আকাশবাণীতে নিষিদ্ধ ছিল হারমোনিয়াম। এ তথ্য জানতেন না শ্রেয়া ঘোষাল। প্রশ্ন শুনে বেজায় ঘাবড়ে যান। তবে সঙ্গী সোনু জানতেন। তিনিই ত্রাতা হয়ে উত্তর দেন। সম্প্রতি জনপ্রিয় এক রিয়ালিটি শো-তে এই জুটির পারফরম্যান্স নিয়েই চর্চায় বুঁদ নেটদুনিয়া। কিন্তু আকাশবাণীতে হারমোনিয়াম কেন বন্ধ ছিল, সেকথা জানেন? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
হারমোনিয়াম। যে কোনও গানে যোগ্য সঙ্গত হিসেবে এই যন্ত্র ব্যবহার করা যেতে পারে। গান শেখার শুরুতে অনেকেই হারমোনিয়ামে সরগম অভ্যাস করেন। নিয়মিত হারমোনিয়ামে রেওয়াজ করার অভ্যাস অনেক বড় বড় গাইয়ের রয়েছে। তবে আকাশবাণীতে এই যন্ত্র নিষিদ্ধ ছিল প্রায় ৩০ বছর।
আরও শুনুন:
বৈদ্যুতিন গণপরিবহণে জোর বিশ্বের, কলকাতায় কি আবার ফিরবে ট্রাম?
সম্প্রতি ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’-তে অংশ নিয়েছিলেন শ্রেয়া ঘোষাল ও সোনু নিগম। অনুষ্ঠানের শেষদিকে তাঁদের কাছে প্রশ্ন যায়, কোন যন্ত্র আকাশবাণীতে ৩০ বছর নিষিদ্ধ ছিল? শ্রেয়া এ প্রশ্নের উত্তর জানতেন না। কিন্তু সোনু চট করে উত্তর দেন, হারমোনিয়াম। এই উত্তরই সঠিক। অনুষ্ঠানের নিয়ম মেনে পুরস্কারও জেতেন সোনু-শ্রেয়ার জুটি। কিন্তু আকাশবাণীতে হারমোনিয়াম কেন আকাশবাণীতে নিষিদ্ধ ছিল জানেন?
নেপথ্যে রয়েছে স্বদেশী আবেগ। আসলে, হারমোনিয়াম বিদেশি যন্ত্র। একসময় ইউরোপের বিভিন্ন চার্চে প্রার্থনার সময় এই যন্ত্র সঙ্গত হিসেবে রাখা হত। আসলে, পাইপ ইন্সট্রুমেন্ট রাখার মতো সামর্থ অধিকাংশ চার্চের ছিল না। তারাই হারমোনিয়ামকে সেই কাজে ব্যবহার করত। বিদেশীদের হাত ধরে এই যন্ত্র ভারতে আসে। তার আগে মূলত তানপুরা ব্যবহার করা হত সুর সঙ্গতের জন্য। হারমোনিয়াম আসার পর তানপুরা বন্ধ হয়নি কোনওভাবেই। তবে ছোট যন্ত্র হিসেবে হারমোনিয়াম জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। স্বাভাবিক ভাবেই রেডিও অনুষ্ঠানে হারমোনিয়াম বাজিয়ে গানের চল ছিল। তবে এই যন্ত্রের ব্যবহার নিয়ে খুব একটা খুশি ছিলেন না এ দেশের অনেকেই। তালিকায়, রবীন্দ্রনাথ, নেহেরুর মতো ব্যক্তিত্বও ছিলেন। নানাভাবে হারমোনিয়াম ব্যবহার বন্ধের কথা বলতেন এঁরা। শুধু বিদেশি যন্ত্র হিসেবে নয়, আরও কারণ ছিল। যার মধ্যে সুরের তারতম্য ছিল প্রধান। অনেকেই দাবি করতেন , সব গানের সুর সঠিক ভাবে হারমোনিয়ামে বাজানো সম্ভব নয়। ওক্টেভ নিয়েও অভিযোগ ছিল বড় বড় গাইয়েদের মধ্যে। সব দিক বিবেচনা করে ১৯৪০ সালে রেডিও-তে হারমোনিয়াম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এই নিয়ে সেই সময় বিস্তর লেখালেখি হয়েছিল। ঘটা করে হারমোনিয়ামের শেষকৃত্যও অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ৩০ বছর এই ব্যান জারি ছিল। ১৯৭০ সালে নতুন করে হারমোনিয়াম ব্যবহার চালু হয় আকাশবাণীতে। এই কয়েক বছরে হারমোনিয়াম একাধিক বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। বর্তমানে যে হারমোনিয়াম ব্যবহার করা হয় তাতে ভারতীয় কারিগরদের হাতের জাদু মিশে রয়েছে ভালমতো।
আরও শুনুন:
ট্রাম থাকতে যে ট্রামের মর্ম বোঝে না, সে-ই বাঙালি
শুধু রেডিও নয়। ধর্মীয় গানের ক্ষেত্রেও এই যন্ত্র বেশ জনপ্রিয়। গুরুদ্বার বা দরগাতে হারমোনিয়াম বাজাতে দেখা যায় নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে। বাঙালি বাড়িতেও হারমোনিয়াম নিয়ে আলাদা রকমের নষ্টালজিয়া রয়েছে। মোটের উপর এই যন্ত্র যে ভারতীয় নয় তা অনেকেই জানেন না। বর্তমানে হারমোনিয়াম তৈরিতেও ভারতই সবথেকে এগিয়ে বলা যায়। শ্রেয়া-সোনুর অনুষ্ঠানে নতুন করে সে প্রসঙ্গ ফিরেছে। এমনিতে কৌন বনেগা ক্রোড়পতি-তে প্রায়শই সেলিব্রিটিরা অংশ নেন। তাঁদের বেশিরভাগই নিজেদের জেতা টাকার অঙ্ক বিশেষ কাজে ব্যবহার করেন। সোনু-শ্রেয়াও ব্যতিক্রম ছিলেন না। অনুষ্ঠান থেকে জেতা মূল্য এক বৃদ্ধাশ্রমে দান করার কথা শুরুতেই ঘোষণা করে দেন তাঁরা। মোট ২৫ লক্ষ টাকা জিতে সেদিনের অনুষ্ঠান শেষ করেন সোনু-শ্রেয়া। অনুষ্ঠানের ফাঁকে বেশ কয়েকটি গান গেয়েও শোনান। সবমিলিয়ে এদিনের অনুষ্ঠান জমিয়ে দেন এ দেশের প্রথম সারির এই সুরেলা জুটি।