সচিবজি থেকে জিতু ভাইয়া! ওটিটি দুনিয়ার দুই চরিত্রই এই মুহূর্তে চর্চায়। দুই চরিত্রের মধ্যেও কোনও যোগ নেই। সিরিজ দুটিও একেবারেই ভিন্ন স্বাদের। তবু তৃতীয় সিজনে পৌঁছে দুই সিরিজকেই দর্শকদের অনেকটা কাছে পৌঁছে দিয়েছেন অভিনেতা জিতেন্দ্র কুমার। জানেন তার পরিচয়? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
একদিকে ফুলেরার মান-মর্যাদা রক্ষা করতে লড়াই করতে শুরু করেছেন সচিবজি। অন্যদিকে পড়াশোনার বাইরে গিয়ে উদয়, বৈভব, ভর্তিকাদের জীবনের পাঠ শেখাচ্ছেন জিতু ভাইয়া। আলাদা সিরিজ আলাদা গল্প, এক স্রেফ অভিনেতা জিতেন্দ্র কুমার। যিনি এই মুহূর্তে দাপটের সঙ্গে ওটিটি দুনিয়ার ভালোবাসা কুড়োচ্ছেন।
আরও শুনুন: রাম-সীতার চরিত্রে একই অভিনেতা, ১০৭ বছর আগেও তৈরি হয়েছিল রামায়ণ নিয়ে সিনেমা
কিছু সিনেমার চরিত্র আজীবন মনে থেকে যায়। শাহরুখ, অমিতাভের ঝুলিতে এমন চরিত্র কম নেই। কখনও চরিত্রের নামেই পরিচিত হয়ে ওঠেন অভিনেতা। তাঁর কাছে অবশ্য এর থেকে বড় প্রাপ্তি আর কিছু হতে পারে না। ওটিটী দুনিয়াতেও এমন চরিত্র রয়েছে বেশ কিছু। ফ্যামেলি ম্যান থেকে শুরু করে মির্জাপুর! মুন্না ভাই কিংবা শ্রীকান্ত তিওয়ারি একেবারে ঘরের মানুষ হয়ে গিয়েছেন অনেকের। তবে একই অভিনেতার আলাদা দুই চরিত্র দর্শকের মনে দাগ কেটে গিয়েছে এমন উদাহরণ নেই বললেই চলে। ব্যতিক্রম পঞ্চায়েতের সচিবজি, আর কোটা ফ্যাক্টরির জিতু ভাইয়া। দুই চরিত্রেই অভিনয় করেছেন জিতেন্দ্র কুমার। একেবারে সাধারণ ছাপোষা মধ্যবিত্তের জীবন তুলে ধরে দুই চরিত্র। তবে দুজনেরই বেশ সম্মান রয়েছে। জিতু ভাইয়া সকলের প্রিয় শিক্ষক। যিনি দায়িত্ব নিয়ে একজন পড়ুয়ার জীবন বদলে দিতে পারেন। কোটার মতো জায়গায় তাঁর ফ্যানের অভাব নেই। তাঁর কাছে একবার ক্লাস করতে সারারাত জেগে অঙ্ক করতেও আপত্তি নেই অনেকের। ঠিক যেমনটা, কোটা ফ্যাক্টরির উদয়, বৈভব কিংবা মিনালকে করতে দেখা যায়। জিতু ভাইয়া বলতে তাঁরা অজ্ঞান। এদিকে স্রেফ পড়াশোনা নয়, জীবনের পাঠও হামেশাই দিয়ে থাকেন জিতু ভাইয়া। প্রেম-বিচ্ছেদ এইসব কিছু কীভাবে সামলাতে হবে, তা ফিজিক্সের মতো সহজ করে বুঝিয়ে দেন তিনিই। এদিকে সচিবজিকে ভালোবাসেন না এমন মানুষ ফুলেরা গ্রামে নেই। দু-একজন খল চরিত্র প্রকাশ্যে তাঁর বিরোধিতা করলেও, বাকিরা সবাই সচিবজির ফ্যান। তাঁর দৌলতে গ্রামের একের পর এক উন্নতি হয়েছে। পঞ্চায়েতের তৃতীয় সিজনে সচিবজিকেও গ্রামের সদস্য হিসেবেই আবিষ্কার করেছেন দর্শকরা। দুই চরিত্রই দর্শকের মনে দাগ কেটেছে জিতেন্দ্র কুমারের অভিনয়ের দক্ষতায়। তবে প্রথম থেকেই যে অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন জিতেন্দ্র তা একেবারেই নয়। বরং মেধাবী ছাত্র হিসেবে আইআইটি থেকে ইঞ্জিনিয়রিং পড়েছেন।
আরও শুনুন: ক্রিকেটের পুরুষশাসিত মাঠেই কমেন্ট্রি নারীর, প্রথম পথ দেখালেন কে?
কিন্তু মন যদি সায় না দেয় তাহলে কোনও কাজ করা সম্ভব নয়। জিতেন্দ্রও কলেজে পড়াকালীন বুঝেছিলেন, অভিনয় জগতের প্রতিই তাঁর আসল ভালোবাসা। এমনিতে IIT-র মতো প্রতিষ্ঠানে সাংস্কৃতিক চর্চা ভালমতো হয়েই থাকে। সেই হিসাবে কলেজে পড়াকালীন নাটকে অভিনয় শুরু করেন জিতেন্দ্র। পাশাপাশি সোশাল মিডিয়ায় বিভিন্ন ভিডিওয় দেখা যেত তাঁকে। এইসময় একটি জনপ্রিয় ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেও যুক্ত হন জিতেন্দ্র। তাঁর বেশ কিছু ভিডিও ভাইরাল হয়। ভেবেই নিয়েছিলেন পড়া শেষ করে অভিনয় করবেন পুরোদস্তুর। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে অভিনয়ে আসা মোটেও সহজ ছিল না। মোটা টাকা মাইনের চাকরিতে যোগ না দিয়েই জিতেন্দ্র ঠিক করেন মুম্বই গিয়ে অভিনয় শুরু করবেন সক্রিয় ভাবে। কিন্তু ভাবলেই তো হল না। কয়েক মাস কাটানোর পর জিতেন্দ্র ভেবে নেন এখানে অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া মোটেও সহজ নয়। ফিরে গিয়ে আবার চাকরিতে যোগ দেন। কিন্তু না, সেই চাকরি তিনি করতে পারেননি। ২০১৪-১৫ সাল থেকে আবারও শুরু করেন অভিনয়। এবার ধীরে ধীরে পরিচয় বাড়তে থাকে। মূলত সোশাল দুনিয়া এবং ইউটিউবে-এই তা সীমাবদ্ধ ছিল। সেখান থেকেই কোটা ফ্যাক্টরিতে অভিনয়ের সুযোগ পান। প্রায় একইসঙ্গে পঞ্চায়েতও আসে। একে একে তিনটি সিজন পার করেছে দুটি সিরিজই। আর প্রতিটি এপিসোডে দর্শকদের মন জিতছেন জিতেন্দ্র কুমার।