‘সুপারস্টার’ রাজেশ খান্না। এমনটা তিনিই প্রথম লিখেছিলেন। বিবাহিত হয়েও সম্পর্কে জড়িয়েছেন হেমা-ধর্মেন্দ্র। এ খবরও সামনে এনেছিলেন তিনি। দিলীপ কুমারের মতো কিংবদন্তিও তাঁকে সমঝে চলতেন। কার কথা বলছি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
তাঁর কলমকে ভয় পেতেন না, এমন বলিউড তারকা খুঁজে পাওয়া কঠিন। তারকাদের অভিনয় সত্ত্বা নয়, তাঁদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কাটাছেঁড়া করতেই স্বছন্দ্যবোধ করতেন। দিলীপ কুমার থেকে ধর্মেন্দ্র, তাঁর নজর থেকে রেহাই পাননি কেউই। যার জেরে বিনোদন জগতে তাঁর পরিচিতিই হয়ে ওঠে ‘ত্রাস’ হিসেবে। কথা বলছি, দেবযানী চৌবল সম্পর্কে। ৭০ দশকে তাঁর নাম শুনলে কাঁপতেন বলিউডের তাবড় অভিনেতারা।
:আরও শুনুন:
‘ভারতীয় হয়ে পাকিস্তানের গল্প কেন?’ যৌনকর্মীদের পাক বাজার নিয়ে ছবি, নিশানায় বনশালি
ইয়েলো জার্নালিজম বা হলুদ সাংবাদিকতা। খবরের দুনিয়ায় এই শব্দবন্ধ বেশ পরিচিত। যা অনায়াসে সাংবাদিকতার যাবতীয় নীতি নৈতিকতাকে অস্বীকার করতে পারে। রাজনীতি, খেলাধুলো কিংবা অন্য সমস্ত ধরনের মতো বিনোদন সাংবাদিকতার জগতেও ইয়েলো জার্নালিজম খুব ভালোভাবে লক্ষ করা যেতে পারে। বলাই বাহুল্য, পছন্দের বিচারে পাঠকও এই ধরনের খবরই এগিয়ে রাখেন, যেখানে অভিনেতা-অভিনেত্রীর ব্যক্তিগত জীবন তুলে ধরা হচ্ছে। তাতে সেই অভিনেতার অনুমতি থাকুক বা না থাকুক। সাংবাদিক জানতে পেরেছেন মানে সে খবর প্রকাশ পাবেই। ভারতীয় বিনোদন সংবাদের জগতে এই ‘হলুদ সাংবাদিক’ প্রবেশ করেছিল দেবযানী চৌবলের হাত ধরেই। এক কথায় বলতে গেলে, তিনিই নামকরা সব তারকাদের ব্যক্তিগত জীবন সর্বসমক্ষে তুলে আনতে শুরু করেন।
:আরও শুনুন:
প্রেম নিয়ে তখন জোর চর্চা, অমিতাভ শুটিংয়ে, রেখাকে বাড়িতে নেমন্তন্ন জয়ার, তারপর?
এমনিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে বিনোদন জগতের ভালোই যোগাযোগ থাকে। অনেক সময় তারকাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কও তৈরি হয়ে যায়। সেই সম্পর্কের খাতিরেই অভিনেতাদের হাঁড়ির খবর বের করে আনতেন দেবযানী। তারপর আপন মনের মাধুরি মিশিয়ে পরিবেশন করতে ‘মশলাদার’ খবর। ছোটবেলা থেকে অভিনেত্রী হতে চাওয়া দেবযানী কর্মসূত্রে অভিনয় জগতের সঙ্গেই ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে যান। তবে অভিনেত্রী হিসেবে নয়, সাংবাদিক হিসেবে। দেশের নামকরা ম্যাগাজিনে লিখতেন দেবযানী। লেখা বলতে তারকাদের জীবনের কেচ্ছা ফাঁস। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে অনেকেই বিনোদন সাংবাদিকতার সঙ্গে এই ইয়েলো জার্নালিজমকে গুলিয়ে ফেলেন। বলাই বাহুল্য, এর নেপথ্যে দেবযানীর অবদান কিছুমাত্র কম নয়। শুরুর দিকে দিলীপ কুমারের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়তে চেয়েছিলেন দেবযানী। অনেকেই মনে করতেন, দেবযানী দিলীপ কুমারের সঙ্গে সম্পর্কে জড়াতে চাইতেন। কিন্তু দিলীপ তখন যথেষ্ট নামকরা একজন তারকা। স্বাভাবিক ভাবেই দেবযানীকে পাত্তা দেননি। বদলা হিসেবে দিলীপ কুমারের বিবাহ বহির্ভুত সম্পর্কের খবর প্রকাশ্যে এনেছিলেন দেবযানী। যা কিংবদন্তি দিলীপকেও বাধ্য করে দেবযানীর দ্বারস্থ হতে। এভাবেই আরও কত অভিনেতার ব্যক্তিগত জীবন সবার সামনে এনেছেন তার ইয়ত্তা নেই। তালিকায় সবথেকে উজ্জ্বল নামটি ধর্মেন্দ্রর। প্রথমদিকে ভালো সম্পর্ক থাকলেও, ব্যক্তিগত কেচ্ছা ফাঁস করার ব্যাপারটা ধর্মেন্দ্রও ভালোভাবে নেননি। সহ্যের সীমা ছাড়ায় যখন ধর্মেন্দ্র-হেমার সম্পর্কের কথা সামনে আনেন দেবযানী। বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও কীভাবে সম্পর্কে জড়ালেন ধর্মেন্দ্র-হেমা সেই প্রশ্ন তুলেছিলেন দেবযানী। স্বাভাবিক ভাবেই গোটা বিষয়টায় রীতিমতো চটে যান ধর্মেন্দ্র। শোনা যায়, কোনও এক অনুষ্ঠানে মত্ত অবস্থায় দেবযানীকে মারতে উদ্যত হন ধর্মেন্দ্র। সে নিয়েও কম চর্চা হয়নি।
:আরও শুনুন:
ডিপফেক থেকে বাঁচবেন কীভাবে? তরুণীদের পরামর্শ দিচ্ছেন খোদ সানি লিওন
তবে সব ক্ষেত্রেই যে নেতিবাচক আলোচনা করেছেন দেবযানী, তা নয়। কিছু কিছু অভিনেতা ‘তারকা’ হয়েছিলেন তাঁর কলমের জোরেই। রাজেশ খান্নাকেও দেবযানীই প্রথমবার তাঁকে ‘সুপারস্টার’ তকমা দেন। দুজনের বন্ধুত্বের সমীকরণও ছিল বেশ পোক্ত। ডিম্পল কপাডিয়াকে বিয়ের খবর রাজেশ প্রথম দেবযানীকেই দিয়েছিলেন। পরে অবশ্য রাজেশের সঙ্গেও তাঁর সম্পর্ক ভাঙে। অভিনেতার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের কথাও অকপটে স্বীকার করতেন দেবযানী। এখানেই শেষ নয়। তাঁর কলমের তীর বিদ্ধ করেছিল রাজ কাপুরকেও। বলিউডের অন্যতম কিংবদন্তী রাজ নাকি কোনও এক পার্টিতে দেবযানীর সঙ্গে অভব্য আচরণ করেন, এমনই অভিযোগ সামনে এসেছিল। সেই নিয়ে দীর্ঘদিন চর্চা চলেছিল সিনেপাড়ায়। শেষজীবনে অসুস্থতাকে সঙ্গী করেই কাটিয়েছেন দেবযানী। অর্থকষ্টেও ভুগেছেন বলে শোনা যায়। এইসময় পুরনো বিবাদ ভুলে তাঁকে সাহায্য করতে আসেন ধর্মেন্দ্রও। তাই বলে তিনি নিজের সমালোচনা থামাননি। শেষের দিকে লিখতে পারতেন না। কিন্তু নানা জায়গা থেকে খবর জোগাড় করতেন। তাঁর সেই তথ্য অন্য কেউ লিখত এবং একইভাবে ছাপা অক্ষরে বেরোত। সেই কারণে এখনও অনেকেই দেবযানী চৌবলকে একবাক্যে ইয়েলো জার্নালিজমের ‘দেবী’ বলে স্বীকার করে নেন।