রাতভর বৃষ্টির মধ্যে শুটিং হয়েছে। তাও আবার সাধারণ কোনও দৃশ্য নয়। ক্যামেরার সামনে রীতিমতো ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত তৈরি করেছেন অমিতাভ-স্মিতা। সেই গান এখনও সবার মুখে মুখে ফেরে। কিন্তু এই শুটিং শেষ করেই কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন নায়িকা স্মিতা পাতিল। কেন জানেন? আসুন শুনে নিই।
‘আজ রপট যায়ে তো হামে না উঠাইয়ো’… বৃষ্টির দিনে মনের অন্দরমহলে প্রেমের পদাবলি গুনগুনিয়ে উঠলে অনেকেই এ গান গেয়ে ওঠেন। আর উঠবেন নাই-বা কেন। অমিতাভ-স্মিতা মিলে বর্ষার যে ক্ল্যাসিক্যাল রোমান্স পর্দায় বুনে দিয়েছেন তার কি তুলনা হয়! ঝরঝর বৃষ্টির ভিতর খুব কাছাকাছি তাঁরা। তখন তো তাঁরা আর কেবল সিনেমার চরিত্র নয়। যেন বর্ষার আড়ালে এসে দাঁড়িয়েছেন চিরকালের দুই মানব-মানবী। এমন দিনে তো তারে বলা যায়… বলা যায় সেই কথাটি। অতএব দু-পল ছাতার ওপারে চলে গেলের দুজনেই। আর তারপরেই দর্শকমনের কৌতূহল মেটাতেই যেন দমকা হাওয়ায় উড়ে গেল বেয়াড়া ছাতা। আর ওঁরা দুজন ধরা পড়ে গেলেন আমাদের সামনে। সিক্তবসনা সুন্দরীর সেই সলাজ মুখশ্রী আমাদের বলে দিয়ে গেল, এই শ্রাবণের বুকের ভিতর আগুন আছে। আর যে জলে আগুন জ্বলে, সেখানে দাঁড়িয়ে চিরকালের সেই পুরুষটি আর কী বলবে! হয়তো বলবে এই কথাটিই যে, আজ রপট যায়ে তো হামে না উঠাইয়ো…।
আরও শুনুন: ৭০ ছুঁইছুঁই বয়সেও ‘ফ্যান্টাসি কুইন’! ‘ভোগ’-এর কভার থেকে এবার রেখার আবির্ভাব বার্বি লুকে
এ গান আমাদের বৃষ্টিনেশা ভরা ফ্যান্টাসিকে যে জায়গাতেই পৌঁছে দিক না কেন, গানের শুটিং কিন্তু করুণ কাহিনি হয়েই নেমে এসেছিল অভিনেত্রী স্মিতা পাটিলের কাছে। শোনা যায়, শুটিং করেছেন আর রাতভর কেঁদেছিলেন তিনি। অথচ দৃশ্য দেখে দর্শক তা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি। কিন্তু কেন কাঁদবেন স্মিতা? তা-ও আবার এরকম রোম্যান্টিক গানের শ্যুটিং-এ। নমক-হালাল ছবির এ দৃশ্যে তো তাঁকে বেশ হাসিখুশিই দেখা গিয়েছে। বৃষ্টিভেজা সলাজ রমণী হয়ে কত পুরুষের বুকে যে তিনি যমুনার ঢেউ তুলেছেন তার ইয়ত্তা নেই। তাহলে কান্না এল কোথা থেকে? আসলে, বৃষ্টির সুরবাহারে যে রোমান্স পরিচালক ভেবেছিলেন, তা পর্দায় ফুটিয়ে তোলা সহজ নয়, বারেবারে নায়কের সঙ্গে অমোঘ ঘনিষ্ঠতায় জড়িয়ে পড়তে হচ্ছিল নায়িকাকে। শরীরে শরীর মিশিয়ে, ঠোঁটে ঠোঁট রেখে ফুটিয়ে তুলতে হচ্ছিল বাসনাকুসুম। এমনকী পরনের পোশাকটিও তো কেড়ে নিয়ে গিয়েছিল বৃষ্টির অবিরল ধারা। অতএব শুটিং মোটেও সহজসাধ্য ছিল না। আর স্মিতা যে ঘরানার অভিনেত্রী, তাতে এরকম দৃশ্যে অভিনয় আরও কঠিন ছিল তাঁর কাছে। তাই শুটিং-এর মাঝেই বার বার বিরতি নিতে হচ্ছিল তাঁকে। সমানে কেঁদে যাচ্ছিলেন তিনি। ঠিক করেছিলেন শুটিং না শেষ করেই ফিরে যাবেন। অবশেষে খোদ অমিতাভ তাঁকে বোঝান। এবং শেষ হয় গানের শুটিং। অমিতাভের কথায়, স্মিতা অত্যন্ত ভদ্র, তাই এই ধরনের দৃশ্যে অভিনয় করার জন্য ঠিকমতো প্রস্তুত করতে পারছিলেন না নিজেকে। তবে এই গানের দৃশ্যের কথা বাদ দিলে, অভিনেত্রী হিসেবে তিনি যথেষ্টই পরিচিত। মাত্র ৩৪ বছর বয়সে মারা যান। কিন্তু এর মধ্যেই বিভিন্ন ভাষায় ৮০টিরও সিনেমায় অভিনয় করেন স্মিতা। স্মৃতিচারণায় এই অভিনেত্রীর কথা মনে করেই,’নমক হালাল’ সিনেমার এই গল্প ভাগ করে নিয়েছেন অমিতাভ।