সাদা-কালোর দ্বন্দ্বে ছন্দপতন এবার কপিল শর্মার শোয়ে। কালো চামড়ার মানুষদের লক্ষ করে সাদা চামড়ার মানুষদের সেই পুরনো কটাক্ষই যেন আবার সামনে এল সঞ্চালক কপিলের কথায়। কিন্তু কী এমন হল যাতে সমালোচনার শিকার হতে হল কপিলকে? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
‘কালো যদি মন্দ তবে কেশ পাকিলে কান্দ ক্যান?’, সহজ এই কথাটি উপন্যাসে লিখেছিলেন তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়। কত সহজেই সমাজের কালো লোকের প্রতি হওয়া অবহেলার দিকটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় বাক্যখানা। আর সেই চিরকেলে তর্কই যেন আরেকবার উঠে এলো কপিল শর্মার শোয়ে। সম্প্রতি দেখা গেল গায়ের চামড়া নিয়ে বর্ণবিরোধী বেফাঁস মন্তব্য করে সমালোচনার মুখে পড়েছেন কপিল।
প্রাচীন কাল থেকে জমে আছে কালোর প্রতি সাদার অফুরান বিদ্বেষ। দাবার ঘুঁটি থেকে দেশের রাজনীতি। সর্বত্রই রয়েছে সেই সংঘাত। আর সেই সংঘাতের মধ্যেই রয়েছে একটি অলিখিত নিয়ম। কালোদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা যেন সাদাদের অনায়াস অভ্যাসের মধ্যেই পড়ে। আধুনিক জীবনধারার সবটুকু গ্রহণ করতে চাইলেও বোধহয় সবটুকু পূর্ণ হয়ে ওঠেনি। আর সেখান থেকেই চোখে পড়ে এই ধরনের বিষয়গুলি।
রঙ্গ-রসিকতার ধারাবাহিক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে কপিল শর্মার অনুষ্ঠানটি। তবে রঙ্গ রসিকতার মোড়কেই বহু গভীর বিষয় আমাদের সামনে উঠে এসেছে এই অনুষ্ঠানের হাত ধরে। তবে এবার যেন একটু বেসুরো হয়েছে ছন্দ। বিষয়টা আগাগোড়া শুনে নেওয়া যাক।
আরও শুনুন: কপিলের শোয়ে অপমানিত রবীন্দ্রনাথ! কম যায় না বাঙালিরাও, কীভাবে জবাব দিতেন স্বয়ং কবি?
ফিল্মনির্মাতা অ্যাটলি তাঁর আসন্ন সিনেমা, ‘বেবি জন’-এর প্রচারের জন্য এসে হাজির হয়েছিলেন ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান কপিল শো’-এর সাম্প্রতিক পর্বে। আর সেখানেই অ্যাটলির চেহারা নিয়ে মন্তব্য কপিলের। কপিল হঠাৎই জিজ্ঞেস করে বসেন, অ্যাটলি কারও সঙ্গে প্রথমবার দেখা করতে গেলে সেই ব্যক্তিটি অ্যাটলিকে দেখতে পান কি-না! শুনতে খটকা লাগলেও এটাই সত্যি। কালো মানুষ তাই তিনি দৃশ্যমান নন, এমনই ইঙ্গিত নাকি করতে চেয়েছিলেন কপিল।
তবে অ্যাটলি কিন্তু মোটেও অপ্রস্তুত হয়ে পড়েননি এই প্রশ্নে। বরং বেশ ব্যক্তিত্বের সঙ্গেই সমুচিত জবাব দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, তিনি নাকি কপিলের পুরো কথার সুরটাই ধরতে পেরেছেন। এবং এটাও বলেছেন বাইরের চেহারা দেখে কাউকে যাচাই করা হলে তিনি কাজের সুযোগ পেতেন না। আর এই সমস্ত কিছুর জন্য তিনি মুরুগাদোস স্যারের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞ।
বুঝতে অসুবিধা হয় না, উত্তরের মধ্যে তিনি নিপুণভাবে কপিলের কথার খোঁচাকে খানখান করে দিয়েছেন। এমন বিতর্কিত মন্তব্যকে কেন্দ্র সমালোচনার ঝড় উঠেছে নেটিজেনদের মধ্যে। কেউ তীব্র নিন্দা করেছেন, কেউ আবার এর মধ্যে খুঁজে পেয়েছেন অসংবেদনশীল রসিকতা। তবে সবকিছুর পরেও, সাফল্যের আলোর কাছে বাদবাকি সবটুকু ফিকে। এই বিষয়টিই যেন আরও একবার স্পষ্ট হয়ে গেল সকলের কাছে।