সবসময় মুখে পান থাকা চাই! এই ছিল হীরামান্ডির বাইজিদের অভ্যাস। অন্তত পর্দায় তাঁদের জীবন সম্পর্কে এমনটাই দেখিয়েছেন বনশালি। কিন্তু এমন অভ্যাসের কারণ কী? নেহাতই ঠোঁটে রঙের বাহার নাকি খিদে মেটাতে এত পান খেতেন বাইজিরা? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
শিল্পের কোনও কাঁটাতার হয় না। যে কোনও দেশের শিল্পকে যে কোনও দেশের দর্শক উপভোগ করতে পারেন। তেমনই যে কোনও দেশের শিল্পী তাঁর ক্যানভাসে ধরতে পারেন স্থান-কাল-পাত্র নির্বিশেষে যে কোনও বিষয়কে। বলিউডে এমন উদাহরণ রয়েছে ভুরি ভুরি।
সম্প্রতি সঞ্জয় লিলা বনশালি পরিচালিত হীরামান্ডি নিয়ে বেশ চর্চা চলছে। বাস্তবে এই ‘হীরামান্ডি’, পাকিস্তানের যৌনকর্মীদের বাজার। সিরিজে পাকিস্তানের সেই বিশেষ অঞ্চলের বাইজিদের জীবনই তুলে ধরেছেন বনশালি। প্রথমে অবশ্য এই নিয়ে বেশ বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। একজন ভারতীয় পরিচালক পাকিস্তানের কোনও বিষয় নিয়ে ছবি করছেন কেন, এই অভিযোগেই সরব হয়েছিল নেটদুনিয়ার একাংশ। মূলত পাকিস্তানের তরফেই এসেছিল অভিযোগ। বনশালি সেদিকে তেমন পাত্তা দেননি। ফলত কিছুদিনের মধ্যেই হীরামান্ডি অনেকের পছন্দের তালিকায় জায়গা করে নেয়। কাজেই সিরিজের কিছু কিছু সংলাপ, নাচের কায়দাও বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে নেটিজেনদের কাছে। চর্চায় উঠে আসে হীরামান্ডির ইতিহাসও। জানা যায়, হীরামান্ডি আসলে উর্দু শব্দ। এর আক্ষরিক অর্থ হিরের বাজার। পাকিস্তানের লাহোরে এই নামেই একটি বাজার বসিয়েছিলেন হীরা সিং-এর ছেলে ধিয়ান সিং ডোগরা। মূলত শস্যের বাজার হলেও, ক্রমে ক্রমে এখানে আসর জাঁকিয়ে বসেন বাইজি ও বারবণিতারা। বিশেষ করে ১৫-১৬ শতকে মুঘল আমলে এই বাজারের আরও রমরমা বাড়ে। আফগানিস্তান ও উজবেকিস্তান থেকে নারীদের নিয়ে আসা হত এই বাইজিদের বাজারে। দিনের বেলায় যা ছিল জিনিসপত্রের বাজার, রাতে রূপ বদলে যেত তারই। শোনা যায় এখানকার বাইজিদের অভ্যাস ছিল পান খাওয়া। বনশালিও তাঁর সিরিজে সেই অভ্যাস ভালোভাবে দেখিয়েছেন। তাতেই নেটদুনিয়ায় এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, কেন ওমন অভ্যাস ছিল হীরামান্ডির বাইজিদের?
আসলে, স্রেফ হীরামান্ডি নয়, এইধরনের পেশার সঙ্গে যুক্ত মহিলাদের পান খাওয়ার অভ্যাস অস্বাভাবিক নয়। কারণ অবশ্য একাধিক। কেউ কেউ মনে করেন, ঠোঁটের রং সবসময় লাল করে রাখতেই পান খেতেন বাইজিরা। কেউ আবার বলেন পান খেলে হজমের সমস্যা ঠিক হয়, চেহারায় লালিত্য ফুটে ওঠে, তাই পান খাওয়ার অভ্যাস। যদিও এমনটাও শোনা যায়, খিদে মেটাতেও দীর্ঘক্ষণ মুখে পান রাখতেন বাইজিরা। তবে অনেকেই এমনটা মনে করেন, পান খাওয়া বাইজিদের নিজস্ব কায়দার মধ্যে পড়ে। এই অভ্যাস তাঁদের চেহারায় বিশেষ এক ছাপ ফুটিয়ে তোলে। যা কোথাও গিয়ে তাঁরা যে আলাদা, সেটা নির্দিষ্ট করে। তবে কারণ যাই হোক, সিরিজে অভিনয়ের সময়ও যথেষ্টই পান খেতে হয়েছে হীরামান্ডির অভিনেত্রীদের। পর্দায় যেন সবকিছু এক্কেবারে সঠিক মনে হয়, তার জন্যই ডিরেক্টরের কড়া নির্দেশ ছিল। সেই কারণেই হাজার সমালোচনা কাটিয়ে নেটদুনিয়ার ভালোবাসা কুড়িয়েছে হীরামান্ডি।