তাঁর সঙ্গে হওয়া যৌন হেনস্তার কথা। তিনি জানিয়েছেন, কীভাবে তাঁকে নিয়মিত শারীরিকভাবে ব্যবহার করতেন এক পারিবারিক বন্ধু। এক-দুদিন নয়, আড়াই বছর ধরে এই যন্ত্রণা সহ্য করেছিলেন সেদিনের কিশোরী মেয়েটি। আর তার কারণ ছিল একটাই। নিজের পরিবারকে বাঁচানোর জন্যই এ সবকিছু মুখ বুজে মেনে নিয়েছিলেন কুবরা সইত।
অভিনেত্রী জানিয়েছেন, তখন তাঁর বয়স মাত্র ১৭। বেঙ্গালুরু শহরের এক রেস্তরাঁয় নিয়মিত যাওয়ার সুবাদে সেই রেস্তরাঁর মালিক তাঁর পরিবারের ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। এমনকি, তাঁদের টানাটানির সময়ে কুবরা-র মাকে আর্থিকভাবেও সাহায্য করেন ওই ব্যক্তি। কিন্তু ওই সাহায্যের আড়ালে জারি ছিল সুযোগ নেওয়ার গল্প। এই লেনদেনের সময় গাড়িতে বসেছিলেন তাঁরা। কুবরা জানিয়েছেন, টাকা হাতে পেয়ে মা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন, তিনিও। আর তারপরেই তিনি অনুভব করলেন, পোশাকের তলায় কোনও অপরিচিত হাত তাঁর শরীর ছুঁয়ে যাচ্ছে। এই আকস্মিক আক্রমণের মুখে পরে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল সেদিনের কিশোরী। কিন্তু সেখানেই শেষ হয়নি যন্ত্রণার পালা। এরপর বাড়িতেও আনাগোনা বাড়ে ওই ব্যক্তির। উপকারী বন্ধুটির জন্য মা রান্না করতেন, তাঁর সঙ্গে গল্পগুজব করতেন, আর অন্যদিকে ভয়ে সিঁটিয়ে থাকতেন কুবরা। মায়ের সামনেই কুবরাকে চুম্বন করতেন ওই ব্যক্তি। কুবরাকে বারবার বারণ করতেন তাঁকে ‘কাকু’ বলে ডাকতে। তাঁকে হোটেলের ঘরে নিয়ে গিয়ে কীভাবে যৌন পীড়ন চালিয়েছিলেন সেই ব্যক্তি, সে কথাও দ্বিধাহীনভাবে জানিয়েছেন কুবরা সইত। অথচ ওই ব্যক্তিটি বিবাহিত, একটি সন্তানও ছিল তাঁর। এমনকি, কুবরা জানিয়েছেন, তাঁকে নিয়মিত হেনস্তা করে চলার ওই সময়কালে আরও একটি সন্তানের পিতা হন ওই ব্যক্তি।
আরও শুনুন: ডাক্তারের হাতে যৌন হেনস্তার শিকার, মুখ ফুটে মায়ের কাছেও বলতে পারেননি অভিনেত্রী
গোটা সময়টা জুড়ে কুবরা আত্মরক্ষার জন্য কিছুই করে উঠতে পারেননি, এমনকি কাউকে এসব কথা বলতেও পারেননি। যেমনটা এদেশের অধিকাংশ মেয়ের জীবনেই ঘটে থাকে। না, ‘লোকে কী বলবে’ এই ভয় থেকে নয়, কুবরা ভয় পেয়েছিলেন, এর প্রতিবাদ করলে তাঁর পরিবারকে শেষ করে দেবেন ওই ব্যক্তি। কারণ বারবার তেমন হুমকি পেয়েছিলেন তিনি। পাশাপাশি, ওই ব্যক্তি যখন তাঁদের পরিবারকে সাহায্য করতে অস্বীকার করেন, তখন কুবরা ঝগড়াঝাঁটি করেছেন ভেবে তাঁর মা উলটে মেয়েকেই তিরস্কার করেছিলেন।
সেই সময় তাঁর দেহ মন সবকিছু মরে গিয়েছিল, খোলাখুলি লিখেছেন কুবরা সইত। তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় এই ট্র্যাজেডির কথা বহু বছর পরে মাকে জানিয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন, প্রায় তাঁর চোখের সামনেই কীভাবে যৌন হেনস্তার শিকার হতে হয়েছিল তাঁর মেয়েকে। খুব সম্প্রতি এই ঘটনার জন্য তাঁর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন তাঁর মা, এ কথাও লিখেছেন অভিনেত্রী।
যৌন হেনস্তার বিষাক্ত অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় এদেশের অনেক মেয়েকেই। আরও দুর্ভাগ্যের কথা, সেই অভিজ্ঞতার জন্য অধিকাংশ সময়েই দায়ী থাকেন কোনও পরিচিত ব্যক্তিই। এর ব্যতিক্রম হয়নি কুবরা সইতের জীবনেও। কিন্তু দেরিতে হলেও, সে কথা সকলের সামনে খুলে বলার মতো সাহস দেখাতে পেরেছেন তিনি। আর সেই কাজের জন্যই কুর্নিশ আদায় করে নিতে পারেন এই সাহসী মেয়েটি।