ক্ষমতার দখলের লড়াই। কিন্তু সেখানে কে রাজা, কে উজির বোঝা দায়! গায়ের জোরে কেউ বাজিমাত করছেন, পরক্ষণেই বুদ্ধির জোরে কিস্তমাত করলেন অন্যজন। কিন্তু শেষ হাসি হাসলেন কে, তা শেষ বেলাতেও বোঝা দায়। মির্জাপুরের তৃতীয় সিজন অন্তত এমনটাই দেখাল। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
৬৪ ঘরের খেলা। দু’পক্ষে ১৬ জন যোদ্ধা। তার মধ্যে, রাজা, মন্ত্রী, সৈন্য সবাই রয়েছেন। জেতার জন্য বিপক্ষের রাজাকে কিস্তিমাত করতে হবে। দাবার নিয়মের সঙ্গে যে কোনও ক্ষমতা দখলের লড়াইকেই তুলনা করা যায়। ব্যতিক্রম ‘মির্জাপুর’। জনপ্রিয় এই হিন্দি সিরিজ আগাগোড়া ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে দেখিয়েছে। কিন্তু সিরিজের তৃতীয় সিজনে পৌঁছেও বোঝা গেল না, আসলে কোন রাজাকে সরালে কিস্তিমাত হবে!
আরও শুনুন: পঙ্কজ-মনোজ-নওয়াজ নন, OTT-তে কাজের জন্য সবথেকে বেশি পারিশ্রমিক কোন তারকার?
মির্জাপুর ১ রিলিজের ৬ বছর পেরিয়েছে। ওটিটি দুনিয়া সারা ফেলে দেওয়া এই সিরিজ এতদিনে পেরিয়েছে তিন তিনটি সিজন। সামনে এসেছে একাধিক চরিত্র। গল্পের মোড় ঘুরেছে বহুবার। ক্ষমতা হারিয়ে রাজা হয়েছেন ফকির। কখনও আবার মৃত্যর অনেকটা কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছেন। আহত হয়েছেন। জ্ঞান হারিয়ে পরে থেকেছেন দিনের পর দিন। সিরিজের এই সিজনে পরতে পরতে সাসপেন্স নেই। রয়েছে প্রতি হিংসা। প্রথম দুই সিজনে যে চরিত্ররা নিজেদের জায়গা তৈরি করেছে। এই সিজনে তাঁদের অনেকেই রাজ সিংহাসনের দাবিদার। রাজা নিজেও সিংহাসন ছাড়তে এতটুকু রাজি নন। তাঁর ঝুলিতে রয়েছে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা। তাই জোর না থাকলেও তিনি প্রমাণ করতে পারেন, মুলুক এখনও তাঁরই। তার জন্য যা খুশি করতে পারেন তিনি। আগের দুটো সিজন যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা অনায়াসে পার্থক্য করতে পারবেন, যে এই নতুন সিজন আগের দুটোর তুলনায় অনেক বেশি রক্তমাখা। গুলিবর্ষণে আরও বেশি হিংস্র। এমন কিছু দৃশ্য যা বুঝিয়ে দিচ্ছে, ক্ষমতার মোহ ঠিক কতটা নৃশংস হতে পারে।
আরও শুনুন: সচিবজি থেকে জিতু ভাইয়া, ওটিটির লাইমলাইটে আইআইটি-র জিতেন্দ্র কুমার
বদলেছে চরিত্রের সমীকরণও। এমন কিছু সম্পর্ক সামনে এসেছে যা কল্পনার বাইরে ছিল। প্রথম দুই সিজনে রাজনীতির যোগ বেশ স্পষ্ট ছিল। ক্ষমতার দখলের লড়াইয়ে রাজনীতি যে কতটা ভূমিকা পালন করে, তা বুঝেছিলেন মির্জাপুরের দর্শকরা। এই সিজনেও ব্যতিক্রম হয়নি। তবে এবার রাজনীতির অন্য এক রূপও সামনে এসেছে। এই সিজনে চিরতরে হারিয়েছেন কিছু গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। তাতে অবশ্য সমস্যা তেমন নেই। কারণ নিয়ম অনুযায়ী, রাজা যতক্ষণ রয়েছেন ততক্ষন জারি থাকবে লড়াই। তাই একটা একটা করে ঘুঁটি কমলেই খেলা এগোবে। কিন্তু সেতো দাবার নিয়ম। মির্জাপুরের ক্ষমতার লড়াইকে আদৌ দাবার সঙ্গে তুলনা করা চলে? তৃতীয় সিজন এই প্রশ্ন তুলবে বার বার। কারণ এখানে কে যে আসল রাজা, আর কোন ক্ষমতা দখলের জন্য এত লড়াই তা বোঝা মুশকিল। আপাতভাবে যে লক্ষের দিকে সবাই এগিয়েছে, দেখা গেল সেখান থেকে নতুন লড়াই শুরু হচ্ছে। সিংহাসন একটাই, কিন্তু তার দাবিদার যে মোটেও দুজন নন, তা বলাই বাহুল্য। যারা সামনে এসে লড়ছেন, তাঁদের ক্ষমতার আন্দাজ করা যায়। কিন্তু যিনি আড়ালে রয়েছেন, তাঁকে বাদ দিলে চলবে কীভাবে? তৃতীয় সিজনের আসল মজা সেখানেই। দশ এপিসোডের শেষে গিয়ে মনে হবে অবশেষে সব মিটল। সবার মনেই প্রতিশোধের আগুন প্রায় নিভু নিভু। এরপর আর যাইহোক, ভওকাল হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বরং সিংহাসনে বসলেই নতুন করে সবটা সাজানো হবে। কিন্তু এতেও যে শান্তি নেই তা বোঝা যাবে টাইটেল কার্ড দেখানো শেষ হলে। এমনিতে কোনও সিরিজের পরবর্তী সিজনের আঁচ দেওয়ার জন্য এই ধরনের ব্যবস্থা করা হয়। মির্জাপুর ৩-এও শেষবেলায় বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে চতুর্থ সিজনে কী হতে চলেছে। কিন্তু সেই চমক এমনই, যে কারও মনে হবে এতক্ষনে গল্প শুরু হল। অর্থাৎ তৃতীয় সিজন যেন সবটা আরেকবার মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য। যেসব চরিত্র এই সিজনে নিজেদের যাত্রা শেষ করেছেন, তাঁরা যে স্রেফ সাধারণ সৈন্য তা বোঝা গেল ওই শেষ অংশে। আসল রাজা কে, বা রাজ সিংহাসন কার, তা হয়তো বোঝা যাবে পরের সিজনে পৌঁছেই। এর মাঝে সিংহাসনে যেই বসুন, শান্তি পাবেন না। যে কোনও মুহূর্তে দৈববাণী শুনতে হতে পারে, ‘তোমারে বধিবে যে, গোকুলে বাড়িছে সে’।