ভারতবাসীর হাতে যদি কোনও সুরের পরিচয়পত্র থাকত, তবে অবশ্যই তা হত, এক এবং অদ্বিতীয় কিশোর কুমারের কণ্ঠ। সেই কিশোরকেই রবি ঠাকুরের গান গাওয়ার জন্য ডেকে পাঠালেন স্বয়ং সত্যজিৎ রায়। তুমুল ব্যস্ততা সত্ত্বেও গান তো তিনি গাইলেনই, নিলেন না পারিশ্রমিকও। জন্মদিনের আলোয় শুনে নেওয়া যাক দুই ব্যক্তিত্বের সম্পর্কের এক আশ্চর্য গল্প।
কিশোর তখন বেশ ছোট। অল্পস্বল্প গান গাইতে পারেন। তাঁর দাদামণি, অর্থাৎ অশোক কুমারের তখন ফিল্ম জগতে বেশ নামডাক। সেকালে নায়ককেই গাইতে হত গান। দাদামণির বেশ কয়েকটা গান ছিল কিশোরের মুখস্থ। সেই সঙ্গে ছোট্ট কিশোর গাইত সায়গল সাহেবের গান। কুন্দনলাল সায়গলই কিশোরের গুরু। সেই ছোটবেলাতেই কেউ যদি কিশোরকে গান শোনাতে বলতেন, পারিশ্রমিক চাইত ছোট্ট ছেলেটি। এমনকী তাঁর বাবা বললেও। দাদামণির গানের আলাদা রেট, সায়গল সাহেবের গানের জন্য আলাদা। এহেন কিশোর কুমার যখন খ্যাতির শীর্ষে, তখন এল সত্যজিতের ছবিতে গান গাওয়ার ডাক। আর তার জন্য একটি পয়সাও নেননি তিনি।
শুনে নিই সেই গল্প।
আরও শুনুন: Dilip Kumar : আদালতে দাঁড়িয়ে মধুবালাকে জানিয়েছিলেন, ভালবাসি…
কলকাতায় আসা তখন একেবারেই সম্ভব ছিল না কিশোর কুমারের পক্ষে। সেটা ১৯৬৩ সালের নভেম্বর মাস, সারা মাসে একটা দিনও ফাঁকা নেই কিশোরের। তার চেয়েও বড় কথা, মাত্র এক সপ্তাহ আগেই হরিদ্বার থেকে ফিরেছেন তাঁর মা। বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তিনি। এই অবস্থায় মাকে একা ফেলে কলকাতা যেতে চাইছেন না কিশোর কুমার। কিন্তু উলটো দিকের অনুরোধটাও যে বেশ জোরদার। চিঠি পাঠিয়েছেন স্বয়ং সত্যজিৎ। নতুন সিনেমার জন্য কিশোরকে তাঁর চাই-ই চাই। অভিনয় নয়, গানের রেকর্ডিং। তাও কিনা রবীন্দ্রসংগীত। চিরকালের ব্যতিক্রমী সত্যজিৎ এবারেও তাঁর সিদ্ধান্তে নিজস্ব স্বকীয়তার পরিচয় দিলেন। কোনও রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী নন, বাংলা ও হিন্দি গানের জনপ্রিয় শিল্পী কিশোর কুমারকে দিয়েই তিনি গাওয়াতে চান একটি গান – ‘আমি চিনি গো চিনি তোমারে’। এ ডাক এড়ানো যাবে না কিছুতেই। কেননা ডাক এসেছে স্বয়ং সত্যজিতের কাছ থেকে। আর তা ছাড়া তিনি তো কিশোরের প্রিয় ‘মানিকমামা’।
আরও শুনুন: প্রেমে পড়ছেন Shah Rukh Khan-Kajol, হইচই বলিপাড়ায়
হ্যাঁ, সত্যজিৎ রায়কে এই নামেই ডাকতেন কিশোর কুমার। আসলে সত্যজিতের সঙ্গে একটা পারিবারিক যোগসূত্রও ছিল তাঁর। সত্যজিতের বড়মামার এক মেয়ে থাকতেন মুম্বাইতে। ফিল্ম জগতে আনাগোনা ছিল তাঁর। তাঁরই মেয়ে রুমাকে বিয়ে করেন কিশোর কুমার। আমরা যাঁকে চিনি রুমা গুহঠাকুরতা নামে। মজার কথা হল, রুমার ছোটমাসি বিজয়াও তাঁদের সঙ্গে বহুদিন মুম্বাইতে থাকতেন। রুমা তাঁর মাসির ভীষণ ন্যাওটা ছিলেন। আর এই মাসির সঙ্গে দেখা করতে মাঝে মাঝে মুম্বাই চলে আসতেন তাঁর প্রেমিক এবং হবু স্বামী, সত্যজিৎ রায়। সেই সূত্রেই তিনি কিশোরের মানিকমামা। তিনিই যখন কিশোরকে ডাকছেন তাঁর সিনেমায় গান গাওয়ার জন্য, আনন্দে আপ্লুত তখনকার ব্যস্ততম প্লেব্যাক সিঙ্গার।
বাকি গল্প শুনে নিন প্লে-বাটনে ক্লিক করে।