বৃন্দাবনে গুরুর আশ্রমে যাওয়ার পথেই খবরটা পেয়েছিলেন বলিউডের মহানায়ক শাম্মি কাপুর। তাঁর কণ্ঠস্বর হারিয়ে যাওয়ার খবর। কী হয়েছিল তাঁর? আসুন, শুনে নেওয়া যাক ষাটের দশকের বলি দুনিয়ার এক আশ্চর্য যুগলবন্দির গল্প।
বৃন্দাবনে গুরুদেবের আশ্রমে যাচ্ছেন শাম্মি কাপুর। এক ব্যক্তি সাইকেল চালিয়ে হন্তদন্ত হয়ে এসে পথ আটকে দাঁড়ালেন। বললেন শাম্মি সাহাব আপকি আওয়াজ চলি গয়ি। নিজের গলাতেই সেই ভদ্রলোককে উত্তর দিলেন শাম্মি কাপুর। কিন্তু সত্যিই ১৯৮০ সালের সেই ৩১শে জুলাই কণ্ঠস্বর হারিয়ে গেল তাঁর।
আরও শুনুন: বক্সঅফিসে সাফল্য না পেলে ভাল অজুহাত, বলিউডের ‘বয়কট’ ট্রেন্ড নিয়ে বক্তব্য শাহরুখের
একটা সময় পর্যন্ত সিনেমাতে নায়ক নায়িকারা নিজেরাই সব গান গাইতেন। অভিনয় দক্ষতার সঙ্গে তাদের সকলেরই যে সঙ্গীতেও যথাযথ দক্ষতা ছিল এমনটা নয়। তাই সিনেমার প্রয়োজনে, একটা সময় থেকে প্লেব্যাক সিঙ্গারদের চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তা বাড়তে থাকে। আর এভাবেই আস্তে আস্তে একেকজন হিরো বা হিরোইনের কণ্ঠ হয়ে ওঠেন একেকজন সুদক্ষ গায়ক, গায়িকা। উত্তমের কণ্ঠ হয়ে ওঠেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, আর শাম্মি কাপুরের জন্য রফি হয়ে ওঠেন তাঁর কণ্ঠ।
তাঁর লিপে সিনেমার কোনও গান রেকর্ড হওয়ার সময় সাধারণত রেকর্ডিং স্টুডিওতে থাকতে পছন্দ করতেন শাম্মি। কী কী ‘হরকৎ’ তিনি সেই গানের দৃশ্যে করতে পারেন বা করবেন বলে ভাবছেন, সেসব আগে থেকেই গায়ককে বলে সেই অনুয়ায়ী গানে হরকৎ যোগ করতে বলতেন। আর রফি সাহাবও সেসব শুনে হুবহু তেমনভাবেই গান গাইতেন। কিন্তু একবার শাম্মি কাপুর ছিলেন দেশের বাইরে আর তাঁর অনুপস্থিতিতেই রেকর্ড হয়ে যায়, ১৯৬২ সালে রিলিজ চায়না টাউনের সিনেমার সেই বিখ্যাত গান, ‘বার বার দেখো’। যথারীতি শাম্মি কাপুর ফিরে এসে খুব রেগে যান। কিন্তু গান শুনে, আর থাকতে না পেরে সটান রফি সাহাবের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন, আমি ঠিক কেমনভাবে গানটা চাইছি আপনি জানলেন কী করে? রফি বলেন, – আমি ভাবলাম, এ গান তো শাম্মি কাপুরের লিপে হবে। তাহলে শাম্মি কাপুর কীভাবে গাইবেন? এখানে লাফাবেন, সেখানে ঝাঁপাবেন। কখনও মাথা নিচে পা ওপরে তুলে দিয়ে গাইবেন। আমাকেও তো গানটা সেইভাবেই গাইতে হবে! সেই ৬০-এর দশকের সিনেমায় সত্যিই যে কেউ এত কিছু ভেবে গান গাইবে তা সত্যিই ভাবতে পারেননি শাম্মি। গান তো জনপ্রিয় হয়ই, রফির গলায় লিপ মিলিয়ে দর্শকের তারিফও কুড়িয়ে নেন শাম্মি কাপুর। এভাবেই কবে যেন, জনগণের কাছে এবং শাম্মি কাপুরের কাছেও তাঁর অনস্ক্রিন গলা হয়ে যান রফি সাহাব।
আরও শুনুন: ‘নিজে ছবি ডিরেক্ট করছেন না কেন?’ সিনেমাপাড়ার তরুণকে পরিচালনায় আসার ডাক উত্তমকুমারের
কিন্তু সেই মানুষটাই যখন মারা যান, তখন শহরে ছিলেন না শাম্মি। প্রতি বছরের মতো গুরুপূর্ণিমা উপলক্ষে সস্ত্রীক বৃন্দাবনে গুরুদেবের আশ্রমে গিয়েছিলেন। ভোর চারটে নাগাদ হোটেল থেকে আশ্রমে যাওয়ার পথে তাদের গাড়ি থামিয়ে সামনে এসে দাঁড়ান এক সাইকেল চালক। হাঁপাতে হাঁপাতে তিনি হিন্দিতে শাম্মি কাপুরকে বলেন– ‘শাম্মি সাহাব, আপকি আওয়াজ চলি গয়ি।’ লোকটির কথার মানে বুঝতে পারেন না শাম্মি। বলেন, আমার গলা তো ঠিক আছে। গতকালও আশ্রমে ভজন কীর্তনে গলা মিলিয়েছেন। আজও গুরুপূর্ণিমা উপলক্ষে সারাদিন ধরেই চলবে সেসব। লোকটি এবার খানিক ফুঁপিয়ে ওঠেন। বলেন- না শাম্মি সাহাব, আপনার কণ্ঠস্বর চলে গেছে। রফি সাহাব মারা গেছেন, আর ওঁর সাথে আপনার গলাও চলে গেছে। এ খবর শুনে কেঁদে ফেলেছিলেন সেই সময়ের বলিউডের সুপারস্টার, শাম্মি কাপুর। বন্ধু-সহকর্মীর শেষ বেলায় তাঁর পাশে না থাকতে পারার হতাশা তো ছিলই। কিন্তু রফির চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজের সত্তারও এক অংশ বুঝি সেদিন হারিয়ে ফেলেছিলেন শাম্মি কাপুর।